জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে বৃহস্পতিবার গাজায় অবিলম্বে ও স্থায়ী যুদ্ধবিরতির আহ্বান এবং মানবিক সহায়তা বৃদ্ধির প্রস্তাবের ওপর ভোটাভুটি হতে যাচ্ছে। প্রস্তাবে সব পক্ষকে নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতি মেনে চলা ও জিম্মিদের দ্রুত মুক্তির দাবি জানানো হয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য ভেটো নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
আগস্টের শেষে গাজায় দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতির আনুষ্ঠানিক ঘোষণার পর নিরাপত্তা পরিষদের ১০টি অস্থায়ী সদস্য এই খসড়া প্রস্তাব উত্থাপন করে। এতে মানবিক সহায়তার প্রবাহ নিশ্চিত করতে সব ধরনের বাধা অপসারণের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। এএফপি ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, পূর্ববর্তী প্রস্তাবগুলোও অধিকাংশ সদস্য সমর্থন করলেও যুক্তরাষ্ট্র একাধিকবার ভেটো প্রয়োগ করেছে। সর্বশেষ জুন মাসে ওয়াশিংটন ইসরাইলকে সমর্থন জানাতে এমন একটি রেজলিউশন আটকে দেয়।
জাতিসংঘ সূত্র বলছে, যুক্তরাষ্ট্র যদি এবারও ভেটো দেয়, তাহলে পরিষদের ১৪ সদস্যের সম্মতি সত্ত্বেও প্রস্তাবটি গৃহীত হবে না। তবে ইউরোপীয় কূটনীতিকরা বলছেন, প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া জরুরি; নচেৎ যুক্তরাষ্ট্র সহজেই দায় এড়িয়ে যাবে এবং বিশ্ব জনমতের মুখোমুখি হবে না।
এদিকে, মঙ্গলবার জাতিসংঘ-নিযুক্ত একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশন গাজায় ইসরাইলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ এনেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরাইলের সামরিক আগ্রাসন ফিলিস্তিনি জনগণকে ধ্বংসের উদ্দেশ্যে চালানো হয়েছে। এতে হত্যাকাণ্ড, গুরুতর শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি, জীবনধারণের অনুপযোগী অবস্থা তৈরি এবং জন্মনিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপের মতো চারটি শর্ত পূরণ হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।
ইসরাইল এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে প্রতিবেদনটিকে “ভিত্তিহীন ও পক্ষপাতদুষ্ট” বলে দাবি করেছে। অপরদিকে মানবাধিকার সংস্থাগুলো এবং একাধিক রাষ্ট্র কমিশনের প্রতিবেদনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করছে।
গাজায় বর্তমানে খাদ্য, পানি, ওষুধ এবং জ্বালানির সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। জাতিসংঘের মতে, যুদ্ধ ও অবরোধের কারণে লাখ লাখ মানুষ দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে রয়েছে। বৃহস্পতিবারের ভোটকে তাই আন্তর্জাতিকভাবে একটি গুরুত্বপূর্ণ মানবিক ও রাজনৈতিক বার্তা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
জাতিসংঘের বার্ষিক শীর্ষ সম্মেলন আগামী সপ্তাহে নিউইয়র্কে বসবে। গাজার মানবিক বিপর্যয় এবং যুদ্ধবিরতি ইস্যুটি সেখানে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।