সম্প্রতি বাংলাদেশ টেলিভিশন বা বিটিভির একটি রম্য নাটকের ডায়ালগ “মানুষের চিন্তায় ঘুম আসে না, দেশের মানুষ কেন তা বোঝেনা।” সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ সাড়া ফেলেছে। দর্শকদের মধ্যে ডায়ালগটি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে।
যে বিটিভি জুলাই আগস্ট হত্যাকান্ড চলার সময় বাতাবিলেবুর বাম্পার ফলন প্রচার করে দর্শকদের হাস্যরসে পরিণত হয়েছিল। সে বিটিভি কিনা সাবেক ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাকে নিয়ে রম্য নাটক তৈরী করলো। তাও আবার ছন্দে ছন্দে সাবেক স্বৈরাচারী প্রধানমন্ত্রীর মনের কথা ফুটে উঠেছে
দুই মিনিট ঊনিশ সেকেন্ড এর নাটকের সংলাপটি একাধারে দর্শকদের আবেগে নাড়া দিয়েছে এবং সমসাময়িক পরিস্থিতির প্রতিচ্ছবি হিসেবে দেখা দিয়েছে।
নাট্যাংশের মূল ভূমিকায় অভিনয় করেছেন সাদিয়া তানজিন। তিনি এই সংলাপটি বলে প্রচুর দর্শক প্রশংসা পাচ্ছেন। তিনি বলেন, ”চরিত্রটি ফুটিয়ে তোলার সময় নিজের কিছু অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়েছি। দর্শকদের কাছ থেকে যে পরিমাণ সাড়া পাচ্ছি, তাতে আমি অভিভূত।”
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, টুইটার এবং ইনস্টাগ্রামে ডায়ালগটি নিয়ে অসংখ্য পোস্ট এবং মিম দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম এটি নিয়ে তাদের নিজস্ব অনুভূতি প্রকাশ করছেন।
নাটকের পরিচালক বলেন, “আমরা সমাজের বাস্তবতাকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। ডায়ালগটি একটি সাধারণ মানুষের হৃদয়ের কথাই বলে।”
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, মানুষের চিন্তার প্রতিফলন তুলে ধরার এ ধরনের সংলাপ সমাজে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
এমন হৃদয়স্পর্শী সংলাপের মাধ্যমে নাটকটি দর্শকদের মনে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলবে বলেই মনে করছেন অনেকে।
রম্য নাটকটিতে ঝোঝানো হয় শেখ হাসিনার কাছে তার পিয়ন ফোন করেছে। তখন বলছে, “মানুষের চিন্তায় ঘুম আসে না। দেশের মানুষ কেন তা বোঝে না?”
এছাড়া শেষাংশে সাবেক সাংবাদিক, তথ্যমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী ও সাধারণ সমর্থকদেরও রম্যভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
বিটিভির ফেসবুক পেইজেও ভিডিওটি দেখা যাচ্ছে: https://www.facebook.com/watch/?v=4011588752409422
শেখ হাসিনাতেই আস্থা; গোপনে ক্যাম্পেইন চালাচ্ছে ছাত্রলীগ এটার অংশ হিসেবে এ রম্য নাটকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
রম্য নাটকের পুরা সংলাপ আপনাদের জন্য এখানে দেয়া হলো:
শেখ হাসিনা: : হ্যালো হ্যালো কে?
শেখ হাসিনার পিয়ন: স্যার আমি? আপনার পিয়ন।
শেখ হাসিনা: ও! মতি! তুমি কোথায়?
শেখ হাসিনার পিয়ন: আমি নিউ ইয়র্কে।
শেখ হাসিনা: তুমি পালাই গেছো?
শেখ হাসিনার পিয়ন: আমি একা না। স্যার আরও অনেকে আছে।
শেখ হাসিনা: বেয়াদব, যাও! এক্ষণ দেশে যাও। দেশে গিয়ে মানুষকে আমার কথা বোঝাও৷
শেখ হাসিনার পিয়ন: স্যার আমি কী ভাবে বুঝিয়ে বলব? আপনি বুঝিয়ে বলেন আমি কয়েকজন রে ভিডিও কলে আনি স্যার।
শেখ হাসিনা:
“মানুষের চিন্তায় ঘুম আসে না।
দেশের মানুষ কেন তা বোঝে না?”
দেশ চালানো কি এত সোজা কথা?
তাই তো লুটিছি ব্যাংক, মিটেছে ব্যথা।
রিক্সায় চড়ার দিন কবে গেছে চলে,
গাড়িতেই মানায় – বড় কিছু হলে।
সংসদে যেয়ে আমি শুনেছি যে গান,
ভেবো না সেটুকু ছিল শুধুই যে ভান।
লক্ষ্য চাটুকার দিয়েছে সেলাম।
সেই সুখেতে আমি বেশ ছিলাম।
দেশটা আমার ছিলো, তোমাদের নয়।
বড় মজা ছিল দেখে তোমাদের ভয়।
শিশু থেকে বুড়ো, তরুণ তরুণী,
জেলে পাঠিয়েছি যদি কথা শোনেনি।
“মানুষের চিন্তায় ঘুম আসে না,
দেশের মানুষ কেন তা বোঝে না।”
শত শত মানুষকে করেছি যে গুম,
তার পরেও কেন আসে না যে ঘুম?
ম্যাডাম ডেকেছো যাকে, করিনি পছন্দ।
আমাকে স্যার ডাকো – তাতেই আনন্দ।
“মানুষের চিন্তায় ঘুম আসে না,
দেশের মানুষ কেন তা বোঝে না”।
দিনে রাতে ফোন করি দিন কাটে না।
দেশের মানুষ তবু কেন জাগেনা?
চাটুকার সাংবাদিক:
জেগে আছি জেগে আছি। বলি না কথা।
তুমি আজ নেই তাই মনে বড়ো ব্যথা।
তথ্যমন্ত্রী:
আমিও পালিয়ে আছি দেখে সব কিছু
হে মহান যদি ফেরো নেব তবে পিছু।
আনিসুল হক:
হায় তুমি একা গেলে আমাকে ফেলে
আমি আর কী করি নিয়ে গেল জেলে৷
আওয়ামী লীগ সমর্থক:
বারবার মনে হয় এই বুঝি এলে।
আবার ভাজবো মাছ মাছের তেলে।
“মানুষের চিন্তায় ঘুম আসে না। দেশের মানুষ কেন তা বোঝে না।”