গাজীপুরের টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে গত ১৬ দিন ধরে চলা ১৪৪ ধারা ও অন্যান্য নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) কমিশনার ড. নাজমুল করিম খান স্বাক্ষরিত এক গণবিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ঘোষণা
গণবিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ আইন-২০১৮ এর ৩০ ও ৩১ ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে ১৮ ডিসেম্বর দুপুর থেকে বিশ্ব ইজতেমা ময়দান এবং আশপাশের তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে জারি করা নিষেধাজ্ঞা ২ জানুয়ারি বিকেল ৫টা থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। জনস্বার্থে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এর আগে, ইজতেমা ময়দান দখলকে কেন্দ্র করে মাওলানা সাদ কান্ধলভী ও মাওলানা জুবায়েরপন্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এতে তিনজন নিহত এবং শতাধিক আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করে এবং চার প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়।
সরকারের নতুন নির্দেশনা
তাবলিগ জামাতের কার্যক্রম নিয়ে চলমান উত্তেজনা নিরসনে সরকার নতুন নির্দেশনা জারি করেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, মাওলানা জুবায়ের ও মাওলানা সাদ অনুসারীরা আগের মতো নিজ নিজ কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারবেন।
প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, উভয়পক্ষ নিজ নিজ নিয়ন্ত্রিত মসজিদ ও এলাকায় শান্তিপূর্ণভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করবে। এ নির্দেশনা উভয়পক্ষের মধ্যে শান্তি ও ধর্মীয় সহাবস্থান নিশ্চিত করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ইজতেমার সময়সূচি
আগামী ৩১ জানুয়ারি থেকে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব শুরু হবে, যেখানে অংশ নেবেন মাওলানা জুবায়েরের অনুসারীরা। দ্বিতীয় পর্ব ৭ থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে, যেখানে মাওলানা সাদের অনুসারীরা যোগ দেবেন। এ বছর ইজতেমায় রেকর্ডসংখ্যক বিদেশি মেহমানের উপস্থিতি প্রত্যাশিত।
সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য
জিএমপি কমিশনার ড. নাজমুল করিম খান বলেন, “নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর আমরা আশা করছি, ইজতেমার দুই পক্ষ শান্তিপূর্ণভাবে থাকবে। সাংবাদিকসহ সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।”
তাবলিগ জামাতের মিডিয়া সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ রায়হান বলেন, “সরকারের এই উদ্যোগ চলমান সংকট নিরসনে সহায়ক হবে।” সাদপন্থিদের মিডিয়া সমন্বয়ক মোহাম্মদ সায়েম বলেন, “নতুন নির্দেশনা দুই পক্ষের মধ্যে শান্তি বজায় রাখার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
উল্লেখযোগ্য পটভূমি
গত ১৭ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে বিশ্ব ইজতেমা মাঠে মাওলানা সাদ ও জুবায়েরপন্থীদের মধ্যে দখল নিয়ে সংঘর্ষ হয়। এই সংঘর্ষে তিনজন নিহত এবং শতাধিক মুসল্লি আহত হন। এর পর থেকে দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে তাবলিগ জামাতের কার্যক্রমে অস্থিরতা দেখা দেয়।
এই ঘটনাগুলো তাবলিগ জামাতের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলা বিভাজনকে সামনে নিয়ে আসে। সরকারের সাম্প্রতিক পদক্ষেপ এই বিভাজন দূর করতে এবং ইজতেমার সুষ্ঠু আয়োজন নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশা প্রকাশ করেছেন।
Leave a Reply