গাজার ত্রাণযুদ্ধ, আল-রাশিদ সড়কে একটি যাত্রা: পর্ব ২ - দৈনিক সাবাস বাংলাদেশ
নোটিশ:
শিরোনামঃ
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা, ফেব্রুয়ারিতে ভোট ঢাবির আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস অনুষদের তিন বছরের ডিনস অ্যাওয়ার্ড প্রদান ঢাবি নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের নবীন ও স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের বরণ ও বিদায় অনুষ্ঠান শেকৃবি কৃষিবিদদের ৩ দফা দাবি নিয়ে আগারগাঁও ব্লকেড মাথার পেছনে গুলির চিহ্ন, রক্তে ভেসে থাকা বুক: ট্রাইব্যুনালে বাবার সাক্ষ্য তিন দফা দাবিতে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে শাটডাউন, পরীক্ষা স্থগিত গ্রিনল্যান্ডকে ঘিরে যুক্তরাষ্ট্র-ডেনমার্কে নতুন কূটনৈতিক উত্তেজনা স্পেনে বুনোলে ৮০তম টোমাটিনা উৎসব, ১২০ টন টমেটো ছোড়াছুড়িতে মেতে উঠলেন ২২ হাজার মানুষ শেরপুরে নারীর সামর্থ্য উন্নয়ন ও জলবায়ু অভিযোজন প্রযুক্তি নিয়ে কর্মশালা অনুষ্ঠিত

গাজার ত্রাণযুদ্ধ, আল-রাশিদ সড়কে একটি যাত্রা: পর্ব ২

মারাম হুমায়েদ, আল জাজিরা
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ৮ জুলাই, ২০২৫
  • ৯০ বার দেখা হয়েছে
gaza_aid_line

আগের পর্ব পড়ুন এখানে: গাজার ত্রাণযুদ্ধ আল-রাশিদ সড়কে একটি যাত্রা: পর্ব ১ 

ফিরতি পথ

আমি আমার পরিবারকে আল-রাশিদ সড়কে দেখা দৃশ্যগুলো বললাম, আর তারা তাকিয়ে শুনলো—বিস্ময় আর উদ্বেগ নিয়ে—তাদের এই “ফিল্ড করেসপন্ডেন্টের” কাছ থেকে।

তরকারি, রুটি—খাবারের সংকট নিয়ে তারাও ব্যতিব্যস্ত। আলোচনা হচ্ছিল কীভাবে শেষ এক কেজি ময়দা পাস্তার সাথে মিশিয়ে আরও কিছুদিন চালানো যায়—সব কথোপকথন জুড়ে একটাই ছায়া: ক্ষুধা আর অনিশ্চয়তার ভয়।

আমরা বেশি দিন থাকিনি, মাত্র দুদিন। তারপর আবার রওনা হলাম—সেই একই রাস্তায়, যেখানে যে কোনো সময় বোমা পড়তে পারে, আর যার পাশে অসংখ্য ত্রাণ অন্বেষীর ছায়া ঘোরাফেরা করছে।

তবে এবার যাত্রা দিনের বেলা। রাস্তার ধারে মহিলাদের বসে থাকতে দেখি—তারা রাত্রি কাটিয়ে দেবে, শুধু ত্রাণের অপেক্ষায়।

এর প্রায় দুই সপ্তাহ পর, ২৬ জুন, আমরা আবার গিয়েছিলাম।

এইবার আমার সঙ্গে ছিল দুই সন্তান, আমার বোন (যিনি আগের বার আমাদের সঙ্গেই ফিরেছিলেন), আমার ভাইয়ের স্ত্রী এবং তার দুই ছোট সন্তান—চার বছরের সালাম এবং দুই বছরের তিব। আমার স্বামী পরদিন এসেছিলেন।

একটি ছোট, পুরোনো মিনিবাসে আমরা ছিলাম সাতজন। আর গাদাগাদি করে ছিল আরও নয়জন—চালকের পাশে তিনজন পুরুষ, একজন যুবক তার স্ত্রী ও বোনকে নিয়ে, আর এক মহিলা তার স্বামী ও সন্তান নিয়ে।

মোট ১৬ জন, একটি গাড়িতে, যা এর জন্য তৈরিই নয়!

যদিও আল-রাশিদ সড়কে যানবাহন নিষিদ্ধ, কিছু গাড়ি তবুও পার হয়। আমরা খুব ক্লান্ত ছিলাম, আর বাচ্চাদের কথা চিন্তা করে, ঝুঁকি নিয়েই সেই দিন গাড়ি ব্যবহার করলাম—সেই যাত্রা সফল হয়েছিল।

তবে আমি জানি না, সেটা ছিল সৌভাগ্য না দুর্ভাগ্য—কারণ ঠিক যখন আমাদের গাড়ি নেৎজারিম করিডোরের কাছে আসে, তখন বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (WFP) ত্রাণ ট্রাক এসে পড়ে।

দুটি ট্রাক রাস্তার মাঝে দাঁড়ায়—”লুট” হওয়ার অপেক্ষায়।

গাজার মানুষ বলবে, এটা এখন নতুন ইসরায়েলি নীতির অংশ: কোনো সংগঠিত বিতরণ নয়, কোনো তালিকা নেই। শুধু ট্রাক ঢুকতে দাও, যে পারবে সে কিছু নিয়ে যাক, আর বাকিরা মরুক।

কাছের আরেকটি সড়কে আরও তিনটি ট্রাক থেমে পড়ে। লোকজন ট্রাকগুলোতে উঠতে শুরু করে, যেভাবে সম্ভব কেড়ে নিচ্ছে চাল, ডাল, যাকিছু পাওয়া যায়।

মাত্র কিছুক্ষণের মধ্যেই আশপাশের সব যানবাহন, তুক-তুক, ট্রলি এমনকি আমাদের ভ্যানও দাঁড়িয়ে পড়ে। চারপাশের সব মানুষ—পুরুষ, নারী, শিশু—ছুটে চলে যায় ট্রাকের দিকে।

আমাদের গাড়ির ভেতরেই বিশৃঙ্খলা শুরু হয়। যুবকটি, যে তার স্ত্রী আর বোনকে সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছিল, তাদের অনুরোধ উপেক্ষা করে গাড়ি থেকে লাফিয়ে নামে। তার পেছনে আরও দু’জন পুরুষ চলে যায়।

আমার সবচেয়ে বড় চমক তখনই লাগে, যখন আমাদের পেছনের এক মহিলা হঠাৎ ঠেলে বেরিয়ে যায়, আর তার স্বামী ও ছেলেকে বলে: “আমি যাচ্ছি। তোমরা থাকো।”

সে দৌড়ে চলে যায়—ঝড়ের মতো। আরও নারী ও কিশোরীরা গাড়িগুলো ছেড়ে ছুটে যায় ট্রাকের দিকে।

আমার মনে প্রশ্ন জাগে: ওই নারী কি পারবে একা একটা ট্রাকের পাশে উঠে পুরুষদের সাথে খাবারের জন্য ধাক্কাধাক্কি করতে?

মানুষের ঢেউ আমাদের চারপাশ ঘিরে ফেলে, যেন হঠাৎ মাটি ফুঁড়ে বেরিয়ে এসেছে। আমি ড্রাইভারকে অনুরোধ করি, গাড়ি চালাতে বলি। এই দৃশ্যটা ছিল একেবারে বেঁচে থাকার সংগ্রাম—মর্যাদা, ন্যায়বিচার, মানবতা—সব পেছনে ফেলে।

ড্রাইভার ধীরে গাড়ি চালাতে শুরু করে, বারবার থামতে হচ্ছে, কারণ উল্টো দিক থেকে জনস্রোত দৌড়ে আসছে। আমার ভয় বেড়ে যায়। বাচ্চারাও সেটা টের পায়।

আমাদের কেউই পুরোপুরি বুঝে উঠতে পারছিলাম না, ঠিক কী দেখছি। এমনকি আমি—যিনি নিজেকে সাংবাদিক বলি, সব খবর জানি—তাও বুঝে উঠতে পারছিলাম না। সত্যিটা হল—বাস্তবতা একদম আলাদা।

চোখের সামনে দেখি—যুবকরা বস্তা হাতে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে। একজনের হাতে ছুরি—কারণ সে জানে, তার ওপর হামলা হতে পারে।

অন্যদের হাতে ধারালো ছুরি বা যন্ত্রপাতি—কারণ ক্ষুধার্ত মানুষের হাতে পড়লে নিজের রক্ষা নিজেকেই করতে হবে।

“আমরা চোর হয়ে গেছি, শুধু খাওয়ার জন্য, বাচ্চাদের খাওয়ানোর জন্য”—এটাই এখন ইসরায়েলের “মানবিক” মার্কিন-চালিত ফাউন্ডেশনের বাস্তব চিত্র, আর এর “বিতরণ নীতি”।

আর আমরা এই ভেঙে পড়া সামাজিক ব্যবস্থার মধ্যে, যেখানে শুধু খালি পেটের আর্তনাদ শোনা যায়।

আমরা কীভাবে মানুষকে দোষ দেবো? তারা কি এই যুদ্ধ চেয়েছিল?

গাড়ি ঘুরে যেতে থাকে, যতক্ষণ না পর্যন্ত সেই সহস্র aid-seeker-এর ঢেউ মিলিয়ে যায়। মনে হচ্ছিল, যেন এক ভিন্ন জগৎ থেকে বেরিয়ে এলাম।

আমরা শহরের এক মোড়ে পৌঁছাই, একেবারে নিঃশেষ হয়ে। আমি চুপচাপ গাড়ি থেকে ব্যাগ নামাতে থাকি, মনে মনে ভাবি — কত কত বেদনার জগৎ তোমার মধ্যে লুকিয়ে আছে, গাজা?

সেদিন আমি aid-seeker এর দুনিয়াটা দেখলাম — ২০ মাস ধরে আমি ছিলাম বাস্তুচ্যুতদের, আহতদের, মৃতদের, ক্ষুধার্তদের, তৃষ্ণার্তদের জগতে।

আর কত জগৎ বাকি আছে তোমার যন্ত্রণার, গাজা—যার আগে বিশ্ব আমাদের দেখবে?
আর কত অপেক্ষা করলে তুমি পাবে একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি?

—————

মূল আর্টিকেল: https://www.aljazeera.com/news/2025/7/7/gazas-starving-men-and-women-chase-trucks-willing-to-die-to-feed-families

শেয়ার করুন

Comments are closed.

এই ধরনের আরও নিউজ

© কপিরাইট ২০২৪-২০২৫ | সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: NagorikIT