বিএসএফের পুশ-ইন রহম আলী, পাটগ্রাম স্টেশনে স্ত্রী-সন্তান হারানোর কান্না - দৈনিক সাবাস বাংলাদেশ
নোটিশ:
শিরোনামঃ
ব্লগার ফারাবির জামিন মঞ্জুর ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি: ইউক্রেন যুদ্ধ না থামালে পুতিনের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা যুদ্ধ বন্ধ না হলে সেপ্টেম্বরে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেবে যুক্তরাজ্য সাবেক আইজিপি মামুনের স্বীকারোক্তি: সেনানিবাসে কীভাবে আশ্রয় নিলেন ৩৭ বছর পর ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিলেন দুই বাংলাদেশি সাঁতারু – সাগর ও হিমেল রাশিয়ার উপকূলে ৮.৭ মাত্রার ভয়াবহ ভূমিকম্প, সুনামি সতর্কতায় কাঁপছে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের কয়েকটি দেশ যুক্তরাজ্যে বিমানে মুসলমান সেজে ‘জঙ্গী’ হবার চেষ্টা ভারতীয় বংশোদ্ভূত হিন্দুর! ডাকসু নির্বাচন ৯ সেপ্টেম্বর, ছয় কেন্দ্রে হবে ভোটগ্রহণ পর্তুগালের প্রেসিডেন্ট অভিবাসন আইন-২৫ অনুমোদন স্থগিত করে আদালতে পাঠালেন ফার্মগেটে বিআরটিসি দোতলা বাসের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের পিলারে ধাক্কা

বিএসএফের পুশ-ইন রহম আলী, পাটগ্রাম স্টেশনে স্ত্রী-সন্তান হারানোর কান্না

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন, ২০২৫
  • ৬৯ বার দেখা হয়েছে

রহম আলী – পাটগ্রাম রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্মের এক কোণে নির্বাক হয়ে বসে আছেন এক যুবক। রহম আলীর চোখেমুখে গভীর শোক, ক্লান্তি আর অসহায়ত্বের ছাপ। ভারতের আসাম রাজ্যের নাগাঁও জেলার বাসিন্দা বলে নিজেকে পরিচয় দিলেও আজ তিনি বাংলাদেশে একেবারে ঠিকানাহীন। জানালেন, ঈদের ঠিক ক’দিন আগে রাতের অন্ধকারে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ তাকে জোর করে ঠেলে দিয়েছে বাংলাদেশের মাটিতে। সেই থেকে এ স্টেশন থেকে ও স্টেশন, কোথাও তার ঠাঁই নেই, মাথা গোঁজার ঠিকানা নেই।

কান্নাজড়িত গলায় রহম আলী বললেন, “আমার জন্মভিটা আসাম রাজ্যের জুড়িয়া গ্রামে। আমার বাবা আব্দুল মাসুদ, ভাই-বেরাদর সবাই ভারতীয় নাগরিক। ঘরে ঘরে ভোটার আইডি কার্ড, ভূমির কাগজ, পুরনো সব নথি আছে। তবুও বিএসএফ কোনো কথা শুনলো না। পরিচয়পত্র দেখানোর সুযোগটুকু পর্যন্ত দিল না। ঈদের আগে রাতে ঘর থেকে তুলে এনে খালি গায়ে সীমান্তের ওপারে ঠেলে দিল। তখন থেকে আমি রাষ্ট্রহীন। আমার স্ত্রী-সন্তানরা ভারতে। আর আমি এখানে অজানা অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে আছি। কী করবো, কোথায় যাবো—কিছুই জানি না।”

পাটগ্রাম স্টেশনের চায়ের দোকানি রমজান আলী কষ্টভরা সুরে বললেন, “কয়েকদিন ধরে মানুষটারে স্টেশনে ঘুরতে দেখছি। খুব অসহায় অবস্থা। কেউ দেখে না, খোঁজও নেয় না। শুনলাম ইন্ডিয়া থেকে বিএসএফ পাঠাই দিছে। আহারে, বউ-বাচ্চার কথা মনে করে কত কান্নাকাটি করে। এই লোকগুলো কোথায় যাবে, কী খাবে? সরকার কি দেখবে না এসব?”

সমাজকর্মী আজমল হোসেন জানালেন, এই ঘটনা কোনো বিচ্ছিন্ন বিষয় নয়। প্রায়ই দেখা যায় বিএসএফের তাড়া খেয়ে বা জোর করে বাংলাদেশে পাঠানো মানুষেরা কোনো স্টেশন, বাজার বা গাছতলায় আশ্রয় নেয়। রহম আলীর ঘটনা তারই এক নির্মম উদাহরণ। একজন মানুষকে তার পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করে, নিজের দেশ-পরিচয় কেড়ে নিয়ে এভাবে সীমান্তের ওপারে ফেলে দেওয়া এক ভয়াবহ অমানবিক কাজ। এটা সরাসরি মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। তিনি বলেন, “মানবিকতার জায়গা থেকে আমাদের প্রশাসন, বিজিবি ও দুই দেশের সরকারকে এ বিষয়ে জরুরি আলোচনায় বসতে হবে। নয়তো এসব নিরীহ মানুষ এভাবেই অবহেলায় পড়ে থাকবে, যারা কারও নয়।”

বাংলাদেশের মাটিতে ঠিকানাহীন রহম আলীদের গল্প বারবারই শোনাচ্ছে সীমান্তের মানবিক বিপর্যয়ের করুণ সুর।

শেয়ার করুন

Comments are closed.

এই ধরনের আরও নিউজ

© কপিরাইট ২০২৪-২০২৫ | সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: NagorikIT