চীনের সহায়তায় বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে ব্যাপক বিনিয়োগের মাধ্যমে নতুন হাসপাতাল নির্মাণ ও আধুনিক চিকিৎসা প্রযুক্তির সূচনা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই ঢাকায় বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএমইউ) চালু হয়েছে দেশের প্রথম রোবটিক ফিজিওথেরাপি সেন্টার, যেখানে ৬২টি উন্নত রোবোটিক থেরাপি ইউনিট রয়েছে। এর মধ্যে ২২টি ইউনিট কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি দ্বারা পরিচালিত। এই কেন্দ্রের মাধ্যমে প্রতিদিন প্রায় ৩০০ রোগীকে উন্নত ফিজিওথেরাপি সেবা দেওয়া সম্ভব হবে।
চীনের সহায়তায় শুধু রাজধানী নয়, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলেও হাসপাতাল নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। নীলফামারী মেডিক্যাল কলেজের কাছাকাছি ১৬ একর জায়গায় এক হাজার শয্যাবিশিষ্ট বিশেষায়িত হাসপাতাল, চট্টগ্রামের দক্ষিণ কর্ণফুলীতে ৫০০–৭০০ শয্যার জেনারেল হাসপাতাল এবং ধামরাইয়ে ১০০ শয্যাবিশিষ্ট রিহ্যাবিলিটেশন হাসপাতাল নির্মাণ করা হবে। এই হাসপাতালগুলো গুরুতর আহত ও প্রতিবন্ধী রোগীদের পুনর্বাসন এবং সাধারণ চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করবে।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সংস্কার ও আধুনিকায়নের জন্যও চীনের অর্থায়ন নিশ্চিত হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান বলেন, হাসপাতাল নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাই শেষ হয়েছে এবং এখন চীনের নিজস্ব টিম চূড়ান্ত যাচাই করছে। তিনি উল্লেখ করেন, “স্থান নির্ধারণ এখনো পরিবর্তনযোগ্য, তবে বিশেষায়িত হাসপাতালটি উত্তরাঞ্চলে হবে।”
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম জানিয়েছেন, চীনের সহায়তায় ইতিমধ্যে উত্তরাঞ্চলে এক হাজার শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল নির্মাণ, সরঞ্জাম সরবরাহ এবং চিকিৎসক, নার্স ও টেকনিশিয়ানদের প্রশিক্ষণের জন্য সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়েছে। এছাড়া, চীনা মেডিক্যাল ইকুইপমেন্ট প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী।
রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক মো. হারুন-অর-রশীদ বলেন, নীলফামারী সদর হল হাসপাতাল নির্মাণের জন্য ভৌগোলিক ও যোগাযোগ সুবিধা বিবেচনায় সর্বোত্তম স্থান। তিনি বলেন, প্রাথমিক পরিদর্শনের পর এই জায়গার সার্বিক পরিস্থিতি সন্তোষজনক ও কার্যকর মনে হয়েছে।
স্বাস্থ্য খাত বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, চীনের বিনিয়োগ ও প্রযুক্তি সহায়তা দেশের স্বাস্থ্যসেবা খাতকে অত্যাধুনিক ও জনমুখী হিসেবে গড়ে তুলবে। দেশের ওষুধ কম্পানি ও মেডিক্যাল সরঞ্জাম ব্যবসায়ীরা ইতিমধ্যেই চীন থেকে কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি আমদানি করে থাকেন। এছাড়া, মেডিক্যাল শিক্ষার্থীদের চীনে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ এবং করোনার ভ্যাকসিনের ক্রয়ও দেশের স্বাস্থ্য খাতে চীনের অবদানের অংশ।
চীনের এই বিনিয়োগ ও সহায়তা বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার আধুনিকায়ন, নতুন হাসপাতাল নির্মাণ এবং পুনর্বাসন সেবার সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চল, চট্টগ্রাম ও ধামরাইয়ে হাসপাতাল নির্মাণ দেশের স্বাস্থ্যখাতে নতুন দিগন্তের সূচনা করবে।