মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে যৌথভাবে একটি ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন, যা গাজা উপত্যকায় চলমান সংঘাতের অবসান এবং পুনর্গঠনের লক্ষ্যে। প্রস্তাবের মুখ্য শর্তগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য — হামাস যদি ৭২ ঘণ্টার মধ্যে যুদ্ধবিরতি মেনে নেয় এবং সমস্ত বেঁচে ও মৃত জিম্মিদের প্রত্যাহার করে, তখন ইসরায়েল তাদের বন্দী পুনরায় ছাড়বে এবং গাজায় একটি আন্তর্জাতিক তত্ত্বাবধায়ক অস্থায়ী প্রশাসন গঠন করা হবে। এই পরিকল্পনার অন্যতম উল্লেখযোগ্য দিক হলো, গাজাকে একটি আন্তর্জাতিক অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসনের অধীনে আনার প্রস্তাব, যার নেতৃত্বে থাকবেন ট্রাম্প নিজেই।
প্রস্তাবিত প্রশাসনের কাঠামো:
নেতৃত্ব: ট্রাম্পের নেতৃত্বে একটি আন্তর্জাতিক শান্তি বোর্ড গঠিত হবে, যার সদস্য হিসেবে সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারও থাকবেন।
গভর্নেন্স: গাজার দৈনন্দিন প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একটি টেকনোক্র্যাটিক ফিলিস্তিনি কমিটি গঠিত হবে, যা আন্তর্জাতিক তত্ত্বাবধানে কাজ করবে।
নিরাপত্তা: গাজায় অভ্যন্তরীণ ও সীমান্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে একটি আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী (ISF) গঠিত হবে, যা ফিলিস্তিনি পুলিশকে প্রশিক্ষণ দেবে এবং পুনর্গঠনের জন্য পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করবে।
যদিও ইসরায়েল এই পরিকল্পনায় সমর্থন জানিয়েছে, হামাস এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। কূটনৈতিক সূত্রের বরাত দিয়ে আল জাজিরা জানিয়েছে, হামাস মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে প্রস্তাবটি পর্যালোচনা করছে। ট্রাম্প সংবাদ সম্মেলনে এই প্রস্তাবকে ‘ঐতিহাসিক’ আখ্যা দিয়ে বলেন, ইসরায়েল ও অন্যান্য মিত্র দেশগুলো ইতোমধ্যে সমর্থন জানিয়েছে; কিন্তু তিনি চাপ দিয়েছেন হামাস দ্রুত সম্মতি নিলে যুদ্ধ বন্ধ করা সম্ভব হবে। নেতানিয়াহুও সমর্থন জানিয়ে সতর্ক করে বলেছেন, হামাস যদি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বা মেনে নিয়ে ভিন্নকিছু করে, তবে ইসরায়েল এককভাবে অভিযান চালিয়ে পরিস্থিতি শেষ করবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
কিভাবে স্থানীয় নেতৃত্ব ও গাজাবাসীর অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করা হবে, বোর্ড অব পিসের বৈধতা কেমন হবে, এবং মুদ্রণীয় আইনগত ও মানবাধিকার-চিন্তা কি ধরনের গ্যারান্টি পাবে— এসব প্রশ্ন এখনও অন উত্তর রয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক কূটনীতিকদের মতে, বাস্তবায়নযোগ্যতা নির্ভর করবে হামাসের প্রতিক্রিয়া ও বৃহত্তর আরব ও আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সক্রিয় সমর্থনের উপরে।
অন্তর্বর্তী প্রশাসন বাস্তবায়নের আগে আইএসএফ নামে একটি আন্তর্জাতিক/আরব অংশীদারিত্বভিত্তিক নিরাপত্তা বাহিনী গঠনের প্রস্তাব রয়েছে, যা ফিলিস্তিনি পুলিশ প্রশিক্ষণ ও পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করবে; ইসরায়েল ধাপে ধাপে সেনা প্রত্যাহার করবে; এবং পুনর্গঠনের জন্য বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে।
এই পরিকল্পনাকে আরব, ইসলামিক এবং পশ্চিমা দেশগুলো স্বাগত জানালেও, গাজাবাসী ও কিছু রাজনৈতিক বিশ্লেষক এটিকে ‘অবাস্তব’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
ট্রাম্পের এই প্রস্তাব গাজার ভবিষ্যৎ গঠনে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে, তবে এর বাস্তবায়ন নির্ভর করবে হামাসের প্রতিক্রিয়া এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থনের ওপর। গাজাবাসীর অন্তর্ভুক্তি এবং তাদের মতামত এই প্রক্রিয়ার সফলতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।