
সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বৈধ ঘোষণা করে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের রায় দিয়েছে আপিল বিভাগ। তবে এ ব্যবস্থা তৎক্ষণাত কার্যকর হচ্ছে না। আপিল বিভাগ জানিয়েছে, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, আর চতুর্দশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে কার্যকর হবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা।
বৃহস্পতিবার সকালে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে সাত বিচারপতির বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।আপিল বিভাগ বলছে, বর্তমানে দেশের শাসনব্যবস্থা অন্তর্বর্তী কাঠামোর অধীনে চলছে; তাই ঠিক এখনই তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের সাংবিধানিক অবস্থা নেই। ফলে আগামীর ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনেই হবে।
১১ নভেম্বর পর্যন্ত চলা আপিল শুনানিতে বিভিন্ন দলের আইনজীবীরা বলেন,
বিএনপির পক্ষে ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল জানান, আগামী নির্বাচন তত্ত্বাবধায়কের অধীনে নয়; বরং পরবর্তী নির্বাচন থেকে এই ব্যবস্থা কার্যকর হতে পারে।
জামায়াতের আইনজীবী শিশির মনির বলেন, সংসদ ভেঙে যাবার ১৫ দিনের মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের যে বিধান ছিল, বর্তমান পরিস্থিতিতে তা প্রযোজ্য নয়। তাই ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে হওয়াই সাংবিধানিকভাবে যৌক্তিক।
তার মতে, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের ম্যান্ডেট তিনটি—বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন। সেই ধারাবাহিকতাতেই নির্বাচন হবে। ভবিষ্যতে নতুন সংসদ চাইলে পুরনো তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থাকে ফিরিয়ে আনতে পারে বা জুলাই সনদের ভিত্তিতে নতুন কাঠামো গঠন করতে পারে। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার অনীক আর হক। তারা আদালতে জানান, তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা এখন কার্যকর করা আইন ও বাস্তবতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
২০১১ সালের ১০ মে বিচারপতি খায়রুল হকের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করে। এরপর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের আগেই সংসদে পাস হয় সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী, যার মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা তুলে দেওয়া হয়।
গণঅভ্যুত্থানের পর গত ১৭ ডিসেম্বর হাইকোর্ট পঞ্চদশ সংশোধনীর ২০ ও ২১ ধারা বাতিল ঘোষণা করলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরে আসার সাংবিধানিক পথ সুগম হয়।
আজকের আপিল বিভাগের রায়ে সেই পথ পুরোপুরি নিশ্চিত হলো—তবে কার্যকর হবে আগামী জাতীয় নির্বাচনের পর।