
নিউইয়র্কের নবনির্বাচিত মুসলিম মেয়র জোহরান মামদানি ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে অনুষ্ঠিত রুদ্ধদ্বার বৈঠকটিকে ‘দুর্দান্ত ও ফলপ্রসূ’ আখ্যা দিয়েছেন ট্রাম্প। শুক্রবার স্থানীয় সময় বিকেল ৩টার পর শুরু হওয়া এই ৩০ মিনিটের বৈঠককে ঘিরে মার্কিন রাজনীতিতে ব্যাপক আলোচনার জন্মেছে, কারণ মাত্র কয়েকদিন আগেও নির্বাচনী লড়াইয়ে দুজন একে অন্যের কঠোর সমালোচনায় সরব ছিলেন। প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকে ট্রাম্প নানান সময়ে মামদানিকে কটাক্ষ করেছিলেন, এমনকি নির্বাচনের সময় তাকে ‘চরম বামপন্থী হুমকি’ হিসেবেও আখ্যা দিয়েছিলেন। তবে শুক্রবারের বৈঠকে সেই রাজনীতিক রণভেরী একেবারেই অনুপস্থিত ছিল। বরং বৈঠক শেষে ট্রাম্প নবনির্বাচিত মেয়রকে ‘অসাধারণ প্রতিদ্বন্দ্বী’ আখ্যা দিয়ে বলেন, নিউইয়র্ক সিটির নেতৃত্ব দেওয়া একটি বিশাল দায়িত্ব এবং মামদানি সেই দায়িত্ব সফলভাবে পালন করবেন বলেই তিনি আশা করেন।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সামনে এসে ট্রাম্প বলেন, দুজনের মধ্যে বেশ কিছু মৌলিক বিষয়ে মিল রয়েছে এবং নিউইয়র্ক সিটির ভবিষ্যৎ উন্নতি নিয়ে তারা একই দৃষ্টিভঙ্গি ভাগাভাগি করেন। তিনি জানান, অপরাধ প্রবণতা কমানো, আবাসন সংকট সমাধান, সাশ্রয়ী জীবনযাত্রা নিশ্চিত করা এবং অর্থনৈতিক নিরাপত্তা জোরদারের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গ নিয়ে তাদের মধ্যে সাবলীল আলাপ হয়েছে। ট্রাম্প বলেন, “আমরা দুজনেই চাই আমাদের প্রিয় শহরটা ভালোভাবে এগিয়ে যাক। আজকের বৈঠক ছিল খুবই ভালো, খুবই ফলপ্রসূ।”
মামদানি সাংবাদিকদের জানান, প্রেসিডেন্টের সাথে তার প্রথম বৈঠক প্রত্যাশার চেয়ে বেশি গঠনমূলক ছিল। তিনি বলেন, “আমরা দুজনেই নিউইয়র্ককে ভালোবাসি। মানুষের জন্য সাশ্রয়ী জীবন ফিরিয়ে আনা—এটাই আমাদের আলোচনার মূল লক্ষ্য ছিল।” নির্বাচনে সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমোকে বড় ব্যবধানে হারিয়ে ৩৪ বছর বয়সে ইতিহাসের প্রথম মুসলিম হিসেবে নিউইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচিত হয়ে ব্যাপক আলোচনায় আসেন ডেমোক্র্যাট নেতা মামদানি। ১ জানুয়ারি তিনি এরিক অ্যাডামসের কাছ থেকে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ট্রাম্প ও মামদানির মধ্যে যে কঠোর বাকযুদ্ধ চলছিল, ওভাল অফিসে তার উল্টো চিত্র দেখা যায়। দুই পক্ষের সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ দেখে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এটি নিউইয়র্কবাসীর জন্য স্বস্তির বার্তা হতে পারে। বিশেষ করে অর্থনৈতিক চাপ, বাড়তি ভাড়া ও অপরাধ পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন নগরবাসীর কাছে এই বৈঠক এক ধরনের ইতিবাচক সঙ্কেত দিচ্ছে। তারা বলছেন, রাজনীতিতে স্থায়ী বন্ধুত্ব বা বৈরিতা বলে কিছু নেই—নগরবাসীর স্বার্থে সহযোগিতা যখন প্রয়োজন, তখন আগের বিরোধ গৌণ হয়ে যেতে পারে।