ফৌজদারী অপরাধে দণ্ডিত অপরাধী এবং গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত পলাতক আসামী ও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রচারকে কঠোরভাবে অবৈধ ঘোষণা করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। আজ শুক্রবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক কড়া বিবৃতিতে বলা হয়, বৃহস্পতিবার দেশের কিছু গণমাধ্যম আইন ও আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করে শেখ হাসিনার বক্তব্য সম্প্রচার করেছে, যেখানে তিনি মিথ্যা, বিভ্রান্তিকর এবং উসকানিমূলক মন্তব্য করেছেন। সরকার স্পষ্ট হুঁশিয়ারি দিয়েছে, ভবিষ্যতে এমন অপরাধমূলক প্রচার হলে সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমকে তাৎক্ষণিক আইনি পদক্ষেপের মুখোমুখি হতে হবে।
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রচার করা ২০০৯ সালের সন্ত্রাসবিরোধী আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। পাশাপাশি, গত বছরের ডিসেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছিল, ঘৃণা ছড়ানো বা সহিংসতা উসকে দেওয়া ক্ষমতাচ্যুত প্রাক্তন স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার বক্তব্য বাংলাদেশে প্রচার করা যাবে না। তবুও বৃহস্পতিবার কিছু গণমাধ্যম দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে তার বক্তব্য সম্প্রচার করেছে, যা আইন অবজ্ঞার পাশাপাশি দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রাকে অস্থিতিশীল করার প্রচেষ্টা।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের বিবৃতিতে গভীর উদ্বেগ জানিয়ে বলা হয়, শেখ হাসিনা বাংলাদেশে জুলাই মাসের গণ-অভ্যুত্থানের সময় শত শত শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীর হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন—এমন অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা চলছে। তিনি এরপর দেশ থেকে পালিয়ে যান এবং বর্তমানে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় বিচারাধীন। আদালত ইতিমধ্যে তাকে দোষী সাব্যস্ত করেছে। এ ছাড়া বাংলাদেশের আইন অনুসারে, আওয়ামী লীগের সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ। একই আইনের আওতায়, যারা শেখ হাসিনার বা তার দলের বক্তব্য, মন্তব্য বা কার্যক্রম প্রচার করবে, তারাও দণ্ডনীয় অপরাধে অভিযুক্ত হবে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, দেশের ইতিহাসের এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে অপ্রয়োজনীয় বিভ্রান্তি সৃষ্টির সুযোগ নেওয়া যাবে না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ন্যায়বিচার, জবাবদিহিতা ও গণতান্ত্রিক নীতির ভিত্তিতে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিচ্ছে। কয়েক দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো জনগণ একটি সত্যিকার অর্থে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাই উসকানিমূলক বক্তব্য প্রচার দেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য গুরুতর হুমকি তৈরি করবে।
বিবৃতিতে সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতি কড়া সতর্কবার্তা দিয়ে বলা হয়, শেখ হাসিনার অডিও বা বক্তব্য প্রচার কিংবা পুনঃপ্রচার করলে তা দেশের আইন ভঙ্গের সামিল হবে। এটি শুধু জনগণকে বিভ্রান্ত করে না, বরং চলমান গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথে অস্থিরতা ও সহিংসতার আশঙ্কা তৈরি করে। তাই যেকোনো সংবাদমাধ্যম এ ধরনের প্রচারে জড়িত হলে কঠোর আইনি জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে।