স্বৈরাচার শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ওঠা বিভিন্ন গুরুতর অভিযোগকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জমাকৃত বিভিন্ন তথ্যপ্রমাণ এবং একাধিক চাঞ্চল্যকর ঘটনায় তার সম্পৃক্ততার অভিযোগে পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, নিজের পাতা ফাঁদেই আটকা পড়তে পারেন শেখ হাসিনা।
একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন জুলাই হত্যাকাণ্ডসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সহিংস ঘটনার রাজসাক্ষী হতে পারেন। তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি জনসমক্ষে প্রকাশের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে, যা প্রকাশ পেলে অনেক অজানা তথ্য বেরিয়ে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে, ইসরায়েল থেকে কেনা নজরদারি প্রযুক্তি ‘পেগাসাস’ এখন স্বৈরাচার সরকারের জন্যই বুমেরাং হয়ে দাঁড়িয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, এই স্পাইওয়্যার ব্যবহার করে বিরোধীমত দমনের চেষ্টা করা হলেও এখন সেই ডিভাইসে সংরক্ষিত কল রেকর্ডই শেখ হাসিনা ও তার সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সূত্রমতে, বিভিন্ন হত্যাকাণ্ড ও দমন-পীড়নের নির্দেশনামূলক কথোপকথন এখন ট্রাইব্যুনালের হাতে, যা প্রকাশ পেলে সাধারণ মানুষের গা শিউরে উঠবে।
সম্প্রতি, জুলাই আন্দোলন দমনে শেখ হাসিনার একটি ফাঁস হওয়া অডিও ক্লিপ নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। ক্লিপটিতে তাকে সরাসরি গুলি করে ছাত্র-জনতাকে দমনের নির্দেশ দিতে শোনা যায়। তিনি বলেছিলেন, “আমার নির্দেশনা দেয়া আছে। এখন ওপেন নির্দেশনা দিচ্ছি। লেথাল ওয়েপন ব্যবহার করবে। যেখানে পাবে সোজা গুলি করবে।”
জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের প্রতিবেদনেও জুলাই আন্দোলনে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রমাণ মিলেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রায় দেড় মাসে ১৪০০ জনকে হত্যা করা হয়েছে, যার মধ্যে ১২ থেকে ১৩ শতাংশই শিশু।
সব মিলিয়ে, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত ১৫২টি ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৩৫টি হত্যা, ৭টি মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যা এবং বাকিগুলো হত্যাচেষ্টা ও অপহরণের অভিযোগ। এসব অভিযোগের সুষ্ঠু বিচার এবং একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের প্রত্যাশায় এখন পুরো জাতি তাকিয়ে আছে।