প্রশাসন ক্যাডারের বিলুপ্তি কথাটা শুনে অনেকেই চমকে উঠবেন। প্রশাসন ক্যাডারের বন্ধুরা তেলেবেগুনে জ্বলে উঠবেন। কিন্তু মাথা ঠান্ডা রেখে কথা শুনলে এবং সুস্থ মস্তিষ্কে চিন্তা করলে দেখা যাবে, এটি বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই করা উচিত ছিল। তাতে দেশের অনেক রকমের সমস্যা এমনিতেই মিটে যেত। দেশে বর্তমানে ২৬টি ক্যাডার রয়েছে। একমাত্র প্রশাসন ছাড়া বাকি সব ক্যাডারেরই সুনির্দিষ্ট কর্ম বা পেশা রয়েছে। এসব ক্যাডারের কর্মচারীরা নিয়োগের পর বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে বিশেষ দক্ষতা ও পারদর্শিতা অর্জন করেন। যেমন-টেকনিক্যাল ক্যাডারের ডাক্তার, প্রকৌশলী, কৃষিবিদ ইত্যাদি। সাধারণ ক্যাডার যেমন-পররাষ্ট্র, পুলিশ, কর ইত্যাদি। কিন্তু প্রশাসন ক্যাডারের কোনো সুনির্দিষ্ট কর্ম বা পেশা নেই। তবে একটা কাজ এ ক্যাডার খুব ভালো করেছে। সেই ব্রিটিশ শাসনের পর থেকে পাকিস্তান ও পরে বাংলাদেশে স্বৈরাচারের বৈধতাদানের জন্য সব প্রহসনের নির্বাচন সুচারুরূপে সম্পন্ন করা। বেশি পেছনে না গিয়েও ২০১৪ সালের ভোটারবিহীন নির্বাচন, ২০১৮ সালে রাতের নির্বাচন এবং সর্বশেষ ২০২৪ সালের ডামি নির্বাচনের উদাহরণ দেওয়া যায়।
প্রশাসন ক্যাডার যে সার্ভিসগুলো দিয়ে থাকে, সেগুলোর জন্য সুনির্দিষ্ট দপ্তর ও সংস্থা আছে, যারা ওই সার্ভিসগুলো সম্পন্ন করার জন্য যথেষ্ট। প্রশাসন ক্যাডারের এসব সার্ভিসের ওপর অপ্রয়োজনীয় খবরদারির ফলে মাঠ পর্যায়ে যেমন, তেমনি কেন্দ্রীয় পর্যায়েও আন্তঃসার্ভিস ও আন্তঃক্যাডার দ্বন্দ্ব বিরাজ করছে। অনেক কাজ আছে, যেগুলো প্রকৃতপক্ষে স্থানীয় সরকারের। সত্যিকার ও শক্তিশালী স্থানীয় সরকারব্যবস্থা থাকলে তাদেরই এসব কাজ করার কথা, যেমনটি উন্নত দেশগুলোতে হয়ে থাকে।
প্রশাসন ক্যাডার ভেঙে ‘ভূমি সার্ভিস’ করা খুবই প্রয়োজন। ভূমিসংক্রান্ত সব কাজ এখন প্রশাসন ক্যাডারই করে থাকে। সুতরাং, যারা ভূমিসংক্রান্ত দপ্তরগুলোয় এ মুহূর্তে নিয়োজিত আছে, তাদের নিয়ে এবং অন্য যারা এ সার্ভিসে আসতে চায়, তাদের নিয়ে বা এ সার্ভিস ছেড়ে চলে যেতে চায়, তাদের বাদ দিয়ে ‘ভূমি সার্ভিস’ শুরু করা উচিত। এর ফলে এ গুরুত্বপূর্ণ সার্ভিসে স্পেশালাইজেশন গড়ে উঠবে এবং দেশের মানুষের অনেক উপকার হবে। পাশাপাশি ‘ইকনোমিক’ ও ‘সচিবালয়’ সার্ভিস পুনরুজ্জীবিত করা উচিত।
লেখক: অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব
Leave a Reply