ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে পুড়ে ছাই হচ্ছে ২৭ হাজার শিশুর খাবার - দৈনিক সাবাস বাংলাদেশ
নোটিশ:
শিরোনামঃ
ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি: ইউক্রেন যুদ্ধ না থামালে পুতিনের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা যুদ্ধ বন্ধ না হলে সেপ্টেম্বরে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেবে যুক্তরাজ্য সাবেক আইজিপি মামুনের স্বীকারোক্তি: সেনানিবাসে কীভাবে আশ্রয় নিলেন ৩৭ বছর পর ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিলেন দুই বাংলাদেশি সাঁতারু – সাগর ও হিমেল রাশিয়ার উপকূলে ৮.৭ মাত্রার ভয়াবহ ভূমিকম্প, সুনামি সতর্কতায় কাঁপছে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের কয়েকটি দেশ যুক্তরাজ্যে বিমানে মুসলমান সেজে ‘জঙ্গী’ হবার চেষ্টা ভারতীয় বংশোদ্ভূত হিন্দুর! ডাকসু নির্বাচন ৯ সেপ্টেম্বর, ছয় কেন্দ্রে হবে ভোটগ্রহণ পর্তুগালের প্রেসিডেন্ট অভিবাসন আইন-২৫ অনুমোদন স্থগিত করে আদালতে পাঠালেন ফার্মগেটে বিআরটিসি দোতলা বাসের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের পিলারে ধাক্কা সব প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশে ঠেলে দিলো!—মালদার যুবক আমিরের কান্না, বাবার আকুতি ভাইরাল

ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে পুড়ে ছাই হচ্ছে ২৭ হাজার শিশুর খাবার

ডেস্ক রিপোর্ট
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই, ২০২৫
  • ৫০ বার দেখা হয়েছে
বাংলাদেশের কক্সবাজার শরণার্থী শিবিরের একটি বাজারে USAID লোগো প্রিন্ট করা পুষ্টি সম্পূরক প্যাকেটের ছবি

আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের অন্তত ২৭ হাজার অপুষ্ট শিশুদের জীবন বাঁচানোর কথা ছিল যে খাদ্য দিয়ে, সেই খাদ্য এখন আগুনে পোড়ানো হবে ।  বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ও প্রভাবশালী দেশটির হাতে থাকা একটি সিদ্ধান্ত এখন ২৭ হাজার ক্ষুধার্ত শিশুর জীবন রক্ষার বদলে সেই খাবারই ধ্বংস করে ফেলা হচ্ছে। আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে অপুষ্ট শিশুদের জন্য বরাদ্দকৃত প্রায় ৫০০ টন শক্তিশালী গমের বিস্কুট বর্তমানে দুবাইয়ের গুদামে মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে পড়েছিল। আর সেই বিস্কুটগুলো এখন পুড়িয়ে ফেলা হবে, শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের একটি সিদ্ধান্তের কারণে।

এই বিস্কুটগুলো ছিল জরুরি মানবিক খাদ্য, যা সংকটপূর্ণ এলাকায় রান্নার সুযোগ না থাকলেও শিশু ও বড়দের জন্য জরুরি পুষ্টি সরবরাহে ব্যবহৃত হয়। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (WFP) ভাষায় এগুলো এমন খাদ্য যা “শিশু বা প্রাপ্তবয়স্কের জন্য তাৎক্ষণিক পুষ্টির উৎস” হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের উপ-সচিব (ম্যানেজমেন্ট) মাইকেল রিগাস কংগ্রেসে বলেন, “আমি মনে করি ইউএসএইড বন্ধ হওয়ার কারণে এই ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি আমাকে খুব কষ্ট দিয়েছে যে এত খাদ্য অপচয় হলো।”

খাদ্য সহায়তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জুন মাসে শেষ মুহূর্তে চেষ্টা করে ৬২২ টন বিস্কুট উদ্ধার করে তা সিরিয়া, বাংলাদেশ এবং মিয়ানমারে পাঠাতে পেরেছিলেন। কিন্তু বাকি ৪৯৬ টন খাদ্য, যার বাজারমূল্য ছিল ৭ লাখ ৯৩ হাজার ডলার, তা আর ব্যবহার উপযোগী ছিল না। এখন সেই বিস্কুট সংযুক্ত আরব আমিরাতে ল্যান্ডফিলে ফেলতে বা পুড়িয়ে ধ্বংস করতে প্রায় আরও এক লাখ ডলার ব্যয় করবে যুক্তরাষ্ট্র সরকার।

এই পুরো ঘটনায় মার্কিন কংগ্রেসে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ডেমোক্রেটিক সিনেটর টিম কেইন বলেন, “আমরা পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে এই বিষয়ে মার্চেই জানিয়েছিলাম। তখন তিনি আমাদের আশ্বস্ত করেছিলেন যে কোনো খাবার নষ্ট হবে না। অথচ এখন দেখা যাচ্ছে এই খাবারগুলো গুদামে পচে গেল, এবং এখন সেগুলো পুড়িয়ে ফেলা হবে। প্রশ্ন হলো—কারা এই সিদ্ধান্ত নিল যে খাবার গুদামে তালাবদ্ধ থাকবে, বাচ্চারা না খেয়ে থাকবে, আর খাবার যাবে চুল্লিতে?”

এই ঘটনার পেছনে মূল কারণ হিসেবে উঠে এসেছে ইউএসএইড বন্ধের সিদ্ধান্ত। ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইউএসএইড বন্ধ করার ঘোষণা দেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরেই বলে আসছিলেন যে যুক্তরাষ্ট্র বিদেশে ‘অতিরিক্ত সাহায্য’ দেয় এবং এখন অন্য দেশগুলোকেও তাদের দায়িত্ব নিতে হবে।

ইউএসএইড বন্ধের এই প্রক্রিয়ায় ৬০ হাজার টনেরও বেশি খাদ্য সহায়তা বিশ্বজুড়ে গুদামে আটকে পড়ে। মার্চ মাসে কংগ্রেসকে জানানো হয়, সংস্থাটির প্রায় সব কর্মীকে ছাঁটাই করা হবে দুই ধাপে—১ জুলাই এবং ২ সেপ্টেম্বর। এরপর ১ জুলাই ইউএসএইডকে আনুষ্ঠানিকভাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে হস্তান্তর করা হয়।

এ উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এতদিন ‘চ্যারিটি-নির্ভর মডেল’ অনুসরণ করত, এখন থেকে তারা দেশগুলোকে টেকসইভাবে নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে সহায়তা করবে। এই নীতিগত পরিবর্তনের মাধ্যমে কার্যত বন্ধ হয়ে গেল মার্কিন মানবিক সহায়তার সবচেয়ে বড় বাহন ইউএসএইড।

জাতিসংঘের তথ্য বলছে, বর্তমানে বিশ্বে ৩১৯ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ খাদ্য সংকটে ভুগছে। এর মধ্যে ১৯ লাখ মানুষ সরাসরি চরম দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে অবস্থান করছে, যাদের অধিকাংশই গাজা ও সুদানের মতো যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকায় বসবাস করছে।

আর ঠিক এই মুহূর্তেই বিশ্বে সবচেয়ে বড় সাহায্য প্রদানকারী রাষ্ট্রটি নিজের গুদামে খাদ্য আটকে রেখে তা মেয়াদোত্তীর্ণ করে ধ্বংসের পথে চালিয়ে দিয়েছে। যেখানে একটি সিদ্ধান্তে ২৭ হাজার শিশু বেঁচে যেতে পারত, সেখানে এখন আগুনে পুড়ে শেষ হবে সেই সুযোগ।

শেয়ার করুন

Comments are closed.

এই ধরনের আরও নিউজ

© কপিরাইট ২০২৪-২০২৫ | সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: NagorikIT