
উপস্থিত দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা ৩০ দিনের মধ্যে আপিল করতে পারবেন
পলাতক আসামিরা গ্রেপ্তার না হওয়া পর্যন্ত আপিলের সুযোগ পাবেন না
আইন লিঙ্গভেদে কোনো রায় সুবিধা প্রদান করে না
২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থয়ের সময় রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়ন, গণহত্যা, গুম, নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে দায়ের করা মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার রায় সোমবার (১৭ নভেম্বর) দুপুরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ ঘোষণা করে। দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল রায়ের সারসংক্ষেপ পাঠ করেন। প্যানেলের অন্য সদস্যরা ছিলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
রায়ে পাঁচটি অভিযোগের মধ্যে দুটিতে মৃত্যুদণ্ড এবং একটি অভিযোগে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয় শেখ হাসিনাকে। একইভাবে প্রথম অভিযোগে আমৃত্যু কারাদণ্ডের পাশাপাশি দ্বিতীয় অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় কামালকে। মামলায় গ্রেপ্তার একমাত্র উপস্থিত আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন আদালতে উপস্থিত ছিলেন, যিনি আদালতের নির্দেশে অ্যাপ্রুভার হিসেবে জবানবন্দি প্রদান করায় হ্রাসকৃত দণ্ড পেয়েছেন।
এ রায় বাংলাদেশের বিচার ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোনো সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ড প্রদানের নজির স্থাপন করল। রায় রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনসহ সব প্রধান গণমাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার করা হয় এবং রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক মোড়ে বড় পর্দায় দেখানো হয়, যেখানে সাধারণ মানুষের ব্যাপক সমাগম ও প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়।
রায়ের সারসংক্ষেপে বলা হয় যে, গণঅভ্যুত্থানের সময় হেলিকপ্টার, ড্রোন ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দেওয়ার মাধ্যমে শেখ হাসিনা গণহত্যা, গুম, নির্যাতন, এবং টার্গেটেড হত্যাকাণ্ডে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত ছিলেন। বিভিন্ন ভিডিও-অডিও, উপাত্ত ও নথিতে ঢাকা, সাভার, আশুলিয়া, রংপুর, বাড্ডা, রামপুরা ও যাত্রাবাড়ী এলাকায় প্রাণঘাতী অভিযান পরিচালনার প্রমাণ আদালতে উপস্থাপন করা হয়।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার রিপোর্ট, কল রেকর্ড, স্যাটেলাইট ফুটেজ, ফরেনসিক বিশ্লেষণ, প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ানসহ মোট ৮৪ জন সাক্ষীর মধ্যে ৫৪ জন সাক্ষ্য প্রদান করেন। ছয় ভাগে বিভক্ত ৪৫৩ পৃষ্ঠার রায়ের সারসংক্ষেপ জনসমক্ষে পাঠ করা হয়। পূর্ণাঙ্গ রায় পরে প্রকাশ করা হবে।
আদালতে উল্লেখ করা হয় যে শেখ হাসিনা ও কামাল বর্তমানে ভারতে পলাতক। এর ফলে আইন অনুযায়ী তারা গ্রেপ্তার না হওয়া পর্যন্ত আপিল আবেদন করতে পারবেন না। রায়ের পরে প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হোসাইন তামিম বলেন, “পলাতক আসামিদের আপিলের অধিকার কেবল গ্রেপ্তারের পরই কার্যকর হবে।”