নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলার রনসী পূর্বপাড়া গ্রামের বাসিন্দা, প্রবাসী যুবক রাজা হোসেনের মরদেহ গ্রীসের একটি জঙ্গল থেকে উদ্ধার হয়েছে। রাজা হোসেনের পিতার নাম মরহুম জলিল মিয়া। তিনি দীর্ঘদিন ধরে গ্রীসে বসবাস করে আসছিলেন এবং সম্প্রতি নিখোঁজ হন। স্থানীয় প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভাষ্য অনুযায়ী, গত বুধবার থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন এবং তার সন্ধানে তারা নানা জায়গায় খোঁজাখুঁজি করছিলেন। আজ সকালে তার মরদেহ উদ্ধারের খবর ছড়িয়ে পড়তেই প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে। একইসঙ্গে তার নিজ গ্রাম রনসী পূর্বপাড়ায়ও শোকাবহ পরিবেশ সৃষ্টি হয়।
রাজা হোসেন ছিলেন ভদ্র, পরিশ্রমী ও সবার প্রিয় একজন মানুষ। যাকে স্থানীয় মানুষজন শ্রদ্ধা করতেন এবং যার ব্যবহার সবাইকে মুগ্ধ করত। তার এভাবে নিখোঁজ হয়ে মৃতদেহ ফিরে আসা গ্রামের মানুষদের হতবাক করেছে। বিশেষ করে সামাজিক মাধ্যমে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, মানুষ এতটা নিষ্ঠুর কীভাবে হতে পারে? কেউ কেউ বলছেন, প্রবাসে নিরাপত্তাহীনতা দিন দিন বেড়ে চলেছে, আর সেই অসহায়তার শিকার হয়েছেন রাজা হোসেন। তার মৃত্যুর প্রকৃত কারণ এখনও জানা যায়নি, তবে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ইউরোপের কঠোর অভিবাসন নীতির শিকার হয়েই হয়তো এই পরিণতির মুখে পড়েছেন তিনি।
বর্তমানে অনেক বাংলাদেশি কঠিন পথে ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টা করছেন, যারা বৈধতা ছাড়াই সীমান্ত পেরোতে গিয়ে বিভিন্ন রুট ব্যবহার করেন। এর মধ্যে বহু মানুষ নিখোঁজ হন কিংবা দুর্ঘটনার শিকার হন, অনেকের মৃতদেহ পাওয়া যায় জঙ্গল, নদী বা পাহাড়ি এলাকা থেকে। এই প্রবণতা শুধু মানবিক সংকটকেই না, বরং গোটা অভিবাসন ব্যবস্থাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করছে। রাজা হোসেনের মৃত্যু সেই বাস্তবতারই এক নির্মম প্রতিচ্ছবি।
রাজা হোসেনের মরদেহ উদ্ধারের খবরে গ্রীসে বসবাসরত বাংলাদেশি কমিউনিটিতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করে সামাজিক সংগঠনগুলো দোয়ার আয়োজন করছে। বাংলাদেশেও তার পরিবারের সদস্যরা কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। অনেকেই বলছেন, তারা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না প্রিয়জনের এমন করুণ বিদায়। শোক প্রকাশ করে অনেকে সামাজিক মাধ্যমে তার ছবি পোস্ট করে বলছেন, এমন মানুষ কিভাবে হারিয়ে যেতে পারে?
স্থানীয় এবং প্রবাসী কমিউনিটি থেকে দাবী উঠেছে, এ ঘটনায় যেন দ্রুত তদন্ত হয় এবং রাজা হোসেন কীভাবে নিখোঁজ হলেন ও কীভাবে তার মৃত্যু হলো—সে ব্যাপারে স্বচ্ছ তথ্য প্রকাশ করা হয়। একইসঙ্গে ইউরোপে বসবাসরত বাংলাদেশিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কূটনৈতিকভাবে পদক্ষেপ নেওয়ারও আহ্বান জানানো হয়েছে। অনেকেই বলছেন, শুধু উন্নত জীবনের আশায় পাড়ি দেওয়া তরুণদের জন্য নিরাপদ অভিবাসন নীতি গড়ে তোলা সময়ের দাবি। প্রতিটি প্রাণই অমূল্য, আর প্রবাসে কোনো বাংলাদেশির এমন মৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না।
রাজা হোসেনের মৃত্যু শুধুমাত্র একটি পরিবারের স্বপ্নভঙ্গ নয়, এটি আমাদের অভিবাসন নীতির দুর্বলতা, প্রবাসে বাংলাদেশিদের নিরাপত্তাহীনতা এবং রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতার প্রতিফলন। এখন প্রয়োজন, রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে এসব মৃত্যুর পিছনের কারণগুলো খতিয়ে দেখা এবং কার্যকর নিরাপত্তা পরিকল্পনা গ্রহণ করা। যাতে আর কোনো রাজা হোসেন এভাবে হারিয়ে না যায়। তার আত্মার শান্তি কামনা করি, আর প্রার্থনা করি—তার পরিবারের সদস্যরা এই শোক কাটিয়ে উঠতে শক্তি ও ধৈর্য লাভ করুন।