সাবাস বাংলাদেশ বিশেষ প্রতিবেদন-৩
সংবাদ শেয়ারের ক্ষেত্রে বর্তমানে সোশাল মিডিয়ায় বহুলভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে ফটোকার্ড। সংবাদপত্রের নিয়মিত পাঠক না হয়েও অনেকে কেবল সোশাল মিডিয়ায় ফটোকার্ড দেখে গুরুত্বপূর্ণ নিউজ ও ট্রেন্ডিং ইস্যু সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকেন।
কিন্তু দুঃখজনক ব্যাপার হলো, মানুষের সরল বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে একদল গ্রাফিক্স ডিজাইনার ভুয়া ফটোকার্ড তৈরি করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে শেয়ার দেন, যার সত্যাসত্য নির্ণয় করতে না পেরে বহু পাঠক বিভ্রান্তিতে পড়েন। এভাবে সময়ে সময়ে দেশব্যাপী তীব্র গুজব ডালপালা মেলে, যা যে কোনো সময় কারো জন্য বড় ধরণের ক্ষতিকর পরিণাম বয়ে আনতে পারে। এই কারণে দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে মিডিয়াগুলোকে প্রায়ই এই মর্মে নিউজ করতে হয় যে অমুক ফটোকার্ডটি তাদের তৈরি নয়। যে মিডিয়ার জনপ্রিয়তা যত বেশি, সেই মিডিয়াকে এই দুর্ভোগ পোহাতে হয় তত বেশি। যেমন: সোশাল ব্লেডে শীর্ষস্থানে থাকা একটি সংবাদ চ্যানেলের ব্যাপারে তো এমন একটি কৌতুকই চালু হয়ে গেছে যে এই চ্যানেলটিকে সারাদিনে যতগুলো না নিউজের জন্য ফটোকার্ড বানাতে হয় তার চেয়ে বেশি এটা জানাতেই বানাতে হয় যে অমুক ফটোকার্ডটি ভুয়া, তাদের প্রচারিত নয়।
এসব বিষয় লক্ষ্য করে একটি উদ্ভাবনী ধারণা বাস্তবায়ন করার উদ্যোগ নেয় দৈনিক সাবাস বাংলাদেশ। ‘ইউনুস সরকারের কয়েকটি অভাবনীয় সাফল্য’ শীর্ষক একটি নিউজের ফটোকার্ড হিসেবে গত ১২ মার্চ তৈরি করা হয় প্রথম পরীক্ষামূলক স্মার্ট ফটোকার্ডটি। এরপর গত ১৬ মার্চ ২০২৫ ‘চীনের সোলার প্যানেল জায়ান্ট লংজি বাংলাদেশের বিনিয়োগে আগ্রহী’ শীর্ষক আরেকটি নিউজের জন্য পরিমার্জিত ডিজাইনের আরেকটি ফটোকার্ড তৈরি করা হয় এবং এরপর থেকে সময়ে সময়ে এরকম স্মার্ট ফটোকার্ড তৈরি হচ্ছে। এই ফটোকার্ডকে ‘স্মার্ট ফটোকার্ড’ বলার কারণ হলো এটি একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ফটোকার্ড যেটিতে থাকা কিউআর কোড এর কারণে সংবাদ জানতে আলাদাভাবে আর কোনো লিংকের প্রয়োজন হবে না। কার্ডে থাকা কিউআর কোড স্ক্যান করে অথবা স্বয়ং ফটোকার্ডটিকে প্রযোজ্য যে কোনো ওয়েবসাইটে আপলোড করে একটি ডিভাইসের সাহায্যেই সংবাদটি পাঠ করা যাবে।
ইদানিং কোনো কোনো মিডিয়ার ফটোকার্ডে কিউআর কোড দেখা যায় বটে। কিন্তু তা ওই ফটোকার্ডের নিউজটির কিউআর কোড নয়, বরং মিডিয়ার হোমপেজের জন্য নির্দিষ্ট একটি কমন কিউআর কোড। প্রচলিত এই পদ্ধতির বিপরীতে দৈনিক সাবাস বাংলাদেশের প্রতিটি ফটোকার্ডে ব্যবহার করা হয় ভিন্ন ভিন্ন নিউজের কিউআর কোড। ফলে ফটোকার্ডটি যখন শেয়ার হয়ে তার আপলোডকারী মিডিয়া থেকে বাইরে ছড়িয়ে যাচ্ছে তখন কার্ডে বিদ্যমান কিউআর কোডের কারণে আর আলাদাভাবে কোনো লিংক এর প্রয়োজন হচ্ছে না। যদি কোনো ফটোকার্ডের কিউআর কোড স্ক্যান করে সংশ্লিষ্ট নিউজটি না পাওয়া যায় তাহলে সহজেই বোঝা যাবে যে ফটোকার্ডটি নকল। ফলে তাৎক্ষণিক সকল সংশয়-দ্বন্দ্বের অবসান হয়ে যাবে, কোনো গুজব ছড়ানোর সুযোগ পাবে না। এতে আর কোনো মিডিয়াকে প্রতিনিয়ত সচেতনতামূলক ফটোকার্ড বানিয়ে শেয়ার দেওয়ার পরিশ্রমও করতে হবে না।
মজার ব্যাপার হলো, এই পদ্ধতিটি শুধু পাঠকদের জন্য ফ্যাক্ট চেকিং আর ফটোকার্ডের নিউজটি পড়া সহজ করে দিচ্ছে তা-ই নয়, এর মাধ্যমে মিডিয়ার ওয়েবসাইটগুলোও পাবে বাড়তি ট্রাফিক।
ছোট্ট কিন্তু কার্যকরী গুজব প্রতিরোধক এই ব্যবস্থাটি জ্ঞানত এখন পর্যন্ত দেশ কিংবা বিদেশের কোনো মিডিয়াকে গ্রহণ করতে দেখা যায়নি। কাজেই দৈনিক সাবাস বাংলাদেশ পোর্টালকে ‘স্মার্ট ফটোকার্ড’ এর এই অনুসরণযোগ্য আইডিয়ার উদ্ভাবক বলা যেতেই পারে।