রমজান মাস মুসলমানদের জন্য বরকতময় একটি মাস। এ মাসে বেশি বেশি ইবাদত ও সৎকাজ করার সুযোগ থাকে। তাই রমজানের আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া উচিত, যাতে পুরো মাস সঠিকভাবে পালন করা যায়।
এখন অনেক এই মাসকে খাবার-দাবার, পান-পানীয়, মিষ্টি-মিষ্টান্ন, রাত জাগা ও স্যাটেলাইট চ্যানেল উপভোগ করার মৌসুম বানিয়ে ফেলেছে। বিভিন্ন হোটেল এর ইফতার পার্টি, সেহরী এর বিজ্ঞাপন চলছে। দোকান দোকানে আলোকসজ্জা করা হয়েছে। রমজান মাসের আগে থেকেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করে ব্যাবসায়ীরা। । অথচ রমজান মাসের তাৎপর্য অসীম। রমজান মাস মুসলমানদের জন্য একটি পবিত্র মাস, যেখানে রোজা, ইবাদত এবং সৎকর্মের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভের সুযোগ থাকে। এই বরকতময় মাসের আগে থেকেই মুসলিমগণ তাদের দৈনন্দিন জীবনে কিছু পরিবর্তন আনা শুরু করা প্রয়োজন।
একজন মুসলিম তাঁর দিন শুরু করবে ফজরের সালাতের আগে সেহেরী গ্রহণের মাধ্যমে। উত্তম হচ্ছে যদি রাতের শেষ সময় পর্যন্ত বিলম্ব করে সেহেরী গ্রহণ করা যায়।আযানের আগে তিনি ফজরের সালাতের জন্য প্রস্তুতি নিবেন। বাসা হতে ওজু করে আযানের আগেই মসজিদে যাবেন। মসজিদে প্রবেশ করে প্রথমে ‘তাহিয়্যাতুল মসজিদ’ দুই রাকাত সালাত আদায় করবেন। এরপর মুয়াজ্জিন আযান দেয়ার আগ পর্যন্ত বসে বসে দোয়াদরুদ, কুরআন তিলাওয়াত বা যিকির আযকারে মশগুল থাকবেন। আযান দিলে মুয়াজ্জিনের সাথে সাথে আযানের বাক্যগুলোর পুনরাবৃত্তি করবেন। আযান সমাপ্ত হওয়ার পর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে বর্ণিত দুআপাঠ করবেন। এরপর ফজরের দুই রাকাত সুন্নত নামায আদায় করবেন। তারপর ফরজ সালাত দাঁড়ানোর আগ পর্যন্ত যিকির, দুআ ও কুরআন তিলাওয়াতে মনোনিবেশ করবেন। “সালাতের জন্য অপেক্ষমাণ ব্যক্তি সালাতেই রয়েছেন”। [ বুখারী (৬৪৭) ও মুসলিম (৬৪৯)]
জামাতের সাথে সালাত আদায় শেষে, সালাম ফিরানোর পর তিনি শরিয়ত নির্দেশিত দুআসমূহ পাঠ করবেন। এরপর চাইলে সূর্যোদয় পর্যন্ত মসজিদে থেকে যিকির, কুরআন তিলাওয়াত ইত্যাদিতে ব্যস্ত থাকবেন। এটি করতে পারলে ভাল। ফজরের পর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এভাবে আমল করতেন। এরপর সূর্যোদয়ের পর সূর্য কিছুটা উপরে উঠলে এবং উদয়নের পর ১৫ মিনিটের মত অতিক্রান্ত হলে তিনি চাইলে ইশরাক এবং সালাতুদ্ দোহা তথা চাশ্তের নামায (সর্বনিম্ন দুই রাকাত) আদায় করবেন। আর চাইলে কিছুটা দেরী করে চাশ্তের নামায পড়ার উত্তম সময়ে নামাযটি পড়তে পারেন। উত্তম সময় হলো- সূর্য আরো উপরে উঠলে এবং রোদের প্রখরতা বাড়লে। [মুসলিম (৭৪৮),তিরমিযী (৫৮৬)]
এরপর বাসায় এসে যদি সময় থাকে ক্বোরআন তেওয়াত বা মাসনুন দোয়া পড়তে পারেন বা কিছু সময় ঘুমাতে চাইলে ঘুমিয়ে নিতে পারেন। এরপর তিনি তার কর্মস্থলে যাবেন। যোহরের নামাযের ওয়াক্ত নিকটে এলে যথাসম্ভব শীঘ্রই আযানের আগে অথবা আযানের পরপরই মসজিদে হাযির হবেন। নামাযের জন্য আগে থেকেই প্রস্তুত হয়ে থাকবেন। এরপর তিনি যোহরের ৪ রাকাত সুন্নত নামায আদায় করবেন। এরপর কুরআন তিলাওয়াতে মনোনিবেশ করবেন যতক্ষণ পর্যন্ত না জামাত শুরু হয়। এরপর জামাতের সাথে সালাত আদায় করবেন। জামাতের পর যোহরের ২ রাকাত সুন্নত নামায আদায় করবেন। সালাত আদায় শেষে তার ডিউটির বাকী অংশ সম্পন্ন করবেন। ডিউটি শেষে তিনি বাসায় ফিরে আসবেন। যদি আসরের সালাতের পূর্বে লম্বা সময় বাকি থাকে তাহলে কিছু সময় বিশ্রাম নিবেন। আর যদি ঘুমানোর মত বেশি সময় বাকি না থাকে এবং ঘুমিয়ে পড়লে আসরের সালাত ছুটে যাওয়ার আশংকা করেন তাহলে নামাযের ওয়াক্ত হওয়া পর্যন্ত উপযুক্ত কোন কাজে ব্যস্ত থাকবেন। যেমন– বাসার লোকজনের জন্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রী কিনতেবাজারে যাওয়া। নতুবা কর্মস্থল থেকে ফিরে সোজা মসজিদে চলে যাবেন এবং আসরের সালাত পর্যন্ত মসজিদে অবস্থান করবেন। আসরের পর একজন মানুষ তার নিজের অবস্থা বিবেচনা করবে। তিনি যদি মসজিদে বসে কুরআন তিলাওয়াতে নিয়োজিত থাকার মত শক্তি পান তাহলে এটা এক মহান সুযোগ। আর যদি তিনি ক্লান্তি বোধ করেন তবে এ সময়ে বিশ্রাম নিবেন; যাতে রাতে তারাবীর নামাযের জন্য প্রস্তুতি নিতে পারেন। মাগরিবের আযানের আগে তিনি ইফতারের জন্য প্রস্তুতি নিবেন। এই মুহূর্তগুলোকে তিনি যেকোন ভালো কাজে ব্যয় করবেন। যেমন- কুরআন তিলাওয়াত করা, দুআ করা, অথবা পরিবার ও সন্তানদের নিয়ে ভাল কোন কথা আলোচনা করা। এ সময়ের সবচেয়ে ভাল কাজ হল – রোযাদারদেরইফতার করানোতে অংশ নেওয়া। হয়তো তাদের জন্য খাবার কিনে দেয়ার মাধ্যমে অথবা তা বিতরণ করার মাধ্যমে অথবা এর ব্যবস্থাপনা করার মাধ্যমে। এই আমলের মধ্যে অপরিসীম আনন্দ রয়েছে। এটা তিনিই জানেন যিনি নিজে এ আমল করেছেন।
ইফতারের পর তিনি জামাতের সাথে সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে মসজিদে যাবেন। এরপর দুই রাকাত মাগরিবের সুন্নত সালাত আদায় করবেন। বাসায় ফিরে তিনি প্রয়োজনমাফিক খাদ্যগ্রহণ করবেন। অতিরিক্ত খাবেন না। এরপর এই সময়কে তার নিজের জন্য ও তার পরিবারের জন্য কল্যাণকর কোন পন্থায় ব্যয় করবেন।যেমন – কোন ইসলামী, বই পড়া, দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োজনীয় হুকুম আহকামের কোন বই পড়া, পরিবার এর সাথে সময় দেয়া, বৈধ কোন আলাপ আলোচনায় রত থাকা অথবা অন্য যে কোন আকর্ষণীয় কল্যাণকর কাজে ব্যয় করা। তবে মিডিয়ায় সম্প্রচারিত হারাম অনুষ্ঠান থেকে পরিবারের সদস্যদেরকে বিরত রাখা প্রয়োজন। কারণ চ্যানেলগুলোরজন্য এটি পিক আওয়ার হিসেবে বিবেচিত হয়। তাই আপনি দেখবেন এ সময় তারা সবচেয়ে বেশি আকর্ষণীয় অনুষ্ঠান সম্প্রচার করে। যে অনুষ্ঠানগুলো আক্বীদা বিনষ্টকারী ও আখলাক বিনষ্টকারী বিষয়াদিতে ভরপুর থাকে।
প্রিয় ভাই, এসব অনুষ্ঠান থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা করুন এবং আপনার অধীনস্থদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করুন। যাদের ব্যাপারে কিয়ামাতের দিন আপনি প্রশ্নের সম্মুখীন হবেন। সেদিনের প্রশ্নের জবাব দেয়ার জন্য এখনই প্রস্তুতি গ্রহণ করুন। এরপর এশার সালাতের জন্য প্রস্তুতি নিন এবং মসজিদের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হোন। মসজিদে গিয়ে কুরআন তিলাওয়াতে মশগুল হোন। অথবা মসজিদে কোন ইলমী আলোচনা অনুষ্ঠান থাকলে তা শুনুন। এরপর এশার সালাত আদায় করুন। অতঃপর ২ রাকাত এশার সুন্নত নামায আদায় করুন। এরপর ইমামের পিছনে তারাবির নামায খুশূ (আল্লাহর ভয়), তাদাব্বুর (অনুধাবন), তাফাক্কুর (চিন্তাভাবনা)এর সাথে আদায় করুন। ইমাম নামায শেষ করার আগে আপনি নামায ছেড়ে চলে যাবেন না। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
“ইমাম নামায শেষ করা পর্যন্ত যে ব্যক্তি তাঁর সাথে নামায আদায় করবে তার জন্য পুরো রাত নামায পড়ার সওয়াব লিখে দেয়া হবে।”[হাদিসটি আবু দাউদ (নং ১৩৭০) এবং অন্যান্য মুহাদ্দিসগণ সংকলন করেছেন।আলবানী সালাতুত্ তারাবীহ অধ্যায়ে হাদিসটিকে সহীহ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন]
সালাতুত্ তারাবীর পর আপনি আপনার নিজস্ব ব্যতিব্যস্ততার সাথে সামঞ্জস্যশীল প্রোগ্রাম তৈরি করে নিন। এক্ষেত্রে নিম্নলিখিত বিষয়গুলোর প্রতি লক্ষ্য রাখবেন:
– সমস্ত হারাম থেকে এবং হারামের আহ্বায়ক বিষয়বস্তু থেকে বিরত থাকুন।
– আপনার বাসার সদস্যদেরকে হারাম থেকে ও হারামের যাবতীয় উপকরণ থেকে কৌশলে বিরত রাখুন। যেমন–তাদের জন্য বিশেষ কোন প্রোগ্রাম তৈরি করুন। অথবা তাদের নিয়ে শরিয়ত অনুমোদিত স্থানে ঘুরতে বের হোন। তাদেরকে অসৎসঙ্গ থেকে দূরে রাখুন। তাদের জন্য সৎ সাহচর্যের অনুসন্ধান করুন।
– কম ফজিলতপূর্ণ বিষয়ের পরিবর্তে বেশি ফজিলতপূর্ণ আমলে মশগুল হওয়া।
আগে আগে বিছানায় যেতে চেষ্টা করুন। ইসলামী শরিয়ত যেসব কথা ও কাজকে ঘুমের আদব হিসেবে নির্ধারণ করেছে সেগুলো পালনে যত্নবান হবেন। ঘুমের আগে যদি কিছু কুরআন তেলাওয়াত বা ভাল কোন বইয়ের কিছু অংশ পড়তে পারেন তবে তা ভাল। বিশেষ করে আপনি যদি কুরআন থেকে আপনার দৈনন্দিন পাঠ্য (ওয়াজীফাহ্) শেষ না-করে থাকেন তবে তা সম্পন্ন না করে ঘুমাবেন না।এরপর সেহেরীর আগে যথেষ্ট সময় নিয়ে ঘুম থেকে উঠুন। যাতে দুআতে ব্যস্ত হতে পারেন। কারণ এই সময় – রাতের শেষ তৃতীয়াংশ – আল্লাহ তা‘আলা দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করে থাকেন। আল্লাহ তাআলা এ সময়ে ক্ষমা প্রার্থনাকারীদের প্রশংসা করেছেন। এ সময়ে দুআকারীদের দুআ কবুলের এবং তওবাকারীদের তওবা কবুলের ওয়াদা করেছেন। তাই এই মহা সুযোগটি আপনার হাতছাড়া করা উচিত হবে না।
জুমাবার সপ্তাহের দিনগুলোর মধ্যে সর্বোত্তম। তাই এই দিনের ‘ইবাদত ও আনুগত্যের জন্য বিশেষপ্রোগ্রাম থাকা উচিত। এক্ষেত্রে নিম্নের বিষয়গুলো খেয়াল রাখা দরকার :
# জুমার সালাতে উপস্থিত হওয়ার জন্য আগে আগে বের হওয়া।
# আসরের সালাতের পর মসজিদে অবস্থান করা এবং এ দিনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তিলাওয়াত ও দুআতে ব্যস্ত থাকা। কারণ এ সময়ে দুআ কবুল হওয়ার আশা করা হয়।
# সপ্তাহের মাঝে যে কাজগুলো সম্পন্ন করতে পারেননি তা সম্পন্ন করতে এই দিনকে একটি সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করুন। যেমন কুরআনের সাপ্তাহিক পাঠ্য (ওয়াজীফাহ) বা কোন বই পাঠ অথবা ক্যাসেট শোনা অথবা এ জাতীয় কোন ভাল কাজের কিছু অসম্পন্ন থাকলে এদিনে তা সম্পন্ন করুন।
রমজানের শেষ দশকে আছে লাইলাতুল কদর (ভাগ্য রজনী)। যে রাত হাজার মাস থেকে উত্তম। তাই এই দশকে মসজিদে ই‘তিকাফ করার বিধান এসেছে। লাইলাতুল ক্বদর পাওয়ার জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এভাবে ইতিকাফ করেছেন। সুতরাং যার ইতিকাফ করার সুযোগ রয়েছে তার জানা উচিত এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে তার জন্য এক মহান করুণা। আর যার পুরো দশদিন ইতিকাফ করার সুযোগ নেই তিনি যে কয়দিন পারেন ইতিকাফ করতে পারেন। আর যার একেবারেই ইতিকাফ করার সুযোগ নেই তিনি যেন এ রাত্রিগুলোতে ইবাদত ও আনুগত্যের মাধ্যমে কাটাতে সচেষ্ট হন। যেমন কুরআন তিলাওয়াত করা, যিকির করা, দু‘আ’ করা। রাতজেগে এসব আমল করার জন্য তিনি যেন দিনেরবেলা বিশ্রাম নিয়ে প্রস্তুতি গ্রহণ করেন।
আপনি প্রতিদিনের একটি চেকলিস্ট তৈরী করতে পারেন। যাতে করে আপনার কোন আমল মিস না হয়। “ষোলো” এর সৌজন্য একটি চেকলিস্ট দেয়া হল।
রমাজানের প্রতিদিনের চেকলিস্ট।
লক্ষণীয় কিছু বিষয় :
# এই রুটিন একটি প্রস্তাবিত রুটিন। এটি একটি পরিবর্তনযোগ্য রুটিন। যে কেউ তার ব্যতিব্যস্ততার আলোকে এটি পরিবর্তন করে নিতে পারেন।
# এই রুটিনে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছ থেকে প্রমাণিত সুন্নতসমূহ যথাযথভাবে পালনের প্রতি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এর মানে এই নয় যে, এতে উল্লেখিত সবকিছুই ওয়াজিব বা ফরজ। বরং এতে অনেক সুন্নাহ ও মুস্তাহাব্ব কাজ রয়েছে।
# আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় হল সে আমল যা নিয়মিত করা হয় – তা অল্প হলেও। রমজান মাসের শুরুতে মানুষ আনুগত্য ও ইবাদতের খুব যোশ নিয়ে সক্রিয় থাকে। কিছুদিন পর নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। তাই এ ব্যাপারে সাবধান থাকুন এবং এই মহান মাসে পালনকৃত সমস্ত কাজ নিয়মিতভাবে ধরে রাখতে সচেষ্ট হউন।
# একজন মুসলিমের উচিত এই মুবারক মাসে তার সময়ের সঠিক ব্যবস্থাপনায় সচেষ্ট হওয়া। যাতে করে কল্যাণ ও ভাল কাজে এগিয়ে যাওয়ার বড় বড় সুযোগ তার হাতছাড়া হয়ে না যায়। যেমন– রমজান মাস শুরু হওয়ার আগেই পরিবারের সদস্যদের প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী কিনে দিতে সচেষ্ট হওয়া। একইভাবে দৈনিক প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি এমন সময়ে কিনতে সচেষ্ট হওয়া যখন বাজারে ভিড় থাকে না।
আরেকটি উদাহরণ হল: ব্যক্তিগত ও পারিবারিক দেখা সাক্ষাতের জন্য এমন রুটিন করে নেয়া যাতে ইবাদতে বিঘ্ন না ঘটে।
# এই মুবারক মাসে বেশি বেশি ইবাদত করা ও আল্লাহর নৈকট্য লাভকে আপনার প্রথম ও প্রধান লক্ষ্য হিসেবে নির্ধারণকরুন।
# সালাতের নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই মসজিদে হাযির হওয়ার ব্যাপারে মাসের শুরুতেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুন। ক্বোরআন নাযিল এর এ মাসে আল্লাহ তাআলার কিতাব – ক্বোরআন তিলাওয়াত খতম (সমাপ্ত) করার সিদ্ধান্ত নিন। এই মহান মাসে নিয়মিত ক্বিয়ামুল লাইল পালন করার সংকল্প করুন। স্বীয় সম্পদ থেকে সাধ্যানুপাতে দান করার ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হউন।
# এই রমজান মাসে আল্লাহ তাআলার কিতাবের সাথে সম্পর্ক মজবুত করার সুযোগ গ্রহণ করুন। নিম্নোক্ত পদ্ধতিগুলোর মাধ্যমে হতে পারে:
-সঠিক উচ্চারণে কুরআন তিলাওয়াত করা। ভাল একজন কুরআনের শিক্ষকের (ক্বারীর) নিকট কুরআন পড়া সংশোধন করে নেয়া। আর তা সম্ভব না হলে সুকন্ঠী ক্বারীগণের তিলাওয়াতের শোনা।
-আল্লাহ আপনাকে যতটুকু কুরআন হিফ্জ করার তাওফিক দিয়েছেন তা রিভিশন দেওয়া এবং হিফ্জ করার পরিমাণ বাড়িয়ে দেওয়া।
-কুরআনের আয়াতের তাফসীর পাঠ করা।এটা হতে পারে যে আয়াত বুঝতে আপনার সমস্যা হয় সে আয়াতের তাফসীর নির্ভরযোগ্য তাফসীর গ্রন্থগুলো (যেমন– তাফসীরে তাওযীহুল ক্বোরআন, তাফসীরে ইবনে কাছীর ) থেকে সেটা জেনে নেওয়া। অথবা নির্দিষ্ট কোন তাফসীর গ্রন্থ থেকে নিয়মিত পড়ার জন্য রুটিন তৈরি করে নেয়া। শুরু থেকে পড়তে পারেন বা প্রথমে আমপারা (পারা-৩০), তারপর তাবারাকা পারা (পারা-২৯) এভাবেও পড়তে থাকবেন।
-আল্লাহ তাআলা ক্বোরআনে যে আদেশাবলী ও নিষেধ পাওয়া যায় তা বাস্তবায়নে যত্নশীল হওয়া।
আমরা দু‘আ’ করছি যাতে আল্লাহতাআলা সিয়াম, ক্বিয়াম সম্পন্ন করার তাওফিক দানের মাধ্যমে আমাদের উপর রমজান মাস পাওয়ার নেয়ামত পূর্ণ করে দেন। আমাদের পক্ষ থেকে তা কবুল করে নেন এবং আমাদের ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলো মাফ করে দেন।