
হামাস এবং ইসরায়েলের মধ্যে দীর্ঘ আলোচনার পর একটি যুদ্ধবিরতির চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই চুক্তি সাময়িক স্বস্তি আনলেও স্থায়ী শান্তি অর্জন করা কতটা সম্ভব হবে তা নিয়ে গভীর সন্দেহ রয়ে গেছে।
দীর্ঘমেয়াদী সংঘাতের পর অবশেষে যুদ্ধবিরতি
প্রায় দেড় বছরের ইসরায়েলি বোমাবর্ষণ, গাজার ওপর বাধ্যতামূলক অবরোধ, খাদ্যাভাবে মৃত্যুর পর অবশেষে ফিলিস্তিনিরা কিছুটা স্বস্তি পেতে চলেছে। বুধবার ঘোষণা করা চুক্তিটি কার্যকর হবে আগামী রবিবার, ১৯ জানুয়ারি থেকে। এই চুক্তি কাতারের রাজধানী দোহায়, যুক্তরাষ্ট্র ও মিশরের মধ্যস্থতায় চূড়ান্ত হয়।
এটি ইসরায়েলের গাজার ওপর চালানো ধ্বংসাত্মক যুদ্ধের একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়, যেখানে অন্তত ৪৬,০০০ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১,১০,০০০ এরও বেশি আহত হয়েছে।
চুক্তির মূল পয়েন্টসমূহ
১. ইসরায়েলি বাহিনীর প্রত্যাহার: চুক্তির আওতায় ৪২ দিনের একটি প্রাথমিক পর্যায় শুরু হবে। এই সময়ে, ইসরায়েলি বাহিনী গাজার মূল এলাকা থেকে ধাপে ধাপে সরে যাবে।
- নেটজারিম করিডোর থেকে সরে আসা: এই অঞ্চল থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর সরাসরি প্রত্যাহার চুক্তির প্রথম পদক্ষেপ।
- ফিলাডেলফি করিডোর থেকে প্রত্যাহার: এই এলাকায় প্রাথমিক পর্যায়ের ৪০-৫০ দিনের মধ্যে ধাপে ধাপে বাহিনী সরানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
২. বাস্তুচ্যুতদের ফেরা: সপ্তম দিনে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা নিজ নিজ বাড়িতে ফিরতে পারবেন। যদিও চুক্তি অনুযায়ী পায়ে চলা প্রত্যাবর্তনকারীদের তল্লাশি করা হবে না, তবে যানবাহনগুলিকে উন্নত এক্স-রে প্রযুক্তির মাধ্যমে পরীক্ষা করা হবে। এই প্রক্রিয়া পরিচালনা করবে মিশর ও কাতারের যৌথ কোম্পানি।
৩. বন্দি বিনিময়:
- হামাস প্রথম ধাপে ৩৩ জন বন্দিকে মুক্তি দেবে।
- বিনিময়ে, ইসরায়েল ১,০০০ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেবে, যারা অক্টোবর ৭-এর হামলায় সরাসরি জড়িত ছিল না।
- এছাড়া দীর্ঘমেয়াদী সাজাপ্রাপ্ত ২৫০ জন ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হবে।
৪. রাফাহ সীমান্ত খুলে দেওয়া:
- চুক্তির অধীনে মিশর রাফাহ সীমান্ত খুলে দেবে, যেখানে অসুস্থ এবং মানবিক সহায়তা প্রয়োজন এমন ব্যক্তিরা চিকিৎসার জন্য গাজা থেকে বের হতে পারবেন।
- চুক্তি অনুযায়ী, ইসরায়েলি বাহিনী এই সীমান্তের নির্দিষ্ট এলাকায় উপস্থিত থাকবে, তবে তাদের ৭০০ মিটার এলাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হবে।
আন্তর্জাতিক ভূমিকা এবং সংশয়
তুরস্কের সাকারিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মুস্তাফা জানের বলেছেন, এই চুক্তির সফল বাস্তবায়ন নির্ভর করবে উভয় পক্ষের প্রতিশ্রুতি পালনের ওপর। চুক্তির ধাপে ধাপে সফল বাস্তবায়নই নির্ধারণ করবে এটি স্থায়ী শান্তি আনতে পারবে কি না।
রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও জটিলতা
গাজার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ এবং ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি চুক্তির বাস্তবায়নে বড় ভূমিকা পালন করবে।
- ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক অবস্থান এই প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারে। তার সরকার আগের বেশ কয়েকটি যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিল এবং সামরিক পদক্ষেপকে অগ্রাধিকার দিয়েছে।
- বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নেতানিয়াহুর প্রধান লক্ষ্য তার রাজনৈতিক অস্তিত্ব রক্ষা করা, যার জন্য তিনি আগের চুক্তিগুলোকে বারবার বাধাগ্রস্ত করেছেন।
চুক্তির ভবিষ্যৎ কী?
চুক্তির প্রথম পর্যায় শেষ হওয়ার পর, ৪২ দিনের মধ্যে দ্বিতীয় দফা আলোচনার প্রস্তুতি নেওয়া হবে।
- চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো গাজা থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার।
- তবে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, ইসরায়েলের অতীত আচরণ এবং আগের চুক্তি লঙ্ঘনের ইতিহাসের কারণে এই লক্ষ্য অর্জন করা কঠিন হতে পারে।
প্রধান চ্যালেঞ্জ এবং সম্ভাব্য ফলাফল
১. ইসরায়েলের সামরিক উপস্থিতি:
- ইসরায়েলের বাহিনী পুরোপুরি গাজা থেকে সরে যাবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
- চুক্তির শর্ত লঙ্ঘনের সম্ভাবনা যুদ্ধ আবারও শুরু হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়।
২. বন্দি মুক্তির রাজনৈতিক প্রভাব:
- হামাসের শীর্ষ নেতা ইব্রাহিম হামিদ এবং ফাতাহ সদস্য আবদুল্লাহ দারওউসির মুক্তি উভয় পক্ষের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বড় পরিবর্তন আনতে পারে।
৩. আন্তর্জাতিক চাপ:
- যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রশাসনের চাপ এবং কাতার ও মিশরের মধ্যস্থতা চুক্তির বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
শেষ কথা
যদিও এই চুক্তি সাময়িক স্বস্তি বয়ে আনছে, তবে এর সফল বাস্তবায়ন অনেকগুলো রাজনৈতিক এবং সামরিক জটিলতার ওপর নির্ভর করবে। ফিলিস্তিনি এবং ইসরায়েলিদের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ, তবে স্থায়ী শান্তির সম্ভাবনা এখনও অনিশ্চিত।
- দৈনিক সাবাস বাংলাদেশ এর সর্বশেষ নিউজ পড়তে ক্লিক করুন: সর্বশেষ
- দৈনিক সাবাস বাংলাদেশ এর ফেসবুক পেজটি ফলো করুন: dailysabasbd
Leave a Reply