ফ্রান্স আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিনকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের বার্ষিক বৈঠকের আগে প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এই ঘোষণা দেন। আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক অঙ্গনে এটি একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এর মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে অচলাবস্থায় থাকা দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান প্রসঙ্গে নতুন করে আন্তর্জাতিক আলোচনা শুরু হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হলো।
আল-জাজিরার লাইভ আপডেটে জানানো হয়, সর্বশেষ দেশ হিসেবে ফ্রান্স ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এর আগে যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, পর্তুগাল, আন্দোরা, বেলজিয়াম, লুক্সেমবার্গ, মাল্টা, মনাকো ও সান মারিনো একই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। ফলে পশ্চিমা ও ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে ফিলিস্তিনপন্থী অবস্থান জোরদার হলো।
প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ এক ভিডিও বার্তায় বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। তিনি বলেন, ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন—পাশাপাশি দুটি রাষ্ট্র গড়ে তুলতে হবে, যেখানে উভয় পক্ষ একে অপরকে স্বীকৃতি দেবে। এর মাধ্যমেই শান্তির পথে অগ্রসর হওয়া সম্ভব। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিবিএস নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারেও ম্যাক্রোঁ একই অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন।
তবে এ স্বীকৃতি এমন এক সময়ে এলো যখন গাজায় ইসরায়েলের হামলা অব্যাহত রয়েছে। সোমবার ভোর থেকে টানা বিমান ও গোলাবর্ষণে কমপক্ষে ৩৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ৩০ জনই গাজা শহরের বাসিন্দা। স্থানীয় সূত্র বলছে, চলমান অভিযানে ঘরবাড়ি, অবকাঠামো ও স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ফ্রান্সের এই পদক্ষেপকে তাৎপর্যপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, পশ্চিমা শক্তিধর দেশগুলোর মধ্যে ফ্রান্স প্রথম বড় শক্তি যারা আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিল। যদিও এই স্বীকৃতি জাতিসংঘে ফিলিস্তিনকে পূর্ণ সদস্যপদ নিশ্চিত করছে না, তবে এটি ইসরায়েলের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়াতে পারে এবং ভবিষ্যতে কূটনৈতিক আলোচনায় নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে।
এদিকে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশন ঘিরে বৈশ্বিক সম্মেলনের আয়োজন করেছে ফ্রান্স ও সৌদি আরব। সম্মেলনে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের রূপরেখা এবং আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সম্ভাব্য ভূমিকা নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। মানবাধিকার সংস্থা ও ত্রাণকর্মীরা আশা করছেন, ফ্রান্সের এই উদ্যোগ গাজায় চলমান মানবিক সংকট মোকাবিলা ও যুদ্ধবিরতির দাবি জোরদার করতে ভূমিকা রাখবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান। যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো ক্ষমতা থাকায় জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ এখনো অনিশ্চিত। তবু ফ্রান্সের স্বীকৃতি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ফিলিস্তিনের বৈধতা প্রতিষ্ঠার লড়াইকে আরও শক্তিশালী করেছে।
চলমান যুদ্ধ, মানবিক সংকট ও রাজনৈতিক অচলাবস্থার মধ্যে ফ্রান্সের এই ঘোষণা ফিলিস্তিনি জনগণের কাছে আশার আলো জাগিয়েছে। তবে শান্তি প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে কেবল প্রতীকী স্বীকৃতি যথেষ্ট নয়; বাস্তবে কার্যকর উদ্যোগ, যুদ্ধবিরতি এবং আলোচনার টেবিলে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনকে বসানোই এখন সবচেয়ে জরুরি।