ইসরায়েলি ড্রোন নজরদারি ও হামলার অভিযোগের মধ্যে গাজামুখী “গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা” (Global Sumud Flotilla) ক্রমেই উচ্চ ঝুঁকির মুখে পড়ছে। বুধবার (১ অক্টোবর) পর্যন্ত ফ্লোটিলা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তাদের জাহাজগুলোকে একাধিকবার ড্রোন টার্গেট করেছে এবং যোগাযোগ ব্যবস্থায়ও হস্তক্ষেপ করা হয়েছে। সংগঠকেরা এটিকে স্পষ্টতই আন্তর্জাতিক আইনবিরোধী কর্মকাণ্ড বলে দাবি করেছেন।
ফ্লোটিলা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, চলমান যাত্রায় ড্রোন থেকে বিস্ফোরক ও ধাতব বস্তু নিক্ষেপ করা হয়েছে, ফলে কয়েকটি জাহাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থাও (স্যাটেলাইট ইন্টারনেট ও রেডিও) জ্যামিংয়ের কারণে অচল হয়ে পড়েছে। “জনি এম” (Johnny M) নামের একটি জাহাজ ইঞ্জিন ঘরে পানি প্রবেশ করলে জরুরি সংকেত পাঠাতে বাধ্য হয়। পরে তুর্কি কর্তৃপক্ষ যাত্রীদের নিরাপদে অন্য জাহাজে সরিয়ে নেয়। একইভাবে “ফ্যামিলি” (Family) নামের আরেকটি বড় জাহাজ ইঞ্জিন বিকল হয়ে মিশন থেকে সরে দাঁড়িয়েছে।
ইসরায়েলি গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, নৌবাহিনী তিনটি সম্ভাব্য পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করছে—
১. দ্রুত যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করে বাধা দেওয়া,
২. সম্পূর্ণ নৌ অবরোধ কার্যকর করা,
৩. এক রাত অপেক্ষা করে পরে আটক অভিযান চালানো।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তারা কোনোভাবেই “অবরুদ্ধ যুদ্ধক্ষেত্রে” নৌযান ঢুকতে দেবে না। তবে মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আন্তর্জাতিক সমুদ্র আইন এবং আন্তর্জাতিক আদালতের আদেশ অনুযায়ী শান্তিপূর্ণ মানবিক কনভয় আটকানো বেআইনি।
ড্রোন হামলার পর ইতালি ও স্পেন তাদের নৌবাহিনী ফ্লোটিলার পাশে মোতায়েন করে। তবে ইতালি ঘোষণা করেছে, তারা ১৫০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্তই সঙ্গ দেবে এবং তার পরে সরাসরি অংশ নেবে না। স্পেনও একই অবস্থান নিয়েছে—তারা মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করতে চাইলেও ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘাতে জড়াতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। ফলে ফ্লোটিলা এখনো কার্যত একা, যদিও আন্তর্জাতিক নজরদারি কিছুটা বেড়েছে।
🌍 এখানে ফ্লোটিলার লাইভ ট্র্যাকার যুক্ত হলো, যেখানে প্রতিটি জাহাজের বর্তমান অবস্থান রিয়েলটাইমে দেখা যাবে:
👉 Global Sumud Flotilla Tracker – Live Map
অস্ট্রেলিয়া, ইতালি ও স্পেনসহ একাধিক দেশ জানিয়েছে, তাদের নাগরিকরা ফ্লোটিলায় আছেন এবং নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন। অস্ট্রেলীয় সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। আন্তর্জাতিক সাংবাদিক সংগঠনগুলোও ফ্লোটিলায় থাকা সাংবাদিক ও মিডিয়া প্রতিনিধিদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
মানবাধিকার সংগঠনগুলোর অভিযোগ, যদি ইসরায়েল ফ্লোটিলার ওপর হামলা চালায় বা বাধা দেয়, তা আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গের পাশাপাশি মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ঘটনা ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (ICC) তদন্তের আওতায়ও আসতে পারে।
বাংলাদেশের খ্যাতিমান আলোকচিত্রী ও মানবাধিকারকর্মী শাহিদুল আলম এই ফ্লোটিলায় মিডিয়া প্রতিনিধি হিসেবে যোগ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “মানবতা যদি পরাজিত হয়, তবে মানবতাই পরাজিত হবে।” এটি বাংলাদেশের জন্য একটি ঐতিহাসিক অংশগ্রহণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, কারণ এ ধরনের ফ্লোটিলায় এবারই প্রথম কোনো বাংলাদেশি প্রতিনিধি যুক্ত হয়েছেন।
গাজায় অবরোধ ভেঙে মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর এই আন্তর্জাতিক উদ্যোগ ক্রমেই বড় সংঘাতের দিকে যাচ্ছে। ইসরায়েলের ড্রোন নজরদারি ও নৌবাহিনী প্রস্তুতি স্পষ্ট ইঙ্গিত দিচ্ছে, যেকোনো সময় সহিংস বাধা আসতে পারে। একদিকে সংগঠকেরা বলছেন, তারা কোনো বিকল্প রুট নেবেন না; অন্যদিকে ইসরায়েল বলছে, তারা কোনোভাবেই অবরোধ ভাঙতে দেবে না। এখন বিশ্বের চোখ ফ্লোটিলার দিকে, এবং আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া কী হবে—সেটিই নির্ধারণ করবে এই মানবিক মিশনের ভাগ্য।