টিপু সুলতান ট্রেনে ইংরেজি বই ফেরি করা সংগ্রামী একজন প্রবীণ। বাংলাদেশ রেলওয়ের নিয়মিত যাত্রী অথচ টিপু সুলতানকে চেনেন না এমন লোক পাওয়া বিরল। কেননা যাত্রাপথে যে কোনোদিন এই শুভ্রবেশী-শুভ্রকেশী প্রবীণ ভদ্রলোকের সাথে আপনার দেখা না হয়েই যায় না! বয়স হয়েছে, কিন্তু ছাপ পড়েনি চেহারায়, কর্মে ও মনে। এদেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে অনার্স-মাস্টার্স পাশ করা উচ্চশিক্ষিত যুবক, সবার যেন এক কমন সমস্যা- ইংরেজিতে দুর্বলতা! জরিপ করলে হাতে গোণা অল্প কিছু মানুষ হয়ত পাওয়া যাবে যারা ইংরেজিতে অনর্গল কথা বলতে পারে, যাদের ভোকাবুলারি সমৃদ্ধ। বিসিএস ক্যাডার হয়ে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তা, অথচ ইংরেজিতে দুই লাইন বলতে বললে ঘেমে-নেয়ে একাকার হয়ে যান এমন মানুষও কম নেই কিন্তু!
এর মূল কারণ ইংরেজি ভীতি। বাল্যবেলা থেকেই আমাদেরকে যে গৎবাঁধা বৈয়াকরণিক পদ্ধতিতে ইংরেজি শেখানো হয় তাতে ইংরেজির প্রতি ভালোবাসার বদলে দূরত্বই বাড়ে। এই দূরত্ব কাটাতে, ইংরেজিকে মজার ছলে মানুষের কাছে উপস্থাপন করতে নিজের মতো করে গবেষণা করেন ইংরেজিপ্রিয় এই প্রবীণ ভদ্রলোক, লেখেন কয়েকটি বই। তারপর জবিকার তাড়নায় এই বয়সে নিজেই নিজের বই নিয়ে উঠে পড়েন ট্রেন থেকে ট্রেনে। দিনরাত ফেরি করেন নিজের লেখা বই, তা বিক্রির আয় দিয়েই চলে তার সংসার। অনেক যাত্রী ভালোবেসে তার বই কেনেন, অনেকে মজাও পান বইয়ের কন্টেন্টে, কেউ কেউ ফোড়ন কাটতেও ভোলেন না।
জয় বাংলা স্লোগান ও তসলিমার বই বিক্রি,বইমেলা থেকে বের করে দেওয়া হলো লেখককে
গত বইমেলায় প্রবেশপথে পাঠকদের ইংরেজিজ্ঞান যাচাই বিষয়ক কুইজ চালু করে ভাইরাল হন। অবশ্য কিছু সাংবাদিকের অযৌক্তিক প্রশ্নবাণে জর্জরিতও হন। যদিও তাতে একবিন্দু দমে যাননি আমাদের টিপু সুলতান। এদেশের সাধারণ যাত্রীদের কাছে তিনি এক জনপ্রিয় নাম, রীতিমতো এক সেলিব্রিটি। তার সাথে ছবি তুলতে পেরে অনেকে ধন্যও মনে করেন নিজেকে। কেউ কেউ তাকে ডাকে ইংলিশম্যান নামে। তার লেখা বই পড়ে সত্যিকার অর্থে ইংরেজির প্রতি আগ্রহ বেড়েছে, ইংরেজিভীতি কমেছে এমন পাঠকও নেহাৎ কম নেই।
টিপু সুলতান আমাদের শেখায় সমালোচনার মুখেও দমে না গিয়ে কীভাবে নিজ লক্ষ্যে অবিচল থেকে কাজ করে যেতে হয়। টিপু সুলতান আমাদের দেখায় জাতি হিসেবে কতটা নীচ আমরা, একজন প্রবীণ ইংরেজি-অনুরাগী নাগরিকের সাথে কী আচরণ আমরা করি।
একদিন হয়ত একবুক অভিমান নিয়ে এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবেন বৃদ্ধ কিন্তু কর্মচঞ্চল এই ইংরেজি-পাগল লোকটা, যিনি নিজের শ্রমে-ঘামে জাতিকে ইংরেজি শেখাতে চেয়েছিলেন, বৃদ্ধবয়সে ঝোলাভরা স্বরচিত বই হাতে ট্রেনে ট্রেনে পাড়ি দিয়েছিলেন মাইলকে মাইল। এ জাতিকে ইংরেজি শেখানোর সাধনায় লিপ্ত বড় বড় জ্ঞানী-গুণি গবেষক-অধ্যাপকদের নামের মাঝে হয়ত পাদপ্রদীপের আড়ালেই রয়ে যাবেন চিরতরুণ এই বৃদ্ধ, কিন্তু তার চেষ্টা নিশ্চয় নীরবে প্রভাব ফেলবে জাতির ইংরেজি শিক্ষার উদ্যোগে।
Leave a Reply