বিশিষ্ট ইসলামিক ব্যক্তিত্ব আব্দুল হাই মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ একটি ফেসবুক পোস্টে নিজের জীবনের এক গভীর শিক্ষা শেয়ার করেছেন। তিনি জানান, কেনিয়ার মুম্বাসায় একটি ইয়াতিমখানা মাদরাসায় যাওয়ার সময় তিনি মাত্র ৬৪ জন ছাত্রের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। সেখানে শিশুদের মাসিক খাবারের পুরো খরচ বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় ৬০ হাজার টাকা। এই তথ্য জানার পরই তাঁর বুক ধক করে উঠেছিল।
তিনি বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন, ইয়াতিমখানার দুপুরের খাবার সীমিত, সাধারণত দুই-তিন স্লাইস পাউরুটি আর পানি। রাতে কখনো ভুট্টার আটার ঘাটি, কখনো শুকনো পাউরুটি বা চিনির পানি বা রঙ চা। অনেক দিনই এমন খাবারও পুরোপুরি পাওয়া যায় না। তবুও, শিশুরা যা আছে তাই খেয়ে আল্লাহর শোকর আদায় করে।
রাতের এশার সালাত আদায় করতে তিনি মুম্বাসার আরেকটি প্রতিষ্ঠান “মারকাজে ইমাম শাফেয়ী রহ.”-এ গিয়েছিলেন। সেখানে রাতের খাবারের দৃশ্য দেখে আব্দুল হাই মোহাম্মদ সাইফুল্লাহর চোখ ভিজে যায়। তিনি উল্লেখ করেন, আমাদের দেশের সবচেয়ে অভাবী মানুষের খাবারও এই কিশোরদের কাছে যেন বিলাসিতার মতো। উস্তাদের অনুমতি ছাড়া ছবি বা ভিডিও করা নিষেধ থাকলেও, ছাত্ররা তিলাওয়াত শুনতে দাড়িয়ে থাকে।
তিনি দেশের অভিজ্ঞতার সঙ্গে তুলনা করেছেন। হাজারো স্মার্টফোন, দামী জামাকাপড় ও বিলাসী খাবারের মাঝে অনেক সময় আমরা খাবার অপচয় করি, অথচ মুম্বাসার কিশোর হাফেজরা শুকনো এক টুকরো রুটির জন্যও আনন্দে আল্লাহকে ধন্যবাদ জানায়। আব্দুল হাই মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ বলেন, আমাদের শিশুদের জন্য আমরা চকোলেট, পিৎজা, বিরিয়ানি, দামী স্কুলের ব্যবস্থা করি, কিন্তু দ্বীনি শিক্ষা নিয়ে উদাসীন থাকি। সেখানে শিশুদের চোখে দেখা যায় দুনিয়ার নির্লিপ্ততা আর মুখে কৃতজ্ঞতার হাসি।
মুম্বাসা থেকে তিনি একটি বড় শিক্ষা নিয়েছেন: আরাম নয়, কৃতজ্ঞতাই প্রকৃত সুখ। দেখানো নয়, সংযম আর দানই আসল মহত্ত্ব। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, আমাদের জীবনে কতবার আমরা শুধুমাত্র পানি আর পাউরুটি খেয়ে দিন কাটাই?
এই অভিজ্ঞতা আব্দুল হাই মোহাম্মদ সাইফুল্লাহর চোখে এক টুকরো রুটির মূল্য এবং সংযম ও কৃতজ্ঞতার বাস্তব শিক্ষা ফুটিয়ে তোলে, যা আমাদের সমাজের মানসিকতা ও জীবনধারার প্রতিফলন ঘটায়।