২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট ঘোষণা: মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির দিকে জোর - দৈনিক সাবাস বাংলাদেশ
নোটিশ:
শিরোনামঃ
নবীজিকে কটূক্তির অভিযোগে বাবা-ছেলে আটক, উত্তপ্ত লালমনিরহাট সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পের পর্যালোচনায় ১৪ সদস্যের কমিটি গঠন নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে যুদ্ধের বাজি খেলায় ট্রাম্প: বিজয় না বিপর্যয়? অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক সংস্কারসহ ১২৫ দফা রাবি ছাত্রশিবিরের ইরানে হামলায় যুক্তরাষ্ট্রে তীব্র প্রতিক্রিয়ার মুখে ট্রাম্প ভারতে নারীদের একাকী ভ্রমণে সতর্কতা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র আকাশপথে আঘাত, পাতালে প্রতিরোধ: ইরান-যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল সংঘাতের এক বিপজ্জনক সন্ধিক্ষণ মার্কিন হামলার পরও তেজস্ক্রিয়তা বাড়েনি: জাতিসংঘ পরমাণু সংস্থা (IAEA) ইউএস নিউজ বেস্ট গ্লোবাল ইউনিভার্সিটি র‌্যাঙ্কিংয়ে রাবির বড় অগ্রগতি বিএনপির গ্রুপিং দ্বন্দ্বে অতিষ্ঠ কর্মীরা; মহাসচিবের হস্তক্ষেপ চেয়ে খোলা চিঠি

২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট ঘোষণা: মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির দিকে জোর

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ৩ জুন, ২০২৫
  • ৭০ বার দেখা হয়েছে
Budget 2025-26

নতুন অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার জাতীয় বাজেট ঘোষণা করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। আজ সোমবার বিকেল ৩টায় বাংলাদেশ টেলিভিশনে এ বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। দেশের ৫৪তম এই বাজেট এবং অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের এটি প্রথম বাজেট।

📌 সারসংক্ষেপ:

✅ বাজেটের আকার আগের বছরের তুলনায় ৭ হাজার কোটি টাকা কম।
✅ মূল্যস্ফীতি কমাতে নানা খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি।
✅ কালো টাকা বিনিয়োগে সুযোগ থাকলেও করহার বাড়ানো।
✅ সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর ভাতা বাড়ানো।
✅ নতুন মেগা প্রকল্প বন্ধ রেখে ঋণের বোঝা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা।

নতুন বাজেটে মূল লক্ষ্য হিসেবে ধরা হয়েছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি, বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নয়ন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতিশীল রাখা এবং ব্যবসা-বাণিজ্য সহজীকরণ। চলতি অর্থবছরের বাজেটের তুলনায় এবারের বাজেট ৭ হাজার কোটি টাকা কম। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট ছিল ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। তবে আয়-ব্যয়ের ভারসাম্য রক্ষায় এবারের বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অধীনে ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা এবং এনবিআর বহির্ভূত কর ও অন্যান্য আয়সহ মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা।

📊 বাজেটের আকার ও খাতভিত্তিক বরাদ্দ:

  • মোট বাজেট: ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা (জিডিপির ১২.৭ শতাংশ)

  • রাজস্ব আয় লক্ষ্যমাত্রা: ৫ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা

  • বাজেট ঘাটতি: ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা (জিডিপির ৩.৬ শতাংশ)

  • উন্নয়ন বাজেট (এডিপি): ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা

  • অনুন্নয়ন ব্যয়: ৫ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা

বাজেটে মোট ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা। এই ঘাটতি পূরণে দেশীয় ও বৈদেশিক উৎস থেকে ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এরমধ্যে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা এবং বৈদেশিক ঋণ ১ লাখ ১ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আগামী অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। তবে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ এবং এডিবির পূর্বাভাস অনুযায়ী, প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কঠিন হতে পারে।

বর্তমানে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের ওপরে অবস্থান করছে। আগামী অর্থবছর শেষে তা ৬ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এই লক্ষ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের সরবরাহ নিশ্চিত করা, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি চালু রাখা এবং সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা বাড়ানো হয়েছে। বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধী ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর ভাতা ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব রয়েছে।

এবারের বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) ধরা হয়েছে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের চেয়ে ৩৫ হাজার কোটি টাকা কম। সরকারি ব্যয় নিয়ন্ত্রণ এবং বাজেট ঘাটতি কমানোর ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। নতুন করে কোনো মেগা প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। কেবল মাতারবাড়ি উন্নয়ন প্রকল্প চলমান থাকবে, যা জাপানি ঋণে বাস্তবায়িত হচ্ছে।

প্রস্তাবিত বাজেটে সুদ পরিশোধে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা। এরমধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ ১ লাখ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক ঋণের সুদ ২২ হাজার কোটি টাকা। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি পূরণের জন্য বিশেষ বরাদ্দের পাশাপাশি কৃষি, সার, বিদ্যুৎ ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ভর্তুকি অব্যাহত থাকবে।

ব্যক্তি করদাতাদের বার্ষিক করমুক্ত আয়সীমা সাড়ে তিন লাখ টাকা অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। তবে ২০২৬-২৭ এবং ২০২৭-২৮ করবর্ষের জন্য স্বাভাবিক করদাতার ক্ষেত্রে এ সীমা বাড়িয়ে ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা করার কথা বলা হয়েছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের জন্য করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়িয়ে ৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা করা হয়েছে।

এবারও ফ্ল্যাট কেনা বা ভবন নির্মাণে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ থাকছে। তবে এলাকাভেদে করের হার কিছুটা বাড়ানো হয়েছে। নির্ধারিত হারে কর পরিশোধ করলেই টাকার উৎস নিয়ে কোনো প্রশ্ন করা হবে না।

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, এই বাজেট সময়োপযোগী, বাস্তবমুখী এবং ব্যবসা-বান্ধব হবে। মুদ্রাস্ফীতি, রাজস্ব আদায়, বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ রাখা হয়েছে। একইসঙ্গে সমাজের নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতা বাড়ানো হয়েছে।

চ্যালেঞ্জের মুখে থাকা দেশের অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করতে বাজেটের প্রতিটি অংশে বাস্তবায়নযোগ্য পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। মূলনীতি হচ্ছে অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমিয়ে, উৎপাদনমুখী খাতে বরাদ্দ বাড়ানো এবং বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি করা। সরকার আশাবাদী, এই বাজেট দেশের অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলা করে আগামী দিনে স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধির পথ তৈরি করবে।

শেয়ার করুন

Comments are closed.

এই ধরনের আরও নিউজ

© কপিরাইট ২০২৪-২০২৫ | সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: NagorikIT