
বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুটেক্স) তিনটি আবাসিক হলে মশার উপদ্রব ব্যাপক হারে বেড়ে যাওয়ায় আতঙ্কে রয়েছেন শিক্ষার্থীরা। ইতোমধ্যে বহু শিক্ষার্থী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে, যা নিয়ে দুশ্চিন্তায় অভিভাবকরাও।
বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুটেক্স) আবাসিক হলগুলোতে সম্প্রতি মশার উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায় শিক্ষার্থীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেদের জন্য বরাদ্দ তিনটি হল—জি এম এ জি ওসমানী হল, সৈয়দ নজরুল ইসলাম হল এবং শহীদ আজিজ হলের শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে অন্যান্য সময়ের তুলনায় মশার উপদ্রব কয়েকগুণ বেড়ে গেছে।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ফগিং অনিয়মিত চলছে এবং হল প্রশাসন থেকে বাড়তি কোনো মশা নিধন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হলের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী দিনের বেলাতেও মশারি টাঙিয়ে পড়ছেন বা শুয়ে আছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোর পাশে অবস্থিত ড্রেনে বহুদিন ধরে জমে আছে নোংরা ও জীবাণুবাহী পানি, আর হল সংলগ্ন খেলার মাঠের পাশে রাখা হয়েছে ময়লার স্তূপ। এছাড়া হলের পচাবাসি খাবারও ড্রেনে আটকে থাকতে দেখা গেছে। এসব ময়লার স্তূপ ও ড্রেনে আটকে থাকা নোংরা পানিতে মশার প্রজনন দ্রুত বেড়ে যাচ্ছে।
জি এম এ জি ওসমানী হলে বসবাসরত ৫০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ইকরামুল হাসান বলেন,
“হলের নাজুক পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা এবং সময়মতো ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার না হওয়ায় ডেঙ্গু বাহিত মশার উপদ্রব আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গেছে। আমাদের ২৪ ঘণ্টা মশারির মধ্যে থাকতে হচ্ছে। নিয়মিত মশার স্প্রে না করায় পরিস্থিতি আরও খারাপ। আমাদের চারটি রুমে আমরা ৩০ থেকে ৩২ জন থাকি। এর মধ্যে ১৪-১৫ জন ইতোমধ্যে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত, এবং অনেকেই হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।”
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত একই হলের ৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. জুবায়ের জানান,
“আমি প্রায় সাত দিন ধরে ডেঙ্গু জ্বরে শমরিতা হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম। প্লাটিলেট ২৯,০০০ এ নেমে গিয়েছিল এবং আমাকে প্লাজমা দিতে হয়েছে। হাসপাতালে থাকার কারণে আমি ক্লাস টেস্ট ও ল্যাব ফাইনালে অংশ নিতে পারিনি।”
হল প্রশাসনের কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলে জি এম এ জি ওসমানী হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মো. মাহবুবুর রহমান বলেন,
“বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক কিছু সমস্যার কারণে আমি এখনও হলে পুরোপুরিভাবে কার্যক্রম শুরু করতে পারিনি। তবে হলে প্রাপ্ত সমস্যার রিপোর্টের পর আমি বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে ডিএনসিসি অফিসে যোগাযোগ করেছি। তারা নিশ্চিত করেছে, হলে নিয়মিত মশার স্প্রে কার্যক্রম চালানো হবে। এছাড়া পরিচ্ছন্নতা, পানি নিষ্কাশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।”
সৈয়দ নজরুল ইসলাম হলে শিক্ষার্থীরাও একই পরিস্থিতি বর্ণনা করেছেন। তারা বলেন, প্রতিদিন হলের বাইরে জমে থাকা ময়লা-আবর্জনা নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না। ফলে দীর্ঘদিনের আবর্জনা এক জায়গায় পড়ে থাকায় মশার উপদ্রব আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ফগার মেশিনও বেশ কিছুদিন ধরে চালু হচ্ছে না। ফলে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার আতঙ্কে দিন কাটছে আবাসিক শিক্ষার্থীদের।
সৈয়দ নজরুল ইসলাম হলের ৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মুজাহিদ শুভ বলেন,
“হলের মাঠের উত্তর-পূর্ব দিকের স্টাফ কোয়ার্টারের আশপাশে অনেকদিন ধরে ময়লা-আবর্জনা জমে আছে। সেখান থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে এবং মশার উপদ্রব ভয়াবহভাবে বেড়েছে। ডেঙ্গুর সংবেদনশীল সময়ে এটি আমাদের জন্য বড় ঝুঁকির কারণ হতে পারে। তাই আমরা চাই, হল প্রশাসন দ্রুত পরিচ্ছন্নতার উদ্যোগ নিক।”
হলের ভারপ্রাপ্ত প্রভোস্ট সহকারী অধ্যাপক মো. মোতাকাব্বির হাসান জানান,
“ডেঙ্গু পরিস্থিতিকে আমরা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। হলের পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখা, মশা নিয়ন্ত্রণ করা এবং ছাত্রদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনা করছি। প্রতিদিন দুই হলের মাঝের ড্রেনে লিকুইড মশার ওষুধ ছিটানো হচ্ছে, যা লার্ভা দ্রুত ধ্বংস করতে সহায়ক। ক্যাম্পাস কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে নিয়মিত ফগিং কার্যক্রমও পরিচালিত হচ্ছে। এছাড়া আবর্জনা ব্যবস্থাপনাও জোরদার করা হয়েছে। প্রতিটি ফ্লোরে ডাস্টবিন ব্যবহার নিশ্চিত করতে ছাত্রদের সচেতন করা হচ্ছে। তবে শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত সুরক্ষার জন্য মশারি ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছি। হলের মাঠে ময়লা জমার বিষয়টি সম্প্রতি জানতে পেরেছি; খুব শিগগিরই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
শহীদ আজিজ হলে পরিস্থিতি ভিন্ন নয়। শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, সন্ধ্যার পর রিডিং রুম ও থাকার কক্ষে মশার উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায় স্বাভাবিক পড়াশুনার পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে। এছাড়া একটি শিক্ষার্থীর ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মো. আহসান হাবীব বলেন,
“এ বিষয়ে প্রভোস্ট টিমসহ ভিসি স্যারের সঙ্গে শিগগিরই বসব, যেন দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর নির্ভর না করে হলের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মীরা নিজে নিয়মিত মশা নিধন কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে। এজন্য একটি ফগিং মেশিন কেনার চিন্তা-ভাবনা করছি।”
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, অক্টোবর মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল প্রায় ২২ হাজার, আর নভেম্বরে বর্তমানে ৬ হাজার ছাড়িয়েছে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রোগীর সংখ্যা দ্রুত বেড়ে যাওয়ায় স্বাস্থ্যকর্মীদের উদ্বেগ বাড়ছে। এই প্রেক্ষাপটে, বুটেক্স শিক্ষার্থীদের আবাসিক হলগুলোতে মশার উপদ্রব শিক্ষার্থীদের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। শিক্ষার্থীরা দাবি করেছেন, প্রশাসন যেন দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করে এবং সমস্যার সমাধান করে।
উল্লেখ্য, হল প্রশাসন একাধিকবার মশানিরোধক ওষুধ প্রয়োগ করলেও তা এখনও ফলপ্রসূ হচ্ছে না।