বরেণ্য বুদ্ধিজীবী, লেখক, গবেষক ও জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সভাপতি বদরুদ্দীন উমর আর নেই। রোববার সকাল ১০টা ৫ মিনিটে ঢাকার বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে তিনি শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯৪ বছর। জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সম্পাদক ফয়জুল হাকিম গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, বদরুদ্দীন উমর দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন। গত ২২ জুলাই শ্বাসকষ্ট ও নিম্ন রক্তচাপ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। দশ দিন চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফেরার পর আজ সকালে গুরুতর অসুস্থ হয়ে আবার হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।
বদরুদ্দীন উমর ১৯৩১ সালের ২০ ডিসেম্বর ভারতের বর্ধমানে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা আবুল হাশিম ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের খ্যাতনামা মুসলিম জাতীয়তাবাদী রাজনীতিবিদ। ষাটের দশকে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন, ধর্ম ও রাজনীতি নিয়ে তাঁর গবেষণা ও লেখনী বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের সাংস্কৃতিক ভীত নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বিশেষ করে তাঁর রচিত সাম্প্রদায়িকতা (১৯৬৬), সংস্কৃতির সংকট (১৯৬৭) এবং সাংস্কৃতিক সাম্প্রদায়িকতা (১৯৬৯) বইগুলো ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষকতা দিয়ে পেশাজীবন শুরু করলেও পরবর্তীতে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন। পাশাপাশি তিনি সক্রিয় রাজনৈতিক সংগঠক হিসেবে বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনের সভাপতি, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী জোটের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী এবং পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০৩ সালে তিনি জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা করে এর সভাপতির দায়িত্ব নেন।
ধর্ম বিষয়ে তাঁর অবস্থান ছিল সমালোচনামূলক। তিনি মনে করতেন, ধর্ম প্রায়শই রাষ্ট্র ও শাসকগোষ্ঠীর রাজনৈতিক হাতিয়ার হয়ে ওঠে। পাকিস্তান আমলে রাষ্ট্রীয় ইসলামী ভাবমূর্তির ব্যবহারকে তিনি শ্রেণি-ভিত্তিক দমনযন্ত্র হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন। এক সাক্ষাৎকারে তিনি ঈশ্বরের “মানুষকে পরীক্ষা” করার ধারণা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন। তাঁর মতে, গরিব মানুষের দুঃখ-কষ্ট ও শিশুমৃত্যুকে পরীক্ষার অংশ বলা এক ধরনের অন্যায় ব্যাখ্যা।