গাজা উপত্যকায় মানবিক সহায়তা পাঠাতে গিয়ে ইসরাইলি বাহিনীর হাতে আটক হন ইতালীয় অ্যাক্টিভিস্ট ও “মারিয়া ক্রিস্টিনা” জাহাজের ক্যাপ্টেন তোমাসো বোরতোলাজ্জি। আন্তর্জাতিক জলসীমায় গত ১ অক্টোবর ইসরাইলি বাহিনী গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা (GSF) নামে পরিচিত এই ত্রাণবহরটি আটক করে। বোরতোলাজ্জি সহ প্রায় ৪৫০ জন অ্যাক্টিভিস্টকে আটক করা হয়, যাদের মধ্যে সুইডিশ পরিবেশকর্মী গ্রেটা থুনবার্গও ছিলেন।
কারাগারে বন্দি অবস্থায় বোরতোলাজ্জি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। তিনি জানান, তার তুর্কি সহকর্মীরা যখন নামাজ পড়ছিলেন, তখন ইসরাইলি পুলিশ এসে তাদের বাধা দেয়। এটি দেখে তিনি প্রতিবাদ করতে চান এবং তার তুর্কি বন্ধু বাকির দেভিলির সহায়তায় শাহাদা পাঠ করেন। দেভিলি জানান, বোরতোলাজ্জি একটি প্রিজন ভ্যানে থাকা অবস্থায় ইসলাম গ্রহণ করেন এবং তার পরই ইসরাইলি পুলিশ তাকে একা একটি সেলে পাঠিয়ে দেয়।
মুক্তির পর ইস্তাম্বুলে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ইতালীয় এই ক্যাপ্টেন জানান, কারাগারে থাকা অবস্থায় অর্জিত অভিজ্ঞতা এবং তার তুর্কি সহকর্মীদের ঈমান তাকে ইসলাম গ্রহণে অনুপ্রাণিত করেছে। অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন ভিডিওতে দেখা যায়, তিনি ফিলিস্তিনি কেফিয়াহ পরে তার নতুন বিশ্বাস ও অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করছেন। তিনি বলেন, ‘আমার সঙ্গীরা তুরস্কের এবং প্রায় সবাই মুসলিম ছিলেন। তারা যখন নামাজ পড়ছিলেন, তখন ইসরাইলি পুলিশ এসে তাদের বাধা দেয়। আমার মনে হয়েছিল এর প্রতিবাদ করা প্রয়োজন, এবং এরপরই আমি আমার বন্ধুর সাথে শাহাদা পাঠ করি।’
জানা গেছে, শাহাদা পাঠ করার আগে তোমাসো বোরতোলাজ্জি জানতে চেয়েছিলেন, তার শরীরে ট্যাটু থাকা সত্ত্বেও আল্লাহ তাকে মুসলিম হিসেবে গ্রহণ করবেন কিনা। তার তুর্কি সঙ্গী বাকির দেভিলি তাকে আশ্বস্ত করেন, বিশ্বাস চেহারার ওপর নয়, বরং ঈমানের ওপর নির্ভর করে। দেভিলি জানান, বোরতোলাজ্জি একটি প্রিজন ভ্যানে থাকা অবস্থায় ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি বলেন, ‘প্রিজন ভ্যানেই সে শাহাদা পাঠ করে মুসলিম হয়। যখন সবাই তাকে অভিনন্দন জানাচ্ছিল, তখন ইসরাইলি পুলিশ তাকে একটি সেলে ছুড়ে ফেলে দেয়।’
বোরতোলাজ্জি তার ইসলাম গ্রহণকে একটি গভীর আত্মিক শান্তির মুহূর্ত হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, “আমার মনে হচ্ছিল যেন আমি নতুন করে জন্মেছি।” মুক্তির পর ইস্তাম্বুলে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি তার অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন।
এর আগে, ২০২৩ সালের নভেম্বরে আমেরিকান অ্যাক্টিভিস্ট ও টিকটকার মেগান রাইস ইসলাম গ্রহণ করেন। এর পরের মাসে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নের একটি মসজিদে প্রায় ৩০ জন নারী একইভাবে ইসলামে দীক্ষিত হন।
বোরতোলাজ্জির ইসলাম গ্রহণের ঘটনা বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করেছে এবং এটি ফিলিস্তিনিদের প্রতি আন্তর্জাতিক সহানুভূতির একটি নতুন দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।