কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া এক দফা আন্দোলন থেকে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে ঘটে যায় ইতিহাসের অন্যতম বৃহৎ গণঅভ্যুত্থান। সরকার বলপ্রয়োগ করলেও ছাত্র-জনতার দৃঢ় অবস্থান ছিল অটল। এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে যে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে, তা স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ।
তবে ঠিক কতজন মানুষ এতে প্রাণ হারিয়েছেন, তা নিয়ে সরকারের হিসাব ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিবেদনে রয়েছে বড় ধরনের পার্থক্য। সরকার পরিচালিত মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের গেজেটে নিহতের সংখ্যা বলা হয়েছে ৮৪৪ জন, যাদের ‘শহীদ’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন বলছে, নিহতের সংখ্যা প্রায় ১৪০০ জন।
সরকারি তালিকায় একাধিক নাম পুনরাবৃত্তি, ভুয়া নাম অন্তর্ভুক্তি ও বেওয়ারিশ দাফন হওয়া অনেকের নাম না আসার মতো বিষয় উঠে এসেছে। অনেক অভিযোগের পর মন্ত্রণালয় নিজেই বলছে, তালিকা থেকে কিছু নাম বাতিল করা হবে।
জাতিসংঘের রিপোর্টে পুলিশের গুলিতে শিশুসহ বহু মানুষের মৃত্যুর কথা বলা হলেও, সরকারের গেজেটে তা প্রতিফলিত হয়নি। শুধু আওয়ামী লীগ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হামলায় নিহত আন্দোলনকারীদের নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। পুলিশের নিহত ৪৪ সদস্যেরও আলাদা তালিকা থাকলেও গেজেটে তারা অন্তর্ভুক্ত নন।
অন্যদিকে, ঢাকায় রায়েরবাজার কবরস্থানে ১১৪ জনকে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফনের তথ্য গণমাধ্যমে উঠে এসেছে। ধারণা করা হয়, এদের অনেকেই আন্দোলনে নিহত ছিলেন। তবে সরকারের তালিকায় অজ্ঞাতনামাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
বিশ্লেষকদের মতে, তালিকা তৈরিতে শৃঙ্খলার অভাব এবং ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত সুযোগের কারণে ভুয়া নাম যোগ হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
তারা বলছেন, এলাকাভিত্তিক যাচাই-বাছাই ও তথ্য অনুসন্ধানের মাধ্যমে একটি নির্ভুল তালিকা দ্রুত প্রকাশ করা প্রয়োজন।