
“বাড়িভাড়া কম খরচ হওয়ায় সরকারিভাবে হজে যাওয়া ৪,৯৭৮ জনকে ৮ কোটি ২৮ লাখ ৯০ হাজার ১৮৩ টাকা তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ফেরত দেয়া হবে।” ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রনালয় সূত্রে জানা যাচ্ছে যে, হজ পালনের জন্য সরকারিভাবে নির্ধারিত খরচের চেয়ে বাড়িভাড়ায় কম ব্যয় হয়েছে, যার ফলে অতিরিক্ত অর্থ হাজীদের ফেরত দেওয়া হচ্ছে।
২০২৫ সালে বাংলাদেশ থেকে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৪,৪৮২ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৮০,৬৩০ জন হজ পালন করেছেন।এবারের হজ যাত্রায় ভোগান্তি কমানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখেছে। অতীতের বছরগুলোতে ভিসা জটিলতা, আবাসন সমস্যা, ফ্লাইট বিলম্ব এবং অন্যান্য ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটির কারণে হজযাত্রীদের ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়তে দেখা যেত। কিন্তু এ বছর পূর্বপ্রস্তুতি এবং সমন্বিত প্রচেষ্টার ফলে এসব সমস্যা অনেকটাই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছে। বিশেষ করে, সরকারিভাবে হজে যাওয়া ৪,১৭৬ জন হজযাত্রীকে বাড়িভাড়ায় কম খরচ হওয়ায় ৮ কোটি ২৮ লাখ ৫০ হাজার ১৮০ টাকা তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ফেরত দেওয়ার ঘোষণা এটি অর্থ আমানত এবং তার সঠিক ব্যবস্থাপনার একটি সুস্পষ্ট দৃষ্টান্ত।
ইসলামে আমানত (Trust) মৌলিক নীতি ও ধর্মীয় কর্তব্য। কারো অর্থ, সম্পদ বা অধিকার সংরক্ষণ করা এবং সময়মতো তা ফিরিয়ে দেওয়া ইসলামি শিক্ষার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ। অর্থ আমানতের বিষয়ে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে সুস্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন:
“إِنَّ اللَّهَ يَأْمُرُكُمْ أَن تُؤَدُّوا الْأَمَانَاتِ إِلَىٰ أَهْلِهَا وَإِذَا حَكَمْتُم بَيْنَ النَّاسِ أَن تَحْكُمُوا بِالْعَدْلِ ۚ إِنَّ اللَّهَ نِعِمَّا يَعِظُكُم بِهِ ۗ إِنَّ اللَّهَ كَانَ سَمِيعًا بَصِيرًا”
“নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দেন যে, তোমরা যেন আমানতসমূহ তার স্বীয় হকদারকে প্রত্যর্পণ কর। আর যখন তোমরা মানুষের মধ্যে বিচারকার্য পরিচালনা কর, তখন ন্যায়পরায়ণতার সাথে বিচার কর। আল্লাহ তোমাদেরকে যে বিষয়ে উপদেশ দেন, তা কতই না উত্তম! নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।” (সূরা নিসা, আয়াত-৫৮)
এই আয়াতে আল্লাহ তায়ালা সকল প্রকার আমানত তার হকদারকে ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। হজের ক্ষেত্রে হাজীদের অতিরিক্ত অর্থ তাদেরই হক, যা তাদের কাছে ফেরত দেওয়া ইসলামের এই মূলনীতিরই বাস্তবায়ন।
রাসুলুল্লাহ (সা.) আমানতদারিতার গুরুত্ব সম্পর্কে অসংখ্য হাদিস বর্ণনা করেছেন। তার একটি গুরুত্বপূর্ণ হাদিস হযরত “আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তির মধ্যে আমানতদারিতা নেই, তার ঈমান নেই। আর যে চুক্তির প্রতি যত্নশীল নয়, তার কোনো ধর্ম নেই।” (মুসনাদে আহমাদ)। এই হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) আমানতদারিকে ঈমানের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। যার অর্থ হলো, যে ব্যক্তি আমানত রক্ষা করে না, তার ঈমান পরিপূর্ণ নয়। সরকারের পক্ষ থেকে হাজীদের অর্থ ফেরত দেওয়ার এই প্রশংসিত পদক্ষেপটি ইসলামী অনুশাসনে আমানত রক্ষা করার একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।