তৌহিদুল ইসলামের হত্যাকাণ্ড: রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের নির্মম উদাহরণ
বাংলাদেশের ইতিহাসে আবারও এক নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনা যুক্ত হলো। কুমিল্লার যুবদল কর্মী তৌহিদুল ইসলামকে বেআইনিভাবে আটক করে নির্মম নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যা করা হয়েছে। এ হত্যাকাণ্ডের পেছনে অভিযুক্ত করা হচ্ছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে, যারা বর্তমান সরকার কর্তৃক ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়ে কাজ করছে।
তৌহিদুল ইসলাম চট্টগ্রামে একটি ছোট চাকরি করতেন। বাবার মৃত্যুর পর তিনি বাড়িতে ফিরে আসেন। কিন্তু কয়েকদিনের মধ্যেই তাকেও মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া হয়। সেনাবাহিনী তাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়, পুলিশের কোনো উপস্থিতি ছাড়াই। তার নামে কোনো মামলা, সাধারণ ডায়েরি বা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছিল না। এরপর ক্যাম্পে নিয়ে তাকে অকথ্য নির্যাতন করা হয়, যার ফলে তিনি মারা যান। এই হত্যাকাণ্ডের পর তৌহিদের পরিবারকে এক দুঃসহ শোকের মধ্যে ফেলে দেওয়া হয়েছে। ছবিতে তার স্ত্রীর ও সন্তানের হৃদয়বিদারক দৃশ্য দেখলে যে কোনো বিবেকবান মানুষ শিউরে উঠবে।
নিহত তৌহিদুলের শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দীর্ঘদিন ধরে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িয়ে আছে। ৫ আগস্টের পর এ বাহিনীর বিরুদ্ধে হেফাজতে নির্যাতন ও হত্যার একাধিক অভিযোগ উঠেছে, কিন্তু তার কোনো বিচার হয়নি। এক সময় নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের ঘটনার পেছনেও ছিল সেনাবাহিনীর এক কর্নেল, কক্সবাজারে মেজরের গুলিতে মারা গিয়েছিলেন একরাম। সেই ঘটনার ভয়াবহ রেকর্ড এখনো জনগণের মনে গেঁথে আছে।
র্যাব ও ডিজিএফআই-এর মতো সংস্থাগুলো সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় গুম-খুনের ইতিহাস তৈরি করেছে। আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও বাংলাদেশে এখনো এসব বাহিনীর নির্বিচার মানবাধিকার লঙ্ঘন চলছে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে এমন পরিস্থিতি কখনো কাম্য নয়।
নিহত তৌহিদুলের অসহয়ায় পরিবার
এই হত্যাকাণ্ডে দায় বর্তায় সরাসরি রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের ওপর। বর্তমান সরকার যদি জনগণের প্রতি ন্যূনতম দায়বদ্ধ হয়, তবে তাদের উচিত:
১. স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে বরখাস্ত করা। 2. হত্যাকাণ্ডে জড়িত সেনাসদস্যদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা রুজু করে গ্রেপ্তার করা। 3. সংশ্লিষ্ট সেনা ইউনিটের দায়িত্বশীল অফিসারদের বরখাস্ত ও বিচারের আওতায় আনা। 4. সেনাবাহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা বাতিল করা। 5. সিভিল আইন-শৃঙ্খলায় সেনাবাহিনীর সম্পৃক্তি নিষিদ্ধ করা। 6. র্যাব ও ডিজিএফআই বিলুপ্ত করা। 7. সেনাবাহিনীর সংষ্কার করা, যাতে তারা শুধুমাত্র বহিঃশত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই ও জাতীয় জরুরি অবস্থায় সরকারের নির্দেশ পালন করে।
এই হত্যার বিচার চেয়ে জনগণকে সোচ্চার হতে হবে। বিএনপিকে তার কর্মীর পাশে দাঁড়িয়ে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে, যাতে দোষীদের বিচারের মুখোমুখি করা হয়। ছাত্রসমাজ ও নাগরিকদেরও এ ঘটনায় সরব হতে হবে। যদি আজ তৌহিদুলকে হত্যা করা হয়, তাহলে কাল যে আরেকজন নিরীহ নাগরিক এর শিকার হবে না, তার নিশ্চয়তা কোথায়?
সেনাবাহিনী যদি ভাবে জনগণ তাদের ভয় পায়, তবে তারা ভুল করছে। বাংলাদেশের জনগণ আগেও স্বৈরশাসকদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে, প্রয়োজনে আবারও করবে। রাষ্ট্র জনগণের জন্য, জনগণের টাকায় পরিচালিত বাহিনী কখনো জনগণের শত্রু হতে পারে না।
(মহিউদ্দিন মোহাম্মদের ফেসবুক পোস্ট অবলম্বনে)
Leave a Reply