নোটিশ:
শিরোনামঃ
ইউরোপে নজিরবিহীন বিদ্যুৎ বিপর্যয় সরাসরি ট্রেন চালুর দাবিতে সড়ক অবরোধ: লালমনিরহাটে আন্দোলন তীব্র উপদেষ্টাদের এপিএস-পিও’র দুর্নীতির খোঁজে মাঠে নেমেছে দুদক ইরানে ভয়াবহ বিস্ফোরণ: নিহত ৪০, আহত ১২০০, নেপথ্যে ইসরায়েল জাবিতে হামলার ঘটনায় ২৫৯ ছাত্রলীগ কর্মী বহিষ্কার, ৯ শিক্ষক বরখাস্ত আন্ডারওয়ার্ল্ডের নতুন কৌশল: ‘মব’ সৃষ্টি করে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আধিপত্য আল-জাজিরাকে ড. মুহাম্মদ ইউনূস জানালেন, বাংলাদেশে ‘দ্বিতীয় ’স্বাধীনতার পর দেশ গঠনের দায়িত্বে আছেন আল-জাজিরায় ড. ইউনূস: শেখ হাসিনাকে থামাতে পারবেন না মোদি মহেশপুর সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে দুই বাংলাদেশি যুবক নিহত ফ্রান্সে মসজিদে হামলা, নামাজরত মুসল্লিকে ছুরিকাঘাতে হত্যা

পাঠ্যপুস্তকে হাশেম খানের নামে কার আঁকা ছবি চালানো হচ্ছে?

তাসরুজ্জামান বাবু
  • আপডেট সময় শনিবার, ৪ জানুয়ারী, ২০২৫
  • ১৬৩ বার দেখা হয়েছে
হাশেম খান
অচেনা শিল্পীর আঁকা

পাঠ্যপুস্তকে নাইন্টিজ কিড বা তাদের কয়েক বছর আগে থেকে চলে আসা একই ভার্সনের বইগুলো নিঃসন্দেহে সবদিক থেকে সেরা ছিল। কন্টেন্ট চয়েস (গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ ইত্যাদি), প্রচ্ছদ ও অলঙ্করণ, ম্যাপ সব কিছুতেই মুন্সিয়ানা ছিল, গবেষণার ছাপ ছিল। বিশেষভাবে আজ কথা বলব আঁকা ও ম্যাপ সম্পর্কে। সেই সময়ের বইগুলোতে মানচিত্র আঁকতেন দেশসেরা দুই মানচিত্রকার: গ্রাফোসম্যান এবং দি ম্যাপপা। আর প্রচ্ছদ ও অলঙ্করণের ক্ষেত্রে উপরের বইগুলোতে কাইয়ুম চৌধুরীর কিছু আঁকা ছিল যতদূর মনে পড়ে। তবে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক লেভেলে বাংলা বইয়ে একছত্রভাবে আধিপত্য করেছেন যে শিল্পী তিনি হলেন হাশেম খান। তবে ইংলিশ ফর টুডে বইয়ের ছবি আঁকতেন অন্য কেউ, যার নাম এখন মনে নেই।

আসল হাশেম খানের আঁকা

আজকের আলোচনা হাশেম খানকে ঘিরেই। মাঝের দিনগুলোতে সিলেবাস পরিবর্তনের সাথে সাথে ইলাস্ট্রেটর (যিনি ছবি আঁকেন) ও কার্টোগ্রাফার (যিনি মানচিত্র আঁকেন)ও কিন্তু পরিবর্তন হয়ে গিয়েছিল। তাদের আঁকায় পরিপক্কতার ছাপ ছিল না, যা যথেষ্ট উদ্বিগ্নতার বিষয় হলেও কাউকে তেমন উদ্বিগ্ন হতে দেখিনি বা অন্তত এই নিয়ে ভয়েস রেইজ করতে দেখিনি। এতদিন পর যখন আবার আগের সিলেবাস ফিরিয়ে নিয়ে আসার চেষ্টা হচ্ছে তখন কৌতূহলী হয়ে বইগুলো যাচাই করে দেখতে গেলাম। কথা সত্য, নব্বয়ের দশক বা তারও কয়েক বছর আগে থেকে যে লেখাগুলো চলে আসছিল সেই পুরনো বই ফিরিয়ে আনার যথেষ্ট কোশেশ লক্ষণীয়, যা সাধুবাদ পাবার যোগ্য। কিন্তু একইসাথে এই কথাও চলে আসে যে ইলাস্ট্রেশনের দিকটি কি অবহেলিতই থেকে যাবে? একটা ছবির নিচে ‘হাশেম খান ২০২২’ লেখা দেখে হকচকিয়ে গেলাম! কেননা, আঁকাটা আধা হাশেম খান-আধা ভিন্ন খানের ভঙ্গিতে হলেও স্বাক্ষর হাশেম খানের। বইয়ের প্রথম পৃষ্ঠায় আর্টিস্ট/ইলাস্ট্রেটরের নাম চেক করলাম। স্পষ্ট করে লেখা আছে, শিল্প সম্পাদনা/ শিল্প নির্দেশনা: হাশেম খান। বেশ কয়েক ক্লাসের বই চেক করে দেখলাম, সবটাতেই কেবল হাশেম খানের নামই লেখা হয়েছে। কিন্তু বইয়ে স্পষ্টত হাশেম খান ছাড়াও অন্তত আরো দুইজন বেনামী আর্টিস্টের ছবি দেখা যাচ্ছে।

নকল হাশেম খানের আঁকা

যারা আমার কথা এখনও বুঝতে পারেননি তাদের উদ্দেশ্যে বলছি, প্রত্যেক আর্টিস্টের আঁকার একটা কমন প্যাটার্ন থাকে। আপনাদের চোখে একজন আর্টিস্টের ফুল, ফল, লতা, পাতা, মানুষ, পশু বিভিন্ন রকম মনে হলেও আঁকাআঁকির জগতের লোক বা এই সম্পর্কে যাদের আগ্রহ আছে তারা জানেন একজন শিল্পীর সব আঁকা মূলত একই। ধরুন: আমার কাছে যদি আপনি এক হাজারটা ছবি নিয়ে আসেন যেগুলো ভিন্ন ভিন্ন আর্টিস্টের আঁকা, আমি প্রত্যেকটা ছবির আর্টিস্টের নাম কোনো সময়ক্ষেপণ ছাড়াই বলে দেব (যদি তার আঁকা আমার ইতঃপূর্বে বেশ কয়েকবার দেখার অভিজ্ঞতা থাকে)। কাজেই কোনটা জয়নুলের আঁকা, কোনটা সুলতানের আঁকা, কোনটা কামরুলের আঁকা, কোনটা হাশেম খানের আঁকা, কোনটা কাইয়ুমের আঁকা, কোনটা ধ্রুব এষের আঁকা, কোনটা হামিদুলের আঁকা আমি এক লহমায় বলে দিতে পারব।
কোন কার্টুনটা রনবী এঁকেছেন; কোনটা বেনু, কোনটা হুদা, কোনটা শিশির, কোনটা খলিল, কোনটা তারিক, কোনটা আরিফুল, কোনটা কায়সার, কোনটা মিশু, কোনটা কিশোর, কোনটা মানিক-রতন, কোনটা ইব্রাহিম, কোনটা অপু প্রমুখ তা বলতে আমার এক সেকেন্ডও লাগবে না।
তো মাঝে-মধ্যে পাজলড হয়ে যাই যখন দেখি একজনের স্টাইল আরেকজন কপি করার চেষ্টা করেছে। তখন কিছুটা ধাক্কা খেয়ে যাই, কারণ কপি করার কারণে কিছু বৈশিষ্ট্য মেলেও বটে, কিন্তু কিছু আবার মেলেও না। তা থেকেই বুঝে যাই আঁকাটি নকল। তেমন ঘটনাই দেখলাম এবারের পাঠ্যপুস্তকগুলোতে। আমাদের কৈশোর রাঙানো হাশেম খানকে আঁকায় ফিরিয়ে আনা হয়েছে বটে, তবে সেটা ফ্রন্ট পেজে নামের দিক থেকে। আমি চ্যালেঞ্জ করে বলছি, এই বইগুলোর ছবি অন্তত দুই থেকে তিনজন আর্টিস্ট এঁকেছেন। তারমধ্যে একজন হাশেম খান, আরেকজন ভিন্ন (যারা আঁকার ধরণও ভিন্ন), আরেকজন হাশেম খানের ভান ধরে এঁকেছেন, কিন্তু পুরোপুরি হয়নি-অথচ সিগনেচার হাশেম খানেরই বসানো হয়েছে। সহজ করে বোঝানোর জন্য একে আমরা নকল হাশেম খান বলতে পারি।
আমার প্রশ্ন হলো কেন এমন করা হয়েছে? হ্যাঁ, হাশেম খান ব্যতিরেকে আরেকজন যিনি নিজের স্টাইলেই এঁকেছেন তার আঁকা কিন্তু খারাপ হয়নি (আমি ‘অচেনা শিল্পীর আঁকা’ শিরোনামে পঞ্চম শ্রেণীর বই থেকে তার কিছু কাজের স্যাম্পল এখানে সংযুক্ত করলাম)। কিন্তু তিনি নিজের নাম ব্যবহার করেননি কেন তা বোধগম্য হলো না। যতদূর মনে পড়ে আমাদের সময় একাধিক শিল্পীর নামও উল্লেখ থাকত।
আরেকজন যিনি আছেন, তার আঁকাগুলোকে শিক্ষা বোর্ড কোন বিচারে বইয়ে অন্তর্ভুক্ত করল তা আমার বোধগম্য নয় (আমি ‘নকল হাশেম খানের আঁকা’ শিরোনামে তার আঁকা কিছু ছবি এখানে অন্তর্ভুক্ত করলাম)। আর আমাদের সময়ে হাশেম খানের আঁকা সাদাকালো কিছু ছবিও এখানে যোগ করলাম। আপনারা নিজেরাই মিলিয়ে নিন আমার কথা সত্য কিনা।
যাদের এভাবে ছবির পার্থক্য বুঝতে কষ্ট হচ্ছে তাদের উদ্দেশ্যে বলছি, আসল হাশেম খানের ছবিতে রেখাগুলো বলিষ্ট ও কুইক। কিন্তু নকল হাশেম খানের আঁকায় রেখাগুলো দ্বিধান্বিত, ডাবলড, কাঁপাকাঁপা। আসল হাশেম খানের এনাটমি জ্ঞান ভালো। বিশেষ করে হাতের কব্জি থেকে তালু ও আঙ্গুলগুলো অসাধারণভাবে আঁকা। পায়ের হাঁটু থেকে পাতা পর্যন্তও তাই। হাত-পায়ের আঙ্গুলগুলো লম্বা লম্বা ও ন্যাচারাল। রেখার চিকন ও গাঢ় হওয়ার বিষয়টিও নিয়ন্ত্রিত। হাশেম খানের মোটিফগুলোর মুখে এক স্বর্গীয় হাসি থাকে, চুল থাকে রেখায় ভরা, চোখগুলো হয় টানা টানা। নকল হাশেম খান কখনো কখনো সেই চুল, হাসি, নাক, মুখ কপি করতে পারলেও চোখ, হাত, পা, আঙ্গুলে এসে উদোম হয়ে গেছেন। গাছের পাতাগুলোতেও হাশেম খানের নিজস্ব ছাপ আছে যা নকল হাশেম খান গাছের কান্ড কপি করতে পারলেও পাতাতে এসে ধরা খেয়ে গেছেন।
আমার প্রশ্ন হলো হাশেম খানের নামে শিশুদেরকে অন্যের আনাড়ি আঁকা গেলানোর কারণ কী? এই যুগের শিশু-কিশোরদের সৌভাগ্য যে হাশেম খান এখনো জীবিত আছেন। তিনি যেহেতু আঁকছেনই তাহলে সব আঁকাই তার হতে দোষ কোথায়? অবশ্য অচেনা শিল্পী-যার আঁকার প্রশংসা করলাম তিনিও নিজ নামে পাশাপাশি আঁকতে পারেন। কিন্তু নকল হাশেম খানকে আউট করতে হবে। কেননা তার আঁকা বিকৃত, শিশুদের মনে যার ভালো ছাপ পড়বে না। আমাদের সাদা-কালো বইয়ের ছবি এঁকে হাশেম খান কিশোরমনে যে স্থায়ী প্রভাব ফেলেছেন তা বলা বাহুল্য। বই রঙিন হলেই কি শৈশব রঙিন হবে যদি আঁকা রুচিকর না হয়?
আমার এই লেখা অনেক গুণি শিল্পীর সামনে চলে যেতে পারে, তারা নিশ্চয় আমার প্রতিটি কথার সত্যতা অনুভব করবেন। এমনকি আমার লেখাটি যদি আসল হাশেম খানের চোখে পড়ে যায়, আমার ধারণা তিনিও আমার কথাগুলো স্বীকার করবেন। তবু যদি তিনি দাবি করে বসেন এই বলে যে এখানে তিনি ভিন্ন তার নামে/স্টাইলে আর কারো আঁকা নেই, তাহলে বলতেই হচ্ছে যে হাশেম খানের কলম-তুলির ধার কমে গেছে!

  • দৈনিক সাবাস বাংলাদেশ এর সর্বশেষ নিউজ পড়তে ক্লিক করুন: সর্বশেষ
  • দৈনিক সাবাস বাংলাদেশ এর ফেসবুক পেজটি ফলো করুন: dailysabasbd

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ধরনের আরও নিউজ

© কপিরাইট ২০২৪-২০২৫ | সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: NagorikIT