বাংলাদেশে চলমান তদন্তের মধ্যেই যুক্তরাজ্যে শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরা নিজেদের মালিকানাধীন সম্পত্তি বিক্রি, হস্তান্তর বা বন্ধক রাখার মতো কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান এবং দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল–এর এক যৌথ অনুসন্ধানে এমন অন্তত ২০টি লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে, যেগুলোর আবেদন যুক্তরাজ্যের জমি নিবন্ধন প্রতিষ্ঠানে গত এক বছরে জমা পড়ে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকারের উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের ছেলে ও ভাতিজার প্রায় ১,৪৬৯ কোটি টাকার সম্পদ এনসিএ (ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি) জব্দ করেছে। একইভাবে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর প্রায় ২,৭৭৬ কোটি টাকার সম্পত্তি জব্দ হয়, যার মধ্যে যুক্তরাজ্যে রয়েছে ৩০০টির বেশি সম্পদ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর এবং অন্তর্বর্তী সরকারের অন্য নেতারা যুক্তরাজ্য সরকারকে অনুরোধ করেছেন, যাতে এসব সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের আরও সম্পদ জব্দ করে এবং তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত লেনদেন বন্ধ রাখা হয়।
এছাড়া বসুন্ধরা গ্রুপের কর্ণধার আহমেদ আকবর সোবহান এবং তার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা বেশ কিছু সম্পত্তির লেনদেন সম্পর্কিত তথ্যও উঠে এসেছে। সারে’র ভার্জিনিয়া ওয়াটারে অবস্থিত একটি বিলাসবহুল ম্যানশনসহ এসব সম্পত্তির মূল্য প্রায় কয়েক শত কোটি টাকা।
সাইফুজ্জামান চৌধুরীর ভাই আনিসুজ্জামান চৌধুরীর মালিকানাধীন রিজেন্টস পার্কের একটি বাড়ি গত জুলাইয়ে বিক্রি হয় এবং এরপর আরও তিনটি লেনদেনের আবেদন করা হয়। তাঁর আইনজীবীরা দাবি করেছেন, সম্পদ জব্দের মতো কোনো বৈধ কারণ নেই।
এছাড়া যুক্তরাজ্যের জমি নিবন্ধন প্রতিষ্ঠানে সালমান এফ রহমানের পরিবারের মালিকানাধীন তিনটি সম্পত্তির লেনদেনের আবেদনও জমা পড়েছে। তবে তাদের আইনজীবীরা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিযোগের কথা বলেছেন এবং তদন্তে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।
ব্রিটিশ এমপি জো পাওয়েল বলেছেন, অতীতে দেখা গেছে তদন্ত চলার সময় দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে সম্পত্তিগুলো স্থানান্তর হয়ে যেতে পারে। তিনি তদন্ত দ্রুত সম্পন্ন ও কার্যকর সম্পদ জব্দের পক্ষে মত দিয়েছেন।
এই অনুসন্ধানে স্পষ্ট হয়েছে, রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী এসব ব্যক্তি তদন্তের মুখে পড়লেও, যুক্তরাজ্যে এখনো তাঁদের সম্পদ লেনদেনের সুযোগ রয়েছে, যা বিচার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।