কুমিল্লায় আবিষ্কৃত হয়েছে এক বিরল ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় নিদর্শন—প্রায় ৩৫০ বছরের পুরোনো ক্ষুদ্র কোরআন । আকারে দেড় ইঞ্চি লম্বা, এক ইঞ্চি চওড়া এবং এক-চতুর্থাংশ ইঞ্চি পুরু এ কোরআন এতটাই ছোট যে খালি চোখে এর লেখা পড়া যায় না, পড়তে হয় আতশি কাচের সাহায্যে। স্থানীয় বাসিন্দা ও গবেষকদের মতে, এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম প্রাচীন ও ক্ষুদ্রতম কোরআনের কপি।
ঐতিহাসিক এই কোরআন মজিদটি বর্তমানে সংরক্ষিত রয়েছে কুমিল্লা নগরের তালপুকুরপাড় এলাকার প্রবীণ বাসিন্দা জামিল আহমেদ খন্দকারের (৭৫) কাছে। তিনি জানান, তার পূর্বপুরুষেরা ইয়েমেন থেকে ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে এ অঞ্চলে এসেছিলেন। ধারণা করা হয়, সেই পরিবারের মাধ্যমেই শত শত বছর আগে এ কোরআনটি বাংলাদেশে আসে। বাবা আবদুল মতিন খন্দকারের মৃত্যুর পর থেকে তিনি এটি যত্নসহকারে সংরক্ষণ করে আসছেন।
ঐতিহ্য গবেষক আহসানুল কবির বলেন, প্রায় ৭০০ বছর আগে কুমিল্লায় মুসলমানদের আগমন ঘটলেও এখানে মুসলিম সভ্যতার বিকাশ শুরু হয় প্রায় ২৫০ বছর আগে। তখন ইয়েমেন ও মধ্য এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সাধক ও সম্ভ্রান্ত পরিবার ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে এখানে বসতি স্থাপন করেন। জামিল আহমেদের পরিবারও সে সময় কুমিল্লায় স্থায়ী হয়। গবেষকের মতে, এ ধরনের নিদর্শন শুধু পারিবারিক নয়, বরং আঞ্চলিক ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করে।
ইসলামি ইতিহাস গবেষক সৈয়দ সিরাজুল ইসলাম জানান, এ ধরনের ক্ষুদ্র কোরআন মজিদ বাংলাদেশে লেখা বা ছাপা হতো না। সাধারণত ইসলামি বিশ্বের অন্য দেশ থেকে সেগুলো আনা হতো। সে সময় এটি ছিল বিরল এবং অন্যতম ক্ষুদ্র কোরআনের কপি। তিনি বলেন, আধুনিক প্রযুক্তির কল্যাণে এখন আরও ছোট সংস্করণ তৈরি সম্ভব হলেও শত শত বছর আগে এত ক্ষুদ্র কপি তৈরি করা ছিল অত্যন্ত জটিল ও বিশেষজ্ঞসুলভ কাজ।
স্থানীয় গবেষকরা মনে করেন, জামিল আহমেদের হাতে সংরক্ষিত এ কোরআন শুধু একটি ধর্মীয় গ্রন্থ নয়, বরং ইতিহাস ও ঐতিহ্যের মূল্যবান দলিল। দীর্ঘদিন ধরে নিদর্শনটি রক্ষা করায় তিনি প্রশংসা পেয়েছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোরআন মজিদটি সরকারিভাবে সংরক্ষণ ও প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হলে এটি দেশি-বিদেশি গবেষক ও পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় সম্পদে পরিণত হবে।