বাংলাদেশের শেয়ার বাজারে ইসলামী অর্থব্যবস্থার এক নতুন দিগন্ত উন্মোচনের পথে। গত ১৭ আগস্ট রবিবার ঢাকায় চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) অফিসে স্বাক্ষরিত এক ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারকের (এমওইউ) মাধ্যমে এই নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো। চুক্তিটি স্বাক্ষর করেছে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ পিএলসি, বাংলাদেশের আইএফএ কনসালটেন্সি লিমিটেড এবং মালয়েশিয়ার আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আদল অ্যাডভাইজরি।
সিএসই’র পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই সমঝোতার মূল উদ্দেশ্য হলো শরীয়াহ নীতিমালা অনুসারে একটি পূর্ণাঙ্গ আর্থিক কাঠামো ও প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলা, যা দেশের মূলধন বাজারে হালাল বিনিয়োগের নতুন সম্ভাবনা তৈরি করবে। প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, চুক্তির মাধ্যমে সিএসই’র জন্য শরীয়াহ ভিত্তিক সূচক তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হবে। পাশাপাশি মালয়েশিয়ার নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও অভিজ্ঞ বাজার বিশেষজ্ঞদের সাথে দক্ষতা বিনিময়ের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
চুক্তি অনুসারে সহযোগিতার ক্ষেত্র বিস্তৃত হবে বিভিন্ন দিক থেকে। এর মধ্যে রয়েছে নতুন শরীয়াহ সম্মত পণ্য প্ল্যাটফর্ম গঠন, ফিনটেক সেক্টরে ইসলামী নীতিমালা ভিত্তিক পরামর্শ প্রদান এবং আধুনিক প্রযুক্তির সাথে শরীয়াহ নীতিমালার সমন্বয় সাধন। বিশেষ করে ক্রাউডফান্ডিং, রোবো-অ্যাডভাইজরি এবং ডিজিটাল সম্পদ ব্যবস্থাপনার মতো উদ্ভাবনী খাতে শরীয়াহ অনুসারী সেবা চালুর ওপর গুরুত্ব দেওয়া হবে।
সিএসই’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাইফুর রহমান মজুমদার (এফসিএ, এফসিএমএ) অনুষ্ঠানে বলেন, ইসলামী অর্থব্যবস্থাকে সামনে রেখে বাংলাদেশে একটি আলাদা ইসলামিক ক্যাপিটাল মার্কেট প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু হবে। পাশাপাশি শরীয়াহ নীতিভিত্তিক রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টমেন্ট ট্রাস্ট (আরইআইটি), ইসলামিক ফান্ড এবং ইসলামিক ক্রাউডফান্ডিং চালুর পরিকল্পনাও রয়েছে। এর মাধ্যমে ইসলামী আর্থিক সেবা বিস্তৃত আকারে জনগণের কাছে পৌঁছে যাবে।
চুক্তিপত্রে আইএফএ কনসালটেন্সি লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক মুফতি আবদুল্লাহ মাসুম (সিএসএএ) এবং মালয়েশিয়ার আদল অ্যাডভাইজরির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুফতি ড. ইউসুফ সুলতান স্বাক্ষর করেন। তারা শরীয়াহ সম্মত দিকনির্দেশনা ও পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
সিএসই’র পক্ষ থেকে জানানো হয়, এই উদ্যোগ দেশের আর্থিক খাতকে নতুন মাত্রা দেওয়ার পাশাপাশি বৈশ্বিক ইসলামী আর্থিক সেবা খাতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক জোরদার করবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ইসলামী অর্থনীতির দ্রুত বিকাশমান এই সময়ে শরীয়াহ ভিত্তিক মূলধন বাজার চালু হলে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়বে এবং বাংলাদেশের শেয়ার বাজারে টেকসই প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত হবে।
এই ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা বাংলাদেশের মূলধন বাজারে ইসলামী আর্থিক খাতের বিকাশ ও বিশ্বব্যাপী সহযোগিতা প্রসারের এক মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।