মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বুধবার একটি নির্বাহী আদেশ জারি করে রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনার কারণে ভারতের পণ্যের উপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন।
এই নতুন শুল্ক হার কার্যকর হলে, যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের রপ্তানি পণ্যের মোট শুল্ক হার বেড়ে ৫০ শতাংশে পৌঁছাবে — যা আমেরিকার আরোপিত শুল্কগুলোর মধ্যে অন্যতম সর্বোচ্চ।নির্বাহী আদেশে বলা হয়েছে, নতুন শুল্ক হার আদেশ জারির ২১ দিন পর থেকে কার্যকর হবে।ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বুধবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, রাশিয়া থেকে আমদানি নিয়ে নয়াদিল্লি আগেই তার অবস্থান পরিষ্কার করেছে এবং নতুন শুল্ককে “অন্যায়, অযৌক্তিক ও অগ্রহণযোগ্য” বলে অভিহিত করেছে।বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “যেসব পদক্ষেপ বহু দেশই তাদের জাতীয় স্বার্থে নিচ্ছে, তার জন্য কেবলমাত্র ভারতকে লক্ষ্য করে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করাটা অত্যন্ত দুঃখজনক।”এর আগে ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন যে, তিনি শুল্ক বাড়াবেন, কারণ ভারতের কর্মকর্তারা “রুশ যুদ্ধযন্ত্রের কারণে ইউক্রেনে কত মানুষ মারা যাচ্ছে, তা নিয়ে কিছুই পরোয়া করছেন না।”হোয়াইট হাউস বুধবার জানায়, “রাশিয়ার কর্মকাণ্ড যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা ও পররাষ্ট্রনীতির জন্য চলমান হুমকি তৈরি করেছে এবং এই জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলায় আরও কঠোর পদক্ষেপ প্রয়োজন।”তারা আরও বলে, “ভারত রাশিয়ার তেল আমদানি ও পরবর্তীতে তা পুনরায় বাজারে বিক্রয় করে, যার মাধ্যমে রুশ অর্থনীতি ইউক্রেনে আগ্রাসনের জন্য আরও অর্থ জোগাতে পারছে।”হোয়াইট হাউস জানায়, তারা নজরদারি করবে কোন কোন দেশ রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করছে এবং সেই অনুযায়ী প্রেসিডেন্টকে নতুন পদক্ষেপের সুপারিশ করবে।বুধবার ট্রাম্পের শীর্ষ দূত স্টিভ উইটকফ মস্কোতে শান্তি আলোচনায় অংশ নেন — ঠিক তার পরেই এই শুল্ক আরোপের ঘোষণা আসে।ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আগেও এই ধরনের শুল্ক হুমকিকে “অযৌক্তিক ও অগ্রহণযোগ্য” বলে নিন্দা জানিয়েছিল।এর আগে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রন্ধীর জয়সওয়াল বলেছিলেন, সংঘাত শুরুর সময় যুক্তরাষ্ট্রই ভারতকে রাশিয়ার গ্যাস আমদানি করতে উৎসাহিত করেছিল, “বিশ্ব জ্বালানি বাজারের স্থিতিশীলতা বজায় রাখার স্বার্থে।”তিনি জানান, “ভারত তখন রাশিয়া থেকে আমদানি শুরু করে, কারণ ঐ সময়ে প্রচলিত জ্বালানির সরবরাহ ইউরোপের দিকে মোড় নেয়।”এই সর্বশেষ শুল্কের ঘোষণা দেখায়, ইউক্রেন যুদ্ধসংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞা আরোপে ট্রাম্প কতটা কঠোর হতে প্রস্তুত, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র ও বাণিজ্য অংশীদারদের প্রতিও।
শুক্রবার একটি নতুন সময়সীমা পার হওয়ার পর ট্রাম্প আরও নিষেধাজ্ঞা এবং রুশ তেল আমদানিকারক দেশগুলোর ওপর ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন — যা আরও কঠিন পরিস্থিতির আভাস দিচ্ছে।ভারত এর আগেও যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছিল — বিশেষ করে যখন যুক্তরাষ্ট্র নিজেই এখনো রাশিয়ার সঙ্গে কিছু পরিমাণ বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে।ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, “যেকোনো বড় অর্থনীতির মতো, ভারতও তার জাতীয় স্বার্থ ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা রক্ষায় প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেবে।”
উল্লেখ্য, গত বছর যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার সঙ্গে আনুমানিক ৩.৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য বাণিজ্য করেছে, যদিও তখন কঠোর নিষেধাজ্ঞা ও শুল্ক বলবৎ ছিল।