যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্কনীতিতে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক নির্ধারণ করা হয়েছে, যা পূর্ব ঘোষিত ৩৫ শতাংশের তুলনায় কম। হোয়াইট হাউসের এক বিবৃতিতে এই সিদ্ধান্ত জানানো হয়, যা বাংলাদেশের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য কূটনৈতিক অর্জন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন এবং নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের আলোচনার পর এই হার নির্ধারণ হয়। তাদের কার্যকর ভূমিকার প্রশংসা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস একে “দেশের জন্য বড় সুখবর” বলে মন্তব্য করেছেন।
বাংলাদেশ প্রথমে ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্কের মুখে পড়ে, যা ২ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের ইউএসটিআর ঘোষণার পর স্থগিত করা হয়েছিল। তবে ৮ জুলাই আবার কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হলে, বাংলাদেশ সরকার কৌশলগতভাবে যুক্তরাষ্ট্রকে একটি ব্যাখ্যামূলক অবস্থানপত্র পাঠায়। এতে তুলে ধরা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি মাত্র ৬ বিলিয়ন ডলার, যেখানে ভিয়েতনামের মতো প্রতিযোগী দেশের ঘাটতি ১২৩ বিলিয়ন ডলার।
এই যুক্তিগুলো আমলে নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসন শেষ পর্যন্ত শুল্কহার ২০ শতাংশে নামিয়ে আনে। বাংলাদেশ ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে পাকিস্তান ১৯%, শ্রীলঙ্কা ২০%, ভারত ২৫% শুল্ক পায়। চীন পেয়েছে সর্বোচ্চ ৫৫%। ফলে, বাংলাদেশের শুল্কহার এখন প্রতিযোগীদের সমান, যা রপ্তানি স্থিতিশীল রাখতে সহায়ক হবে বলে মনে করেন উদ্যোক্তারা।
বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু বলেন, এই সিদ্ধান্ত রপ্তানি প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে সহায়তা করবে, তবে বিদ্যুৎ, গ্যাস, ব্যাংক সুদের হারসহ অভ্যন্তরীণ কাঠামোগত সমস্যাগুলো সমাধান জরুরি।
নোমান গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. নুরুল ইসলাম জানান, মূল চ্যালেঞ্জ হলো উৎপাদন সক্ষমতা কাজে লাগানো, বিশেষত ঋণের উচ্চ সুদহার ও জ্বালানি সংকটের মধ্যে।
সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, যুক্তরাষ্ট্রকে কৃষিপণ্য আমদানির প্রতিশ্রুতি দিয়েও কৌশলে জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করা হয়েছে। নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান বলেন, ৩৫% শুল্ক এড়ানো সম্ভব হয়েছে এবং এতে লাখ লাখ মানুষের জীবিকা নিরাপদ হলো।
নতুন এই শুল্কহার ৭ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে। তবে যেসব পণ্য ৫ অক্টোবরের আগে যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছাবে, সেগুলোর ক্ষেত্রে শুল্ক প্রযোজ্য হবে না, যদি সেগুলো ৭ আগস্টের আগে জাহাজে তোলা হয়।
এই শুল্কবৈষম্য দূর হওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ ও ব্যবসায়ী মহল।