নোটিশ:
শিরোনামঃ
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায়: সরকারের বিবৃতি গাজায় ভয়াবহ হামাস হামলা, নিহত ১৯ ইসরাইলি সেনা ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে বলিউডে সিনেমা তৈরির হিড়িক ঈদুল আজহা উপলক্ষে ২১ মে থেকে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু গোপনে বিদেশে পাড়ি জমালেন সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ভারত-পাকিস্তানকে সংঘর্ষ থামানোর আহ্বান ট্রাম্পের আন্তর্জাতিক স্টেভি অ্যাওয়ার্ড বিজয়ী তালিকায় গুগল-অ্যামাজনের সাথে বাংলাদেশী প্রকৌশলী তাসরুজ্জামান বাবু ভারতের হামলার পাল্টা জবাবে প্রস্তুত পাকিস্তান, সশস্ত্র বাহিনীকে অনুমতি ঠাকুরগাঁও সীমান্তে তিন বাংলাদেশি নাগরিককে আটক করেছে বিএসএফ পুঁজিভিত্তি জোরদার করতে ১,৫০০ কোটি টাকার বন্ড ইস্যুর পরিকল্পনা পূবালী ব্যাংকের

চীন-বাংলাদেশ কৌশলগত অংশীদারত্ব জোরদার: তিস্তা প্রকল্প ও মোংলা বন্দর উন্নয়নে বড় চুক্তি

ডেস্ক নিউজ
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২৮ মার্চ, ২০২৫
  • ৪১ বার দেখা হয়েছে
চীন-বাংলাদেশ কৌশলগত অংশীদারত্ব
প্রধান উপদেষ্টার সাথে চীনের প্রেসিডেন্ট, ছবি: প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক পেজ

গণপ্রজাতন্ত্রী চীন ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মধ্যে কৌশলগত অংশীদারিত্ব ও উন্নয়ন সহযোগিতা আরও সুসংহত করতে ২৮ মার্চ ২০২৫ তারিখে একটি ঐতিহাসিক যৌথ ঘোষণা প্রকাশিত হয়েছে। এতে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশের তিস্তা নদী ব্যবস্থাপনা প্রকল্প ও মোংলা বন্দর আধুনিকায়ন-সংক্রান্ত চুক্তিগুলোর ওপর। দুই দেশের মধ্যে জলসম্পদ ব্যবস্থাপনা, অবকাঠামো উন্নয়ন, বাণিজ্যিক সহযোগিতা এবং আঞ্চলিক সংযোগ বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে।

সফর ও কূটনৈতিক বৈঠক

বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়ার আমন্ত্রণে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস ২৬-২৭ মার্চ চীনের হাইনান প্রদেশে বার্ষিক সম্মেলনে যোগ দেন। এরপর ২৭-২৯ মার্চ তিনি সরকারি আমন্ত্রণে বেইজিং সফর করেন।

সফরকালে তার সঙ্গে চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং, ভাইস প্রিমিয়ার ডিং শুয়েশিয়াং এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট হান ঝেং-এর দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনায় তিস্তা নদী পুনর্বাসন প্রকল্প ও মোংলা বন্দর উন্নয়ন-সহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে চীনের বিনিয়োগ ও কারিগরি সহায়তা নিশ্চিত করার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

তিস্তা নদী ব্যবস্থাপনা প্রকল্প: জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় নতুন দিগন্ত

তিস্তা নদী বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তবে শুষ্ক মৌসুমে পানি সংকট ও বর্ষায় বন্যার কারণে কৃষি, বাস্তুসংস্থান ও জীবনযাত্রা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য:
১. নদী পুনঃখনন ও ড্রেজিং করে পানির প্রবাহ নিশ্চিত করা
২. তীর সংরক্ষণ ও বাঁধ নির্মাণ করে বন্যা নিয়ন্ত্রণ
৩. নদীর পাড়ে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা
৪. সেচ ব্যবস্থার উন্নয়ন করে কৃষি উৎপাদন বাড়ানো

চীন ১.২ বিলিয়ন ডলারের একটি বিশেষ প্রকল্প বাস্তবায়নে সম্মত হয়েছে, যা তিস্তা নদীকে একটি আধুনিক জল ব্যবস্থাপনা মডেলে রূপান্তর করবে। চীনা বিশেষজ্ঞরা ইতোমধ্যে নদী জরিপ ও পরিকল্পনার কাজ সম্পন্ন করেছেন এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন ২০২৫ সালের শেষের দিকে শুরু হবে।

চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং বলেছেন—
“তিস্তা নদী বাংলাদেশের কৃষি, জনগণের জীবনমান ও পরিবেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চীন সর্বোচ্চ প্রযুক্তি ও অর্থায়ন সহায়তা দিয়ে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে, যা বাংলাদেশ-চীন অংশীদারিত্বকে আরও শক্তিশালী করবে।”

বাংলাদেশের সরকার বিশ্বাস করে যে, এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে উত্তরবঙ্গের কৃষি ও শিল্প খাতে বিপুল পরিবর্তন আসবে এবং লাখো মানুষ উপকৃত হবে।

মোংলা বন্দর আধুনিকায়ন ও আঞ্চলিক সংযোগ সম্প্রসারণ

বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর মোংলা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জন্য ক্রমেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। তবে বিদ্যমান অবকাঠামো ও নাব্যতা সংকটের কারণে এটি পুরোপুরি কার্যকরভাবে ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে না।

চীন-মোংলা আধুনিকায়ন চুক্তির মূল দিক:

  1. নতুন গভীর সমুদ্র টার্মিনাল নির্মাণ

  2. ড্রেজিং ও নাব্যতা বৃদ্ধির মাধ্যমে বৃহৎ জাহাজ চলাচলের সক্ষমতা বাড়ানো

  3. রেল ও সড়ক সংযোগ সম্প্রসারণ

  4. স্বয়ংক্রিয় পোর্ট ম্যানেজমেন্ট ব্যবস্থা চালু করা

চীনের নেতৃত্বে $৮০০ মিলিয়ন ডলারের একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে, যার মাধ্যমে মোংলা বন্দর দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রধান বাণিজ্যকেন্দ্রে পরিণত হবে।

বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেন—
“মোংলা বন্দর আধুনিকায়নের মাধ্যমে আমাদের বাণিজ্যিক সক্ষমতা বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে এবং দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতিতে বাংলাদেশ আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।”

চীনা কোম্পানিগুলো ইতোমধ্যে বন্দরের উন্নয়ন কাজের প্রাথমিক সমীক্ষা সম্পন্ন করেছে এবং ২০২৬ সালের মধ্যে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু হবে।

অন্যান্য চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক (MoU)

সফরকালে আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে—

  • বাংলাদেশ থেকে চীনে কৃষিপণ্য রপ্তানি বৃদ্ধির চুক্তি

  • বাংলাদেশ-চীন মুক্ত বাণিজ্য আলোচনা শুরু করার সমঝোতা স্মারক

  • চীনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি ও গবেষণা সুযোগ বৃদ্ধি

রোহিঙ্গা সংকট ও মিয়ানমার পরিস্থিতি

বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন ও সমাধানের ক্ষেত্রে চীনের গঠনমূলক ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করেছে। চীন বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে ত্রিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত সমাধান নিশ্চিত করার আশ্বাস দিয়েছে।

উপসংহার

এই সফরের মাধ্যমে চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হলো। বিশেষ করে তিস্তা নদী পুনর্বাসন প্রকল্প ও মোংলা বন্দর উন্নয়ন-সংক্রান্ত চুক্তি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে যুগান্তকারী প্রভাব ফেলবে।

চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং ও বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস একসঙ্গে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে—
“দুই দেশ একযোগে কাজ করে আঞ্চলিক সংযোগ, বাণিজ্য ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করবে।”

এই ঐতিহাসিক চুক্তিগুলো বাংলাদেশের অর্থনীতির গতিকে আরও ত্বরান্বিত করবে এবং চীন-বাংলাদেশ অংশীদারিত্ব নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে।

  • দৈনিক সাবাস বাংলাদেশ এর সর্বশেষ নিউজ পড়তে ক্লিক করুন: সর্বশেষ
  • দৈনিক সাবাস বাংলাদেশ এর ফেসবুক পেজটি ফলো করুন: dailysabasbd

শেয়ার করুন

Comments are closed.

এই ধরনের আরও নিউজ

© কপিরাইট ২০২৪-২০২৫ | সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: NagorikIT