জুলাই আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী এবং তুরাগ থানা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মাওলানা মামুনুর রশীদকে পাঁচ দিন নিখোঁজ থাকার পর রাজধানীর পূর্বাচল ১ নম্বর সেক্টরের একটি মসজিদ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি গত ২২ সেপ্টেম্বর সকালে উত্তরা এলাকায় তার বাসা থেকে বের হওয়ার পর আর বাড়ি ফেরেননি। নিখোঁজের সময়ে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনও বন্ধ ছিল।
নিখোঁজের ঘটনায় পরিবার ও সহকর্মীদের মধ্যে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি হয়। পরিবারের পক্ষ থেকে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয় এবং ন্যাশনাল যুবশক্তি সংবাদ সম্মেলনে এই ঘটনাকে সুপরিকল্পিত অপচেষ্টা হিসেবে উল্লেখ করে অভিযোগ তোলে, এতে গোপন মহল জড়িত থাকতে পারে। এনসিপির যুব সংগঠন জানিয়েছে, মামুনুর রশীদকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে গুম বা অপহরণের শিকার করা হয়েছে এবং এ ধরনের ঘটনা সমাজ ও রাজনৈতিক কর্মীদের ভয় দেখানোর জন্য পরিকল্পিত।
শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) দুপুর ২টার দিকে পুলিশ খবর পেয়ে পূর্বাচল ১ নম্বর সেক্টরের জামে মসজিদে পৌঁছে তাঁকে অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করে। উদ্ধারকারী তুরাগ থানার কর্মকর্তারা জানান, মসজিদ থেকে তাকে উদ্ধার করার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত চিকিৎসার জন্য কুয়েত মৈত্রীর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তুরাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, “খবর পাওয়ার পরপরই মসজিদে পৌঁছে তাকে উদ্ধার করা হয়। বর্তমানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছে এবং পরিবারের সদস্যরা হাসপাতালে উপস্থিত রয়েছেন।”
পুলিশ জানিয়েছে, মামুনুর রশীদ সুস্থ হলে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে, যাতে জানা যায় তিনি কীভাবে এবং কোন পরিস্থিতিতে নিখোঁজ ছিলেন। নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছিল, তবে এখন পর্যন্ত কোনো অপহরণের মামলা দায়ের করা হয়নি। পুলিশ জানিয়েছে, বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে।
ঘটনার প্রেক্ষাপট বিবেচনায় মানবাধিকার সংগঠন এবং নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকেও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। তারা বলেন, রাজনৈতিক কর্মী বা আন্দোলনকারীদের বারবার নিখোঁজ হওয়া গণতান্ত্রিক পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ। নাগরিক ও আইনশৃঙ্খলা কর্তৃপক্ষ উভয় পক্ষই ঘটনার দ্রুত সুষ্ঠু সমাধানের জন্য কাজ করছে।
পরিবার ও সহকর্মীরা জানিয়েছেন, মামুনুর রশীদকে উদ্ধার করার পর স্বস্তি মিললেও তার নিখোঁজ হওয়ার কারণ এবং যে পরিস্থিতিতে তিনি নিখোঁজ ছিলেন তা স্পষ্ট নয়। এই ঘটনার তদন্তের ফলাফলের দিকে রাজনৈতিক ও সামাজিক মহলও নজর রাখছে।