১৯৯৬ সালের পর সেই উচ্ছ্বাস আর ফিরে আসেনি পাকিস্তানে- দৈনিক সাবাস বাংলাদেশ
নোটিশ:
শিরোনামঃ
তুরস্কের দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কুবির সমঝোতা স্মারক চুক্তি স্বাক্ষর কওমি ডিগ্রিধারীদের জন্য কাজী হওয়ার দরজা খুলল; আরও সরকারি খাত উন্মুক্তের দাবি সীমান্তে তীব্র গুলি বিনিময়, পাকিস্তান–আফগানিস্তান উত্তেজনা চরমে জাককানইবিতে সমুদ্র ও জলবায়ু–বিষয়ক ‘Exploring the Blue Earth’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক কর্মশালা অনুষ্ঠিত দুধকুমার নদে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে এসিল্যান্ডের হস্তক্ষেপ, স্বস্তিতে তীরবর্তী বাসিন্দারা ইবিতে জুলাই বিপ্লববিরোধী অভিযোগে ফের ৯ শিক্ষক বরখাস্ত নানিয়ারচর জোন (১৭ই বেংগল) এর মানবিক উদ্যো‌গে বিনামূল্যে শিক্ষা সামগ্রী বিতরণ সিলেট উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রথম নির্বাহী পরিচালক হলেন মো. সাদি উর রহিম জাদিদ আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস উপলক্ষে ইবিতে আলোচনা সভা জামায়াতের মনোনয়নে কে এই হিন্দু প্রার্থী

১৯৯৬ সালের পর সেই উচ্ছ্বাস আর ফিরে আসেনি পাকিস্তানে :চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি

স্পোর্টস ডেস্ক
  • আপডেট সময় সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫
  • ১৪৩ বার দেখা হয়েছে
করাচিতে ১৯৯৬ সালে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের বিলবোর্ড, ছবি: এপি

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি আসন্ন, তাই স্বাভাবিকভাবেই পাকিস্তানের মানুষের মন পড়ে আছে ২৯ বছর আগে তাদের দেশে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের দিকে।

“সবচেয়ে খারাপ অভিজ্ঞতা,” এক মুহূর্তও দেরি না করে বলেন আকিব জাভেদ, “ছিল ব্যাঙ্গালোর।”

আমরা তখন গাদ্দাফি স্টেডিয়ামের জাতীয় ক্রিকেট একাডেমির প্রশিক্ষণ নেটের পেছনে দাঁড়িয়ে আছি। পাঞ্জাবের এক তরুণ প্রতিভাবান ক্রিকেটার আকিবের নজর কাড়তে চাইছে। পাকিস্তানের অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান কোচ আকিব একটি চমৎকার শীতের দিনে সূর্যের মৃদু তাপে উজ্জ্বল হয়ে ওঠা স্টেডিয়ামটিকে দেখছেন। স্টেডিয়ামের চারপাশে নির্মাণকাজ চলছে, পাকিস্তানের সবচেয়ে বিখ্যাত ক্রিকেট ভেন্যুটি নতুন যুগের উপযোগী করতে ভেঙে নতুন করে গড়া হচ্ছে, আসন্ন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির প্রস্তুতির অংশ হিসেবে।

এমন মুহূর্তে পুরনো দিনের কথা মনে পড়াটা স্বাভাবিক। আকিব ১৯৯৬ সালের সেই কোয়ার্টার ফাইনালের স্মৃতিচারণা করেন, “চিন্নাস্বামী স্টেডিয়াম যদি দেখেন, গ্যালারিগুলো খুব কাছাকাছি। যদি কোনো উত্তেজনাপূর্ণ মুহূর্ত সৃষ্টি হতো, গ্যালারির চিৎকার কানে বাজত। এতটাই যে পরের দিনও কানে আওয়াজ লেগে থাকত।”

সেদিনের ব্যাঙ্গালোরের দর্শকদের জন্য এটি এক ধরনের প্রশংসা, কারণ ভারত সেদিন পাকিস্তানকে হারিয়ে তাদের বিশ্বকাপ শিরোপা ধরে রাখার স্বপ্ন শেষ করে দিয়েছিল। গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত সেই বিশ্বকাপের ফাইনাল পাকিস্তান খেলতে পারল না।

১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপ ছিল ক্রিকেটের এক অন্যরকম যুগের শেষ সূচনা। আকিব ও পাকিস্তানের জন্য সেই আসর ছিল বিশেষ, কারণ সেটিই ছিল—এবং আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি শুরু হতে যাওয়া চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগ পর্যন্ত—শেষবারের মতো পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত কোনো আইসিসি ইভেন্ট।

“ওই বিশ্বকাপের অনেক ভালো স্মৃতি আছে আমার,” বলেন আকিব। “লাহোরে কয়েকটি ম্যাচ খেলেছিলাম। ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশেই নিরাপত্তা নিয়ে কোনো সমস্যা ছিল না। ভারত সফরেও পরিবেশ স্বাভাবিক ছিল।”

‘ভারতকে হারানোই প্রকৃত লক্ষ্য’: আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি প্রসঙ্গে শেহবাজ শরিফ

পাকিস্তান সেবার দুর্দান্ত শুরু করেছিল, ঘরের মাঠে সব ম্যাচ জিতেছিল, শুধুমাত্র দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে একটিতে হেরেছিল যেখানে আকিব খেলেননি। কিন্তু সেই সময় ক্রিকেট শুধু পারফরম্যান্সের জন্য নয়, বরং কোথায় খেলা হচ্ছে, সেটিও ছিল গর্বের বিষয়। পাকিস্তানের স্টেডিয়ামগুলো দর্শকে পরিপূর্ণ থাকত, মনে হচ্ছিল বড় ইভেন্টের জন্য দরজা খুলতে শুরু করেছে। কিন্তু এরপর দীর্ঘ বিরতি, পাকিস্তান এক প্রজন্ম ধরে কোনো বড় ইভেন্ট আয়োজন করতে পারেনি, ফলে নতুন প্রজন্ম জানেই না, তাদের দেশে আইসিসির টুর্নামেন্ট হওয়া কেমন ছিল।

সেই বিশ্বকাপের ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন আইসিসির সাবেক সভাপতি এবং পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) সাবেক চেয়ারম্যান এহসান মানি। তিনি বলেন, “১৯৮৭ সালে ভারত নেতৃত্বে ছিল, ১৯৯৬ সালে নেতৃত্বে ছিল পাকিস্তান। ভারত তখন আমাদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রেখেছিল, পারস্পরিক সম্মান ছিল। সেই সময় ভারত আর্থিকভাবে এতটা শক্তিশালী ছিল না, পাকিস্তানের সঙ্গে অর্থনৈতিক দিক থেকেও খুব বেশি পার্থক্য ছিল না।”

১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপে নিরাপত্তা ইস্যু নিয়ে শ্রীলঙ্কায় কিছু সমস্যা তৈরি হয়, যেখানে অস্ট্রেলিয়া ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ খেলতে যেতে রাজি হয়নি। তখন পাকিস্তান ও ভারত যৌথভাবে একটি দল পাঠিয়ে কলম্বোতে একটি ম্যাচ খেলে প্রমাণ দেয় যে সেখানে ক্রিকেট খেলা সম্ভব।

কিন্তু এখন সেই সম্পর্ক আর আগের মতো নেই। মানি বলেন, “আমাদের সম্পর্ক ভালোভাবে টিকল না। সৌরভ গাঙ্গুলী যখন বিসিসিআই সভাপতি হলেন, মনে হলো তিনি আসলে জয় শাহের প্রতিনিধি। আমাদের সম্পর্কের অবনতি হয়েছিল।”

২০১৮ সালে মানি পিসিবির চেয়ারম্যান হওয়ার পর পাকিস্তান ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আয়োজক হওয়ার সুযোগ পায়। তবে ভারত তাদের ম্যাচ খেলতে পাকিস্তানে আসতে রাজি হয়নি, ফলে কিছু ম্যাচের আয়োজন করতে হচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাতে।

“এই ইভেন্টকে আলাদা করে দেখার দরকার নেই,” বলেন আকিব, “বিশেষভাবে চিন্তা করতে গেলে ভুল দল নির্বাচন হয়ে যায়। আমরা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দেখেছি, অনেক পুরনো খেলোয়াড়কে দলে ফেরানো হয়েছিল, যার ফলে টিম কম্বিনেশন নষ্ট হয়েছিল।”

তবে বাস্তবতা হচ্ছে, পাকিস্তান এখনো সেই ১৯৯৬ সালের স্বপ্নের ছায়ায় দাঁড়িয়ে। আকিব স্বীকার করেন, “সেই দলে বড় নাম ছিল, যা এখন নেই। তবে তখন একজন খেলোয়াড় অনুপস্থিত থাকলে বিশাল পার্থক্য তৈরি হতো। এখন দলে ভারসাম্য আছে।”

এই মুহূর্তগুলো পাকিস্তানের জন্য বিরল। ভবিষ্যতে তাদের দেশে আবার কবে বড় ক্রিকেট আসর বসবে, তার নিশ্চয়তা নেই। তাই আকিব হয়তো চান না দল এটাকে বিশেষভাবে নিক, কিন্তু পাকিস্তানের মানুষের জন্য এই টুর্নামেন্ট শুধুই আরেকটি আসর নয়—এটি তাদের ক্রিকেটের হারানো গৌরব ফিরে পাওয়ার এক নতুন সুযোগ।

লিখেছেন: দানিয়াল রসুল (পাকিস্তান ক্রিকেট সাংবাদিক)

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ধরনের আরও নিউজ

© কপিরাইট ২০২৪-২০২৫ | সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: NagorikIT