অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসের বিদায়ী টেস্টে শেষ পর্যন্ত হার এড়িয়ে ড্র নিয়েই মাঠ ছেড়েছে শ্রীলঙ্কা। তবে এই ড্র লঙ্কানদের জন্য স্বস্তির হলেও, বাংলাদেশের জন্য হয়ে রইল একরাশ আক্ষেপের গল্প। ম্যাচের শেষ বিকেলে ৩৭ ওভারের মধ্যে শ্রীলঙ্কার ছয় উইকেট তুলে নেওয়ার সুযোগ থাকলেও, প্রশ্ন উঠেছে—আরও আগে ইনিংস ঘোষণা করলে কি ম্যাচের ফল ভিন্ন হতে পারতো?
গল টেস্টের শেষ ইনিংসে জয়ের জন্য শ্রীলঙ্কার সামনে লক্ষ্য ছিল ২৯৬ রান, হাতে ছিল ৩৭ ওভার। প্রায় অসম্ভব এই লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে তাইজুল ইসলাম ও নাঈম হাসানের স্পিন তোপে ৭২ রানেই ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলে স্বাগতিকরা। বিশেষ করে তাইজুল ইসলামের ঘূর্ণিতে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস ও দিনেশ চান্দিমালের দ্রুত বিদায়ে জয়ের সুবাস পেতে শুরু করেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ধনঞ্জয়া ডি সিলভা এবং কামিন্দু মেন্ডিস দেয়াল হয়ে দাঁড়ালে বাংলাদেশের জয়ের স্বপ্ন ফিকে হয়ে যায়। দিনের খেলা ৫ ওভার বাকি থাকতেই ড্র মেনে নেয় দুই দল।
ম্যাচ শেষে তাই প্রশ্ন উঠছে বাংলাদেশের কৌশল নিয়ে। বৃষ্টির কারণে প্রায় আড়াই ঘণ্টা খেলা বন্ধ থাকার পর বাংলাদেশ আবারও ব্যাটিংয়ে নামে। এই অতিরিক্ত ব্যাটিংয়ের মূল উদ্দেশ্য ছিল নাজমুল হোসেন শান্তর দ্বিতীয় সেঞ্চুরি নিশ্চিত করা। শান্ত এই ম্যাচে জোড়া সেঞ্চুরি করে অনন্য এক কীর্তি গড়েন, যা বাংলাদেশি হিসেবে তৃতীয় ঘটনা। কিন্তু তার এই মাইলফলকের জন্য বাংলাদেশ মূল্যবান সময় ও ওভার নষ্ট করেছে।
বৃষ্টির পর শান্তর সেঞ্চুরি পূর্ণ করতে লেগেছে ৫০ বল, যেখানে রান আসে মাত্র ১৯। এরপর অবশ্য শেষ ১৬ বলে শান্তর তিন ছক্কাসহ ২৮ রান এলেও, ততক্ষণে পেরিয়ে গেছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সময়। এই সময়েই প্রায় ১৩ ওভার নষ্ট হয়, যা লঙ্কানদের অলআউট করার জন্য হয়তো যথেষ্ট হতে পারতো।
বিশেষ করে গলের পিচ যখন স্পিনারদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছিল, তখন এই সিদ্ধান্ত আরও বেশি সমালোচিত হচ্ছে। কভারের নিচে থাকায় পিচের স্যাঁতস্যাঁতে ভাব স্পিনারদের জন্য সহায়ক হয়ে ওঠে। তাইজুল ইসলাম ও নাঈম হাসান সেই সুযোগ দারুণভাবে কাজেও লাগাচ্ছিলেন। তাইজুলের বল ম্যাথিউসের ব্যাটের ভেতরের কানায় লেগে সিলি পয়েন্টে জমা হয়, আর চান্দিমালের উইকেট উড়িয়ে দেয় এক দুর্দান্ত ডেলিভারিতে।
দিন শেষে তাই আক্ষেপটা বাংলাদেশেরই। শান্তর জোড়া শতক, মুশফিকের ১৬৩ কিংবা লিটনের ৯০ রানের ইনিংসগুলো ব্যক্তিগত মাইলফলক হিসেবে উজ্জ্বল থাকলেও, একটি টেস্ট জয়ের সুযোগ হাতছাড়া করার হতাশা নিয়েই মাঠ ছাড়তে হলো টাইগারদের। তাইজুল-নাঈমরা হয়তো ভাবছেন, যদি আর কয়েকটি ওভার পাওয়া যেত!