
আজ (বুধবার) বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে বিশ্ব স্ট্রোক দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য— ‘প্রতিটি মুহূর্ত মূল্যবান।’ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্ট্রোকের ক্ষেত্রে এই কথাটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ স্ট্রোকের চিকিৎসা যত দ্রুত শুরু করা যায়, রোগীর বেঁচে থাকার এবং স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সম্ভাবনা তত বেশি।
বাংলাদেশে প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষ স্ট্রোকে আক্রান্ত হলেও দেশের বাইরে খুব কম জায়গায় পাওয়া যায় বিশেষায়িত চিকিৎসা। রাজধানী-কেন্দ্রিক এই চিকিৎসা ব্যবস্থায় ঢাকার বাইরে থাকা বেশিরভাগ রোগী সময়মতো সেবা না পাওয়ায় জটিলতায় ভুগছেন বা স্থায়ীভাবে পঙ্গুত্ব বরণ করছেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের বিভাগীয় হাসপাতালে প্রশিক্ষিত চিকিৎসক ও নার্স নিয়োগ দিয়ে স্থানীয় পর্যায়ে ‘স্ট্রোক সেন্টার’ স্থাপন করলে প্রাণহানি অনেকাংশে রোধ করা সম্ভব।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সুমন রানা বলেন,
“স্ট্রোকের চিকিৎসায় আমাদের এখনো ঢাকা নির্ভরতা বেশি। অথচ দ্রুত ব্যবস্থা নিলে রোগীদের ৭০ শতাংশের উন্নতি হয়। ঢাকার বাইরে সঠিক চিকিৎসা নিশ্চিত করতে পারলে মৃত্যুহার ও বিকলাঙ্গতার হার উভয়ই কমানো সম্ভব।”
জাতীয় নিউরোসায়েন্স ইনস্টিটিউটের ডা. হুমায়ুন কবীর হিমু বলেন,
“স্ট্রোকের আধুনিক চিকিৎসা আইভি থ্রোম্বোলাইসিস এবং মেকানিকাল থ্রোম্বেক্টমি এখন বাংলাদেশেও চালু আছে। রোগী যদি ৪ থেকে ১২ ঘণ্টার মধ্যে হাসপাতালে আসে, তবে চিকিৎসার মাধ্যমে তার মস্তিষ্কের রক্তপ্রবাহ পুনরুদ্ধার করা যায়। এতে প্রায় ৭০ শতাংশ রোগী স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারেন।”
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) তথ্যমতে, প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে প্রায় দেড় কোটি মানুষ স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। এদের মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশের মৃত্যু হয় এবং ৭০ শতাংশ কোনো না কোনোভাবে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হন। তবে নিয়মিত ব্যায়াম, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখলে ৯০ শতাংশ স্ট্রোক প্রতিরোধযোগ্য।
বাংলাদেশে ২০২০ সালের বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যানুযায়ী, ওই বছর ৮৫ হাজার ৩৬০ জন নাগরিক মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ বা স্ট্রোকে মারা যান।
চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সময়মতো চিকিৎসা ও আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতির সম্প্রসারণই পারে এই মৃত্যু ও পঙ্গুত্বের হার কমাতে। স্থানীয় পর্যায়ে প্রশিক্ষণ, অবকাঠামো ও সচেতনতা বাড়াতে সরকারি উদ্যোগই এখন সময়ের দাবি।