আকাশপথে আঘাত, পাতালে প্রতিরোধ: ইরান-যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল সংঘাতের এক বিপজ্জনক সন্ধিক্ষণ - দৈনিক সাবাস বাংলাদেশ
নোটিশ:
শিরোনামঃ
জাবিতে প্রাণ রসায়ন বিভাগের নবীন শিক্ষার্থীদের র‍্যাগিং বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যারিয়ার ক্লাবের নতুন কমিটি ঘোষণা বিদেশে নতুন আগত বাংলাদেশিদের প্রতি অমানবিক আচরণ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন ফজলে এলাহী সাবেক সেনাকর্মকর্তার জবানিতে পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর প্রকৃত চিত্র কাতার–সৌদি মধ্যস্থতায় পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘাত ‘আপাতত স্থগিত’ করল আফগানিস্তান পাকিস্তান আবারও আফগান সীমান্ত অতিক্রম করার চেষ্টা করলে আফগান বাহিনী জবাব দিতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত বালিয়াকান্দিতে টাইফয়েড প্রতিরোধে টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্সের ক্লাস করতে এসে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা আটক কুবির তিন শিক্ষার্থী নোবিপ্রবি মডেল ইউনাইটেড নেশনস কনফারেন্সে পুরস্কার জয়ী রাজবাড়ীর কালুখালীর গুণী সংগীতশিল্পী জাহিদ হাসানের মৃত্যু

আকাশপথে আঘাত, পাতালে প্রতিরোধ: ইরান-যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল সংঘাতের এক বিপজ্জনক সন্ধিক্ষণ

গাজী মাখদুম হোসাইন, আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  • আপডেট সময় রবিবার, ২২ জুন, ২০২৫
  • ১৫২ বার দেখা হয়েছে
B2_stealth_bomber

যুক্তরাষ্ট্র ফের আকাশপথে হামলার পথ বেছে নিয়েছে। লক্ষ্য ছিল ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো। এই অভিযানে যুক্ত হয়েছে ইসরায়েলও, যার কৌশলগত সমর্থন ও গোয়েন্দা সহায়তা ছিল অনস্বীকার্য। নাতাঞ্জ, ফরডো ও ইস্ফাহানের মতো উচ্চ-সংবেদনশীল স্থাপনায় হামলা মধ্যপ্রাচ্যের আকাশে নতুন করে বারুদের গন্ধ ছড়িয়ে দিয়েছে।

তবে এই হামলার প্রকৃত উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (IAEA) নিশ্চিত করেছে—হামলার পর এসব স্থাপনায় বিকিরণ মাত্রা বাড়েনি, অর্থাৎ ইরানের নিউক্লিয়ার অবকাঠামো বাস্তবিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। এই তথ্য থেকেই স্পষ্ট, এই হামলার উদ্দেশ্য ছিল প্রতীকী—একটি রাজনৈতিক বার্তা দেওয়া, ইরানকে “সতর্ক করা”। বাস্তব সামরিক সুফল ছিল প্রায় শূন্যের কোঠায়।

B-2 স্টিলথ বোম্বার

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আধুনিক যুগে পারমাণবিক কর্মসূচির জন্য বিশাল পরিকাঠামোর প্রয়োজন পড়ে না। ইরান বহু আগেই তাদের কার্যক্রম ভূগর্ভস্থ ও ছড়িয়ে-ছিটিয়ে গড়ে তুলেছে। ওপেন ফ্যাসিলিটিতে আঘাত হেনে তাই যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল আসলে কেবল একটি ইঙ্গিত দেওয়ার চেষ্টা করেছে—তাদের নজরদারি চলছে। কিন্তু এই “ইঙ্গিত” নিজেই এক উত্তেজনাপূর্ণ প্রশ্ন উত্থাপন করেছে: ইরান কেন পারমাণবিক অস্ত্র চায়?

প্রতিরক্ষার যুক্তি এখন আগের চেয়ে আরও জোরালো হয়েছে। যখন একাধিক রাষ্ট্র একসঙ্গে হামলা চালায়, তখন একটি কার্যকর প্রতিরোধ ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা নতুন করে উঠে আসে। ইরান মনে করছে, কেবল কূটনীতি নয়, বাস্তব সক্ষমতা ছাড়া তাদের সার্বভৌমত্ব রক্ষা সম্ভব নয়।

হামলার কৌশলগত দিক বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়—যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল আকাশপথে আঘাত হানলেও ইরানের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মূলত পাতালে। গাজায় হামাসের টানেল যেমন ইসরায়েলের গোয়েন্দা ও সামরিক শক্তিকে অক্ষম করে রেখেছে, তেমনি ইরানের ভূগর্ভস্থ কমপ্লেক্সগুলোর অবস্থান, নকশা ও সক্ষমতা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এক রহস্যঘেরা অজানা। এইসব স্থাপনায় ঢুকতে শুধু বোমা নয়, প্রয়োজন গভীর তথ্য, প্রযুক্তি ও দীর্ঘমেয়াদি প্রস্তুতি—যা বর্তমান হামলায় অনুপস্থিত।

এই হামলা আরও এক রাজনৈতিক বাস্তবতাকে সামনে এনেছে। ট্রাম্প প্রশাসন হয়তো নির্বাচনী বছরকে সামনে রেখে একটি “জয়” দেখাতে চেয়েছিল। কিন্তু এমন অর্ধেক-সফল অভিযানে বিরূপ প্রতিক্রিয়াই বেশি আসছে। ইতোমধ্যে কংগ্রেস ও প্রশাসনের অভ্যন্তরে বিভাজন স্পষ্ট। যদি সংঘাত দীর্ঘায়িত হয়, তবে এই হামলা প্রেসিডেন্টের জন্য বুমেরাং হয়ে দাঁড়াতে পারে।

অন্যদিকে, ইরানের প্রতিক্রিয়া এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। ধারণা করা হচ্ছে, ইসরায়েল নয়, বরং মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটিগুলোকেই প্রথম লক্ষ্য করতে পারে তেহরান। পারস্য উপসাগর, রেড সি এবং হুথিদের সহযোগিতায় সমুদ্রপথেও অস্থিরতা সৃষ্টি করার ক্ষমতা রয়েছে ইরানের।

এই প্রেক্ষাপটে রাশিয়ার ভূমিকা ক্রমেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। ইউক্রেন যুদ্ধের সময় ইরান রাশিয়াকে ড্রোন ও অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করেছিল। এখন সেই ঋণ শোধ করার পালা পুতিনের। কেবল বিবৃতি নয়, রাশিয়ার পক্ষ থেকে বাস্তব সহায়তা আসতে পারে—বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন জোট ও মেরুকরণের ইঙ্গিত দিচ্ছে এমন সম্ভাবনা।

এই সংঘাত কেবল মধ্যপ্রাচ্যকেন্দ্রিক নয়—এর অভিঘাত পড়বে বৈশ্বিক অর্থনীতিতেও। তেলের দাম বাড়বে, বাণিজ্যপথ অনিরাপদ হবে, আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে নতুন বিভাজন সৃষ্টি হবে। চীন, রাশিয়া ও কিছু আরব দেশ একসঙ্গে যদি যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল অক্ষের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়, তবে একটি নতুন বৈশ্বিক ভারসাম্যের সূচনা হতে পারে।

আজকের এই আঘাত এক নতুন যুগের পূর্বাভাস। এটি কেবল হামলার দিন নয়—এটি প্রতিরোধের দিন, ভূরাজনীতির পুনর্গঠনের দিন। মধ্যপ্রাচ্যের আকাশে বোমা পড়লেও, ইতিহাসের পাতায় লেখা হচ্ছে এক নতুন শক্তির উত্থানের গল্প।

শেয়ার করুন

Comments are closed.

এই ধরনের আরও নিউজ

© কপিরাইট ২০২৪-২০২৫ | সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: NagorikIT