খাগড়াছড়িতে ধর্ষণ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাম্প্রতিক সহিংসতার জন্য ইউপিডিএফকে (ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট) দায়ী করেছেন সেনা রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হাসান মাহমুদ। মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সকালে খাগড়াছড়ি সেনানিবাসে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, সংগঠনটি সাধারণ পাহাড়ি নারী ও ছাত্রদের সামনে দিয়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগানোর চেষ্টা করছে এবং বহিরাগত সন্ত্রাসীদের দিয়ে দেশীয় ও স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রে গুলি চালানো হচ্ছে। তিনি অভিযোগ করেন, পার্বত্য চট্টগ্রামকে অস্থিতিশীল করার এই প্রচেষ্টা একটি বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের অংশ, যার প্রমাণাদি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে রয়েছে।
২৩ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি সদরে এক স্কুলছাত্রী ধর্ষণের অভিযোগের পর “জুম্ম ছাত্র-জনতা” ব্যানারে অনির্দিষ্টকালের সড়ক অবরোধ ডাকা হয়। এ কর্মসূচি থেকে ২৮ সেপ্টেম্বর গুইমারায় ব্যাপক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষে তিনজন পাহাড়ি নিহত হন, আহত হন সেনা কর্মকর্তাসহ বহু পাহাড়ি ও বাঙালি। গুইমারার রামসু বাজারসহ একাধিক ঘরবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ করা হয়। ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন এখন খোলা আকাশের নিচে দিন কাটাচ্ছেন।
চতুর্থ দিনের মতো অবরোধ চলায় খাগড়াছড়ি-চট্টগ্রাম ও খাগড়াছড়ি-ঢাকা মহাসড়ক বন্ধ রয়েছে। অভ্যন্তরীণ সড়ক যোগাযোগও অচল হয়ে পড়েছে। ফলে শতাধিক ট্রাক আটকে থেকে ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়েছেন পরিবহন শ্রমিকরা। শহর ও আশপাশের এলাকায় দোকানপাট বন্ধ, জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। সর্বত্র থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
নিহত তিনজনের মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে খাগড়াছড়ি পৌরসভা, সদর উপজেলা ও গুইমারা উপজেলায় ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে। সেনা, পুলিশ ও বিজিবি টহল অব্যাহত রেখেছে।
এদিকে ইউপিডিএফ মুখপাত্র অংগ্য মারমা সেনাবাহিনীর অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, তারা কোনো সহিংসতার সঙ্গে জড়িত নন। বরং সেনারা সাধারণ পাহাড়ি জনগণের ওপর হামলা চালিয়েছে বলে দাবি করেন তিনি এবং জাতিসংঘ অংশগ্রহণে তদন্ত দাবি করেন। অন্যদিকে আন্দোলনকারী সংগঠনের নেতারা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে ১৪৪ ধারা প্রত্যাহারসহ আট দফা দাবি পেশ করেছেন, তবে সমঝোতায় পৌঁছানো যায়নি।
রিজিয়ন কমান্ডার পরিস্থিতি শান্ত রাখতে ইউপিডিএফকে অবরোধ প্রত্যাহারের আহ্বান জানান। তিনি আশ্বাস দেন, দুর্গাপূজার মতো গুরুত্বপূর্ণ উৎসবে সবাই যেন নিরাপদে অংশ নিতে পারে, সে ব্যবস্থা সেনাবাহিনী করবে।