এস আলম গ্রুপের ২২৪ হাজার কোটি টাকার অর্থপাচার, ৪৭০ কোম্পানি দিয়ে আন্তর্জাতিক জালিয়াতি - দৈনিক সাবাস বাংলাদেশ
নোটিশ:
শিরোনামঃ
জাবিতে প্রাণ রসায়ন বিভাগের নবীন শিক্ষার্থীদের র‍্যাগিং বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যারিয়ার ক্লাবের নতুন কমিটি ঘোষণা বিদেশে নতুন আগত বাংলাদেশিদের প্রতি অমানবিক আচরণ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন ফজলে এলাহী সাবেক সেনাকর্মকর্তার জবানিতে পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর প্রকৃত চিত্র কাতার–সৌদি মধ্যস্থতায় পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘাত ‘আপাতত স্থগিত’ করল আফগানিস্তান পাকিস্তান আবারও আফগান সীমান্ত অতিক্রম করার চেষ্টা করলে আফগান বাহিনী জবাব দিতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত বালিয়াকান্দিতে টাইফয়েড প্রতিরোধে টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্সের ক্লাস করতে এসে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা আটক কুবির তিন শিক্ষার্থী নোবিপ্রবি মডেল ইউনাইটেড নেশনস কনফারেন্সে পুরস্কার জয়ী রাজবাড়ীর কালুখালীর গুণী সংগীতশিল্পী জাহিদ হাসানের মৃত্যু

এস আলম গ্রুপের ২২৪ হাজার কোটি টাকার অর্থপাচার, ৪৭০ কোম্পানি দিয়ে আন্তর্জাতিক জালিয়াতি

ডেস্ক রিপোর্ট
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১২ আগস্ট, ২০২৫
  • ১০৪ বার দেখা হয়েছে

মোহাম্মদ সাইফুল আলম, এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান, এবং তার পরিবার দেশের এক বড় অর্থনৈতিক দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদ গঠনের সঙ্গে জড়িয়ে থাকার বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরে এক ‘রহস্য’ ছিল। বিশেষ করে গত দুই বছরে, শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী শাসন ক্ষমতা থেকে যাওয়ার পর এই গোপন সম্পদের পরিমাণ ও তার বিস্তারের তথ্য ক্রমশ সামনে এসেছে।

সম্প্রতি একটি গভীর তদন্তে প্রকাশ হয়েছে, সি আলম গ্রুপ প্রায় ২২৩,৮৫৫ কোটি টাকা অর্থপাচারে লিপ্ত ছিল, যা বর্তমান বাংলাদেশের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রায় ৪ শতাংশের সমান। এই বিশাল অর্থ পাচারের জন্য তারা অন্তত ৪৭০টি কোম্পানির নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে, যেগুলো নয়টি দেশে ছড়িয়ে রয়েছে।

বাংলাদেশ ফিনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) প্রথমবারের মতো ১১৭টি দেশে আন্তর্জাতিক সম্পদ অনুসন্ধান চালিয়েছে, যা দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ও বিস্তৃত অনুসন্ধান। এটি ততদিনের সীমিত দেশসমূহ যেমন অস্ট্রেলিয়া, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, হংকং, থাইল্যান্ড ও সুইজারল্যান্ডের বাইরে গিয়েই হয়েছে।

এই অনুসন্ধানে সাইপ্রাস, আনটিগুয়া ও বারবুদা, ইতালি, তুরস্ক, জার্সি, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডস, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও আইল অফ ম্যানের মতো দেশের ফিনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট থেকে তথ্য পাওয়া গেছে। সাতটি দেশ থেকে কার্যকর গোয়েন্দা তথ্য পাওয়া গেছে, আর বাকি দুটি দেশের তথ্য জমা দেওয়া হচ্ছে।

ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডসে মোহাম্মদ সাইফুল আলম ও তার পরিবারের নামে ১৯টি কোম্পানি রয়েছে। এসব কোম্পানির বেশির ভাগই ২০১৮ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত, অর্থাৎ সি আলম গ্রুপের দ্রুত সম্প্রসারণের সময়কালে। এর মধ্যে একটি কোম্পানি ‘গ্রিনউইচ ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিমিটেড’ ২০২৪ সালের আগস্টে গঠিত, যা শেখ হাসিনার সরকারের পতনের কয়েক সপ্তাহ পর।

যুক্তরাজ্যের জার্সিতে সাইফুল আলম ও তার স্ত্রী ফারজানা পারভীন যৌথভাবে ছয়টি ট্রাস্টের মালিক, যা স্থানীয় ট্রাস্ট কোম্পানি পরিচালনা করে। এই ট্রাস্টগুলো তাদের দুইটি পাঁচ তারা হোটেলের মালিকানা দেয়, যার বাজার মূল্য প্রায় ২১০ মিলিয়ন ডলার।

তুরস্কে তার ভাই শাহিদুল আলম ও ওসমান গনির নামে অন্তত ১০টি ‘প্রিমিয়াম’ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট পাওয়া গেছে, যেখানে প্রচুর অর্থ জমা থাকার কথা মনে করা হচ্ছে।

সংযুক্ত আরব আমিরাতে বেলাল আহমেদ, সাইফুল আলমের জামাই, ছয়টি বিলাসবহুল ভিলার মালিক, যাদের মূল্য ৩৫০ হাজার থেকে ১.৮ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে। এছাড়াও তিনি দুটি জমির মালিক, যার মূল্য প্রায় ৪ মিলিয়ন ডলার।

আইল অফ ম্যান-এ সাইফুল আলমের ছেলে আশরাফুল আলম ২০২০ সালে ৭ মিলিয়ন ডলারের একটি বিলাসবহুল ভিলা পেয়েছেন, যা তার মা ফারজানা পারভীন থেকে উপহার হিসেবে দেওয়া হয়।

আন্তিগুয়া ও বারবুদার নাগরিকত্ব বিনিয়োগ প্রোগ্রামের মাধ্যমে বেলাল আহমেদ সেখানে নাগরিকত্ব নিয়েছেন। তিনি ১০০ হাজার ডলার জাতীয় উন্নয়ন তহবিলে দান করেছেন, যা কানাডার একটি ব্যাংক থেকে সরাসরি ট্রান্সফার করা হয়েছে।

এস আলমের ব্যবসায়িক আধিপত্য শুরু হয় বাংলাদেশের ইসলামী ব্যাংক ও সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার মাধ্যমে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে এই ব্যাংকগুলোতে রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক নিয়ন্ত্রণ বাড়ানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়। ২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারিতে সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার সমর্থনে ওই ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তা জোরপূর্বক সরিয়ে ফেলা হয়।

সেই বছর অক্টোবরেও সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডে (এসআইবিএল) এস আলম গ্রুপ ১৯টি প্রোক্সি কোম্পানির মাধ্যমে গোপনে প্রায় ৫০ শতাংশ শেয়ার অর্জন করে, যা ব্যাংকিং আইন লঙ্ঘন।

দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্তে প্রকাশ পায়, সাইফুল আলম ও তার সহযোগীরা জাল ঋণ ও বিনিয়োগ দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তদন্ত চলাকালে তাদের সম্পদ স্থানান্তর রোধে আদালত তাদের এবং পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করার নির্দেশ দেয়।

২০২৪ সালের আগস্টে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর, দুর্নীতি দমন কমিশন সাইফুল আলম ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে ১,৫৩৯ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের মামলা দায়ের করে। তাদের দুই ছেলে আহসানুল আলম ও আশরাফুল আলমের বিরুদ্ধে ইসলামি ব্যাংক থেকে প্রায় ২,২০০ কোটি টাকা দুর্নীতির মামলা চলছে।

শেয়ার করুন

Comments are closed.

এই ধরনের আরও নিউজ

© কপিরাইট ২০২৪-২০২৫ | সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: NagorikIT