হিজরি বর্ষ - দৈনিক সাবাস বাংলাদেশ
নোটিশ:
শিরোনামঃ
তাবলিগ জামাত করোনা ছড়ায়নি — রায় দিল আদালত ড. মুহাম্মদ ইউনূস সেনাসদর নির্বাচনী পর্ষদ-২০২৫ উদ্বোধন করলেন বাংলাদেশে তদন্ত, লন্ডনে সম্পদ লেনদেন: হাসিনার ঘনিষ্ঠরা রাডারের নিচে! নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদে দুদিনব্যাপী গবেষণা সেমিনার  শেকৃবিতে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’২৪ বর্ষপূর্তিতে কর্মসূচি ঘোষণা বিইউপি শিক্ষার্থী কবেরি হালদার কঙ্কার আন্তর্জাতিক সাফল্য ভক্সের অভিবাসী বিতাড়নের ঘোষণার প্রতিবাদে মাদ্রিদে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ সাজিদ মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত ও নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে ইবিতে বিক্ষোভ জাবি ছাত্রদলের আয়োজনে শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা জাবিতে বোরকা নিয়ে কটুক্তির অভিযোগ বামপন্থী নেত্রীর বিরুদ্ধে

হিজরি বর্ষ

সংকলিত
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২৭ জুন, ২০২৫
  • ৩৯ বার দেখা হয়েছে

মুহাররম মাস। হিজরী বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস। এখান থেকেই শুরু হয় ইসলামের নতুন বছর। চাঁদের আবর্তনকে কেন্দ্র করে বছর গণনা করা হয়। একটি চাঁদের উদয় আরেকটির আগমনের মধ্য দিয়ে মাস পূর্ণ হয় এবং এভাবে বারোটি মাস নিয়ে গঠিত হয় হিজরী বছর। ইসলামপূর্ব যুগেও চাঁদের উপর ভিত্তি করে দিন-তারিখ নির্ধারণের রীতি প্রচলিত ছিল, আর ইসলাম সে সহজ ও স্বাভাবিক পদ্ধতিকেই বৈধতা দিয়েছে। কেননা, পৃথিবীর যে প্রান্তেই মানুষ থাকুক না কেন — শিক্ষিত-অশিক্ষিত, শহুরে কিংবা বন-জঙ্গল, পাহাড়-পর্বতে থাকা ব্যক্তি — সবাই সহজে চাঁদের অবস্থা দেখে দিন, মাস ও সময় নির্ধারণ করতে পারে।

পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা স্পষ্ট করে বলেছেন:

يَسْـَٔلُوْنَكَ عَنِ الْاَهِلَّةِ قُلْ هِيَ مَوَاقِيْتُ لِلنَّاسِ وَ الْحَجِّ
“তারা আপনাকে নতুন চাঁদ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। আপনি বলুন, এটা মানুষের জন্য সময় নির্ধারক এবং হজের সময় গণনার মাধ্যম।” (সূরা বাকারা ২:১৮৯)

এছাড়াও সূর্যও সময় নির্ধারণের জন্য আল্লাহর একটি সৃষ্টি। কুরআন বলছে:

وَ جَعَلْنَا الَّيْلَ وَ النَّهَارَ آيَتَيْنِ… لِتَعْلَمُوا عَدَدَ السِّنِينَ وَ الْحِسَابَ
“আমি রাত ও দিনকে দুটি নিদর্শন বানিয়েছি… যাতে তোমরা বছরের সংখ্যা ও সময়ের হিসাব জানতে পারো।” (সূরা বনী ইসরাঈল ১৭:১২)

চাঁদ ও সূর্য আল্লাহর অপার নিয়ামত। কুরআনের বর্ণনায় রয়েছে, আল্লাহ এই সময় গণনার ব্যবস্থাকে মানুষের কল্যাণের জন্য নির্ধারণ করেছেন এবং এ জন্য বান্দার উচিত তাঁকে কৃতজ্ঞতা জানানো।

হিজরী বছর, ঈসায়ী ও বাংলা— তিন বর্ষপঞ্জিরই মাস সংখ্যা বারো। তবে কুরআনে হিজরী বর্ষের চারটি মাসকে মর্যাদাপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন:

اِنَّ عِدَّةَ الشُّهُوْرِ عِنْدَ اللهِ اثْنَا عَشَرَ شَهْرًا… مِنْهَاۤ اَرْبَعَةٌ حُرُمٌ
“আল্লাহর বিধানে মাসের সংখ্যা বারো, এর মধ্যে চারটি সম্মানিত।” (সূরা তাওবা ৯:৩৬)

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও এই চার মাসের কথা বলেছেন: যিলক্বদ, যিলহজ, মুহাররম এবং রজব। এ মাসগুলোতে বিশেষভাবে গোনাহ থেকে বাঁচার নির্দেশ দিয়েছেন। কারণ এসব মাসে গোনাহের ভয়াবহতা বেশি। আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করাই নিজের উপর সবচেয়ে বড় জুলুম।

বরেণ্য আরব সাহিত্যিক শায়খ আলী তানতাবী তার লেখায় মুহাররমকে বছরের এক মানযিল বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, মানুষ এক স্টেশনে এসে দাঁড়িয়ে ভাবে — কতদূর এলাম, কত বাকি, কী করলাম, কী করা উচিত ছিল। জীবনের হিসাব-নিকাশের এ সময়টুকু আখিরাতের প্রস্তুতির জন্য এক অনন্য সুযোগ।

তিনি দুনিয়ার ভোগবিলাসের মরীচিকার মতো অস্থায়ীতা তুলে ধরেন। ইবনুল জাওযী রাহ. বলেন, দুনিয়ার উপভোগ পরিবেশিত হয়, কিন্তু ভোগ করা যায় না। আনন্দগুলো ক্ষণস্থায়ী, তৃপ্তিহীন। প্রকৃত পরিতৃপ্তি শুধু আখেরাতের। এই দুনিয়া যেন এক প্রদর্শনী— চোখের পরিতৃপ্তি, মালিকানার নয়।

শায়খ আলী তানতাবীর আরেক উপলব্ধি ছিল বিমানবন্দরে। মানুষ সেখানে নাস্তা করছে, আড্ডা দিচ্ছে, একে অপরের ঘনিষ্ঠ। হঠাৎ এক ঘোষণায় একদল রওনা হলো লন্ডনে, একদল জাকার্তায়, কেউ আমেরিকায়, কেউ কঙ্গোতে। যেমন দুনিয়ায় সবাই মেতে থাকে, হঠাৎ মৃত্যুর ডাক আসে। কারও প্রস্তুতি থাকে, কারও থাকে না। কেউ পরিপূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে চলে, কেউ না-থাকা সত্ত্বেও বিদায় নিতে বাধ্য হয়। অথচ জানাজা পড়েও মানুষ ভাবে সে চিরকাল থাকবে!

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

كُنْ فِي الدُّنْيَا كَأَنَّكَ غَرِيبٌ أَوْ عَابِرُ سَبِيلٍ، وَعُدَّ نَفْسَكَ فِي أَهْلِ القُبُورِ
“তুমি এই দুনিয়ায় এমনভাবে থাকো, যেন তুমি পথিক কিংবা পরদেশী। আর নিজেকে কবরবাসীদের একজন মনে করো।” (তিরমিযী, হাদীস ২৩৩৩)

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. বলেন:

إِذَا أَمْسَيْتَ فَلَا تَنْتَظِرِ الصَّبَاحَ…
“যখন সন্ধ্যা আসবে, সকাল পর্যন্ত বেঁচে থাকার আশা করো না। যখন সকাল হবে, সন্ধ্যা পর্যন্ত আশা করো না। সুস্থ অবস্থায় অসুস্থতার এবং জীবিত অবস্থায় মৃত্যুর প্রস্তুতি নাও।” (সহীহ বুখারী)

আজকের নতুন বছর যেন শুধু তারিখের পালাবদল না হয়। মুহাররম মাসকে সামনে রেখে আসুন নিজের হিসাব করি। ঈমান, আমল, চরিত্র পরিশুদ্ধ করি। কায়মনোবাক্যে আল্লাহর কাছে দুনিয়া ও আখেরাতের কামিয়াবি প্রার্থনা করি। আল্লাহ তাআলা যেন আমাদের সকলকে মৃত্যু ও আখেরাতের সফরের পূর্বপ্রস্তুতির তাওফিক দেন — আমীন।

শেয়ার করুন

Comments are closed.

এই ধরনের আরও নিউজ

© কপিরাইট ২০২৪-২০২৫ | সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: NagorikIT