বুধবার, ৩ জুলাই। বেলা ১১টা। রুয়েট সেন্ট্রাল লাইব্রেরির সামনে জড়ো হতে শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। কোনো ডাকে নয়, স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেন হাজারো শিক্ষার্থী। একে একে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা যোগ দেন সমাবেশে। শুরু হয় স্লোগান আর প্রতিবাদ।
কর্মসূচি থেকে বের হয় একটি মিছিল। মিছিলটি রুয়েটের মেইন গেট অতিক্রম করে তালাইমারি মোড়ে গিয়ে অবস্থান নেয়। মিছিলের সময় শুরু হয় তুমুল বৃষ্টি। বৃষ্টিতে ভিজে একাকার হলেও আন্দোলন থামেনি।
শিক্ষার্থীরা স্লোগান দিয়ে জানান দেন, তারা ন্যায্য দাবি আদায়ে পিছু হটবে না। আন্দোলনের পুরো সময় শিক্ষার্থীরা গণপরিবহন, জরুরি গাড়ি এবং অ্যাম্বুলেন্স চলাচলে কোনো বাধা দেননি। এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের চলাচলের দিকেও বিশেষ নজর রাখেন তারা। পরীক্ষার্থীদের যেন কোনো বিঘ্ন না হয়, সে বিষয়েও সক্রিয় ছিলেন সবাই। নির্ধারিত সময়ে কর্মসূচি শেষ করে পরীক্ষার্থীদের পথ উন্মুক্ত করেন তারা।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলেন, প্রকৌশল পেশায় এখন মেধাভিত্তিক নিয়োগ সময়ের দাবি। বছরের পর বছর ধরে কোটার নামে যে বৈষম্য চলে আসছে, তার অবসান চাই। ১০ম গ্রেড প্রকৌশলীদের অধিকার। এটা কোনো অনুরোধ নয়। পেশাগত মর্যাদা ও ভবিষ্যতের জন্য এই আন্দোলন।
বেশ কিছুদিন ধরে শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণভাবে এই দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন। তারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে স্মারকলিপি দিয়েছেন, করেছেন মিছিল। চালিয়েছেন সচেতনতামূলক প্রচারণা। বিতরণ করেছেন লিফলেট ও পোস্টার। আইনি পদক্ষেপও গ্রহণ করা হয়েছে। বিভিন্ন মহলকে সচেতন করার চেষ্টাও চলছে।
আজকের সমাবেশ থেকে শিক্ষার্থীরা আবারো দাবি তোলেন। ৯ম গ্রেডের সহকারী প্রকৌশলী বা সমমানের পদে পরীক্ষা ছাড়া কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। কোটার মাধ্যমে পদোন্নতি চলবে না। অন্য নামে সমমান পদ তৈরি করেও পদোন্নতি দেওয়া যাবে না। ১০ম গ্রেডে উপ-সহকারী প্রকৌশলী বা সমমানের পদ বিএসসি ও ডিপ্লোমা উভয় ডিগ্রিধারীদের জন্য পরীক্ষার মাধ্যমে উন্মুক্ত করতে হবে। আর ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বিএসসি ডিগ্রি ছাড়া কেউ ‘ইঞ্জিনিয়ার’ পদবি ব্যবহার করতে পারবে না। এজন্য আইন পাস ও গেজেট প্রকাশের দাবি জানান তারা।
শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনে রুয়েট প্রশাসন সব সময় সমর্থন জানিয়ে আসছে। আজকের কর্মসূচিতে সরাসরি উপস্থিত ছিলেন রুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. রবিউল ইসলাম সরকার। সঙ্গে ছিলেন পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ড. এইচ এম রাসেল। উপস্থিত ছিলেন যন্ত্রকৌশল বিভাগের প্রভাষক হাসিবুল হাসান হিমেল। তাঁরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন।
প্রসঙ্গত, রুয়েটের সাম্প্রতিক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ১০ম গ্রেডের পদ বিএসসি ও ডিপ্লোমা উভয় ডিগ্রিধারীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা এটিকে আন্দোলনের একটি প্রাথমিক সাফল্য বলে মনে করছেন।
আন্দোলনকারীরা বলেন, এই দাবি শুধু রুয়েটের নয়। এটা সমস্ত প্রকৌশলী সমাজের। প্রকৌশল পেশায় মেধার মূল্যায়ন নিশ্চিত করতে এই প্রতিবাদ। তাঁরা দেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনুসের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। বৈষম্য দূর করে প্রকৌশলী মর্যাদা সংরক্ষণে পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানান।
শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, এই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ৪ জুলাই ঢাকায় এবং ৫ জুলাই চট্টগ্রামে বিভাগীয় পর্যায়ের কর্মসূচি পালন করা হবে।