রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় অবস্থিত ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রভাতী শাখায় হিজাব ইস্যুতে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। গত রোববার (২৪ আগস্ট) ষষ্ঠ শ্রেণির ২০ থেকে ২২ জন ছাত্রীকে শ্রেণিকক্ষ থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ইংরেজি শিক্ষিকা ফজিলাতুন নাহারের বিরুদ্ধে। শিক্ষার্থীদের অভিভাবকেরা অভিযোগ করেছেন, হিজাব পরে আসায় তাদের সন্তানদের সঙ্গে অপমানজনক আচরণ করা হয়েছে এবং ‘মাদ্রাসার শিক্ষার্থীর মতো’ মন্তব্যসহ ‘জঙ্গির মতো’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ার মুখে পড়েছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, যারা ইতোমধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
সেদিন সকালে শিক্ষার্থীরা প্রতিদিনের মতো স্কুলে উপস্থিত হয়। ষষ্ঠ শ্রেণির ওই ছাত্রীদের বেশ কয়েকজন হিজাব পরে ক্লাসে আসলেও সকাল থেকে একাধিক ক্লাসে তাদের পোশাক নিয়ে কোনো আপত্তি তোলা হয়নি। কিন্তু শেষ পিরিয়ডে ইংরেজি ক্লাসে প্রবেশের সময় শিক্ষিকা ফজিলাতুন নাহার তাদের থামিয়ে দেন এবং শ্রেণিকক্ষ থেকে বের হয়ে যেতে বলেন। শিক্ষার্থীরা বাসায় ফিরে অভিভাবকদের জানায়, শুধু হিজাব পরার কারণে তাদের ক্লাসে বসতে দেওয়া হয়নি। একইসঙ্গে শিক্ষক তাদের উদ্দেশে মন্তব্য করেন—“মাদ্রাসার ছাত্রীর মতো কেন হিজাব পরে এসেছ” এবং “হিজাব পরলে জঙ্গির মতো লাগে।”
অভিভাবকদের ভাষ্য অনুযায়ী, এমন আচরণ শিশুদের মানসিকভাবে ভীষণ আঘাত দিয়েছে। অনেক অভিভাবক সরাসরি অভিযোগ করেন যে, পোশাক নিয়ে এমন বৈষম্যমূলক মন্তব্য কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তাদের দাবি, বিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ধর্মীয় বা ব্যক্তিগত পোশাক পছন্দ নিয়ে বিদ্রূপ করলে শিক্ষার পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
তবে অভিযুক্ত শিক্ষিকা ফজিলাতুন নাহার অভিযোগ অস্বীকার করে ভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তার দাবি, বিষয়টি হিজাব নয়, বরং বিদ্যালয়ের ড্রেস কোড ভঙ্গের সঙ্গে সম্পর্কিত। তিনি বলেন, “আমাদের স্কুলের নিয়ম হলো—যদি কেউ পর্দা করতে চায়, তাকে সাদা স্কার্ফ পরে আসতে হবে। কিন্তু কয়েকজন ছাত্রী সাদা স্কার্ফের পরিবর্তে ওড়না পরে এসেছে। এটি স্কুলের নিয়মবহির্ভূত, তাই তাদের ক্লাস থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে।” তিনি আরও বলেন, অন্য শিক্ষকরা এ বিষয়ে কঠোর না হলেও নিয়ম শেখানোই তার দায়িত্ব, তাই তিনি শিক্ষার্থীদের শাসন করেছেন।
ঘটনার পর বিষয়টি নিয়ে বিদ্যালয় প্রশাসনের ভেতরে আলোচনা শুরু হয়। ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাজেদা বেগম বলেন, তিনি বসুন্ধরা শাখার প্রধানের সঙ্গে কথা বলেছেন। অভিযোগের ভিত্তিতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিনি আশ্বাস দিয়ে বলেন, “ঘটনাটি সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করা হবে এবং তদন্তের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এ ঘটনার পর থেকে অভিভাবকদের মধ্যে উদ্বেগ ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। তাদের দাবি, শিশুদের ধর্মীয় পোশাক বা হিজাব নিয়ে এভাবে অপমান করা কোনোভাবেই কাম্য নয়। তারা বলেন, বিদ্যালয় শিশুদের নিরাপদ ও সম্মানজনক পরিবেশ দেওয়ার জন্য দায়বদ্ধ, কিন্তু পোশাকের কারণে বৈষম্য সৃষ্টি হলে তা শিশুদের শিক্ষার প্রতি অনীহা বাড়াতে পারে।
বর্তমানে তদন্ত কমিটি বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। অভিভাবক, শিক্ষার্থী ও সংশ্লিষ্ট শিক্ষিকার বক্তব্য নেওয়ার পর বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত দেবে। হিজাব ইস্যুতে ভিকারুননিসা নূন স্কুলের এই ঘটনা ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও আলোচনার জন্ম দিয়েছে এবং শিক্ষাঙ্গনে ড্রেস কোড ও পোশাক স্বাধীনতা নিয়ে নতুন বিতর্কের সূচনা করেছে।