গাজায় শুক্রবার স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা (গ্রিনউইচ মান সময় সকাল ৯টা) থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধের অবসান এবং বন্দি বিনিময়ের চুক্তি অনুমোদনের পর এই যুদ্ধবিরতি আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। খবর অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস ও মিডল ইস্ট আইয়ের। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, চুক্তির প্রথম ধাপ অনুযায়ী তারা নির্ধারিত সীমান্তরেখায় সেনা প্রত্যাহার সম্পন্ন করেছে।
যুদ্ধবিরতি কার্যকর হতেই হাজার হাজার ফিলিস্তিনি দক্ষিণ গাজা থেকে উত্তরাঞ্চলে ফিরে যেতে শুরু করেন। কয়েক মাসের যুদ্ধ, অবরোধ ও ধ্বংসযজ্ঞের পর নিজেদের বাড়িঘরে ফেরার আশায় মানুষজন রাস্তায় নেমে পড়েছে। অনেকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া ঘরবাড়ির খোঁজ নিচ্ছেন, কেউ কেউ পরিবার ও আত্মীয়দের সঙ্গে পুনর্মিলিত হওয়ার চেষ্টা করছেন।
শুক্রবার সকালে ইসরায়েলি সরকার চুক্তি অনুমোদন দেয়, এর কয়েক ঘণ্টা আগে হামাসও জানায় যে, উভয় পক্ষ যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটাতে একমত হয়েছে। ইসরায়েলের সরকারি সম্প্রচার সংস্থা ‘কান’ বৃহস্পতিবার মিশরে স্বাক্ষরিত চুক্তির একটি ফাঁস হওয়া কপি প্রকাশ করে, যেখানে বলা হয়, চুক্তি অনুমোদনের সঙ্গে সঙ্গেই যুদ্ধ “তাৎক্ষণিকভাবে শেষ হবে।”
চুক্তির দলিলে উল্লেখ রয়েছে, এর প্রথম ধাপ বাস্তবায়ন হবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আনুষ্ঠানিক ঘোষণার মধ্য দিয়ে, যেখানে তিনি গাজা যুদ্ধের সমাপ্তি ঘোষণা করবেন। ট্রাম্প সপ্তাহান্তে মিশর সফরে যাচ্ছেন এবং সেখানে চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন বলে নিশ্চিত করা হয়েছে। এরপর সোমবার তাঁর ইসরায়েল সফরের কথা রয়েছে।
হামাসের প্রধান আলোচক খালিল আল-হায়া নিশ্চিত করেছেন যে, ফিলিস্তিনি সংগঠনটিও যুদ্ধের অবসান ঘটাতে চুক্তিতে সম্মতি দিয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য মধ্যস্থতাকারী দেশ নিশ্চয়তা দিয়েছে যে, এই চুক্তির অর্থ হবে “যুদ্ধের অনির্দিষ্টকালের জন্য সমাপ্তি।”
যদিও যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পরও গাজা সিটি ও খান ইউনুসে ইসরায়েলি বিমান হামলা, গোলাবর্ষণ ও গুলির খবর পাওয়া গেছে। এখন পর্যন্ত কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি, তবে স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, সীমান্তের কয়েকটি এলাকায় উত্তেজনা এখনো বিদ্যমান।
জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থাগুলো যুদ্ধবিরতির সুযোগে গাজায় মানবিক সহায়তা পাঠাতে প্রস্তুতি নিচ্ছে। শত শত ট্রাক খাদ্য, ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম নিয়ে গাজায় প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। এদিকে যুদ্ধবিরতি চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকারসহ বিভিন্ন দেশ।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই যুদ্ধবিরতি দীর্ঘমেয়াদি শান্তির পথ খুলে দিতে পারে, তবে বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় জটিলতা ও আস্থার সংকট রয়ে গেছে। গাজার অবকাঠামো পুনর্গঠন, খাদ্য ও পানির সরবরাহ নিশ্চিতকরণ এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।