আসিফ আদনানদের নামে জিহাদি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে মামলা: আবারও জঙ্গী কার্ড? - দৈনিক সাবাস বাংলাদেশ
নোটিশ:
শিরোনামঃ
বাংলাদেশ থেকে বিশ্ব দরবারে “কর্মঠ”: অ্যাকাউন্টিঙে বাজিমাত গাজী জিশানের আজ ‘জুলাই শহীদ দিবস’ ভুয়া ফটোকার্ডে ভুগছে গণমাধ্যম, পথ দেখাচ্ছে সাবাস বাংলাদেশ এর স্মার্ট ফটোকার্ড  আসিফ আদনানদের নামে জিহাদি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে মামলা: আবারও জঙ্গী কার্ড? ভাড়ার তর্কে ইবি ছাত্রীকে মারধরের অভিযোগ, জনি পরিবহনের বাস আটক টিটিপি সংশ্লিষ্টতার ধুয়ো তুলে ইসলামপন্থী যুবকদের মামলা-গ্রেফতার হয়রানি: জঙ্গী নাটকের নতুন অধ্যায় ইউটিউবের বড় নীতিমালা পরিবর্তন – মৌলিকতা ছাড়া আর আয় নয় প্রাথমিকে প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদে দ্রুত নিয়োগের নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার বিদেশে পড়াশোনার নামে শত কোটি টাকা আত্মসাৎ, ক্যামব্রিয়ান চেয়ারম্যান বাশার ১০ দিনের রিমান্ডে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শহীদ আবু সাঈদের শাহাদতবার্ষিকীতে চার উপদেষ্টাসহ দিনব্যাপী কর্মসূচি

আসিফ আদনানদের নামে জিহাদি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে মামলা: আবারও জঙ্গী কার্ড?

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় বুধবার, ১৬ জুলাই, ২০২৫
  • ৪৫ বার দেখা হয়েছে
মিথ্যা জঙ্গী মামলার শিকার তিন বিশিষ্ট ইসলামি অ্যাক্টিভিস্ট আসিফ আদনান, মুফতি রেজাউল করিম আবরার ও মাওলানা জাকারিয়া মাসুদ (বাম থেকে)
মিথ্যা জঙ্গী মামলার শিকার তিন বিশিষ্ট ইসলামি অ্যাক্টিভিস্ট আসিফ আদনান, মুফতি রেজাউল করিম আবরার ও মাওলানা জাকারিয়া মাসুদ (বাম থেকে)

“বাংলাদেশে কোনো জঙ্গী নেই, সাজানো হত নাটক”- সম্প্রতি এক জাতীয় দৈনিকের কাছে সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় আলোচিত এই মন্তব্যটি করেন ডিএমপি কমিশনার শেখ সাজ্জাদ আলী। দেশের আপামর জনসাধারণ তার এই বক্তব্যকে স্বাগত জানালেও দেশকে অস্তিতিশীল করার পাঁয়তারা করছেন সেকুলার ফ্যাক্টচেকার কদরুদ্দিন শিশির, রিপোর্টার জুলকারনাইন সায়ের, চ্যানেল আইয়ের উপস্থাপক জিল্লুর রহমান, বাংলা ট্রিবিউন এর মতো কিছু আমেরিকাপন্থী ব্যক্তি ও মিডিয়া হাউজ। পতিত হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকলেও এখন এসব সেকুলার অনলাইন সেলিব্রিটিরা যে আমেরিকাপন্থী ন্যারেটিভ দাঁড় করাতে চেষ্টা করছেন তা বুমেরাং হয়ে হাসিনার উদ্দেশ্যই পূরণ করবে বলে মনে করছেন অধিকাংশ ইসলামি ব্যক্তিত্ব।

সম্প্রতি বাংলা ট্রিবিউনে প্রকাশিত “পাকিস্তানে খিলাফত প্রতিষ্ঠার জিহাদে সক্রিয় বাংলাদেশি কয়েকজন, একজন গ্রেফতার” শীর্ষক এক সংবাদ নিয়ে সারা দেশের ইসলামপন্থীদের মধ্যে শুরু হয়েছে ব্যাপক তোলপাড়। এদেশের ইসলামপন্থীদের কাছে জনপ্রিয় মুখ  আসিফ আদনান, মুফতি রেজাউল করিম আবরার, জাকারিয়া মাসুদ সহ দেশের আরও কয়েকজন ইসলামী ব্যক্তিত্বের সঙ্গে পাকিস্তানের জিহাদি সংগঠন তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) এর সংশ্লিষ্টতা দেখিয়ে সাভার থানায় একটি মামলা হয়েছে। একপেশে সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশ করে তাদেরকে জঙ্গী সাজানোর পালে হাওয়া দিয়েছে বাংলা ট্রিবিউন নামক অনলাইন নিউজ পোর্টালটি।
দেশের সাধারণ মুসলমানরা এই ঘটনাকে দেখছেন ইসলামের বিরুদ্ধে সেকুলারদের এক গভীর চক্রান্ত হিসেবে। তাদের  অনেকে মনে করছেন, জঙ্গী নাটক সাজাতে অবশেষে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের দেখানো পথেই হাঁটল অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।  কেউ কেউ এর সঙ্গে  ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা র’ এর যুক্ত থাকার সন্দেহও করছেন।
এই নিয়ে মাওলানা আহমেদ রফিক তার সাম্প্রতিক ফেসবুক পোস্টে  লিখেছেন, “দীর্ঘ দিন ধরে বাংলাদেশের সাথে পাকিস্তানের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কটাকে মূলত ভারতের সাথে পাকিস্তানের সম্পর্কের মতো করে রাখা হয়েছিলো। জুলাই অভ্যুত্থানের পর সেটা স্বাভাবিক হওয়া শুরু করেছে মাত্র। দুই দেশের মানুষ উভয় দেশে সফর শুরু করেছে। আমদানি রফতানি বাড়ছে। স্বাভাবিক কারণেই এটা ভারত কখনো চাইবে না। একারণে হঠাৎ করে বাংলাদেশ থেকে টিটিপিতে যোগ দেওয়ার কিসসা হাইলাইট পেয়েছে। এটা বস্তুত বাংলাদেশ পাকিস্তানের মধ্যকার সম্পর্ককে ধ্বংস করার যে নীল নকশা তার প্রাথমিক ধাপ। দেখুন, পৃথিবীতে যেখানেই যুদ্ধ হয় সেখানে বিভিন্ন দেশ থেকে নানা কারণেই কিছু না কিছু মানুষ গিয়ে যোগ দেয়। এমনকি কিছুদিন আগে ইউক্রেন যুদ্ধেও বাংলাদেশি যোদ্ধার নাম এসেছিলো। ভারত থেকে হিস্রালের বর্বর যুদ্ধেও চার শ’র অধিক মানুষ যোগ দিয়েছে। টিটিপির পক্ষে লড়াই করার পক্ষে যেমন কিছু মানুষ থাকতে পারে, থাকতে পারে পাকিস্তান আর্মির পক্ষে লড়াই করার লোক। আপনারা সেটা নিয়ে লেখেন, সমস্যা নেই। কিন্তু আপনাদের উদ্দেশ্য তো কেবল ঘটনা বর্ণনা বা তথ্য সরবরাহ নয়, আপনাদের উদ্দেশ্য তো ন্যারেটিভ নির্মাণ করা। আপনারা সেই ন্যারেটিভ নির্মাণ আবার শুরু করেছেন যা ছিলো ফ্যাসিস্ট হাসিনার ন্যারেটিভ। এই ন্যারেটিভ দিয়েই এই বাংলাট্রিবিউনরা নিরপরাধ মানুষ হত্যার বৈধতা উৎপাদন করেছিলো।”
মামলায় নিজেদের নাম দেখে ফেসবুক পোস্টে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন আসিফ আদনান, জাকারিয়া মাসুদ নিজেও। আসিফ আদনান তার পোস্টে বলেন, “এই ঘটনার (যদি আদৌ কোন কিছু ঘটে থাকে) সাথে আমার দূরতম কোনো সম্পর্ক নেই। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিযোগ। তবে এটা নির্দোষ মিথ্যা না, সুপরিকল্পিত অপপ্রচার, যার লক্ষ্য হল আমার মতো মানুষদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় দমনপীড়নের ‘বৈধতা’ তৈরি করা। কেন এটা করা হচ্ছে, তা বোঝা কঠিন না। আমার কথা এবং কাজ সবার সামনেই আছে। আমি ইসলামী সমাজ ও শাসনের পক্ষে কথা বলি, লিখি। এই আদর্শ ধারণ করা, এই কথাগুলো বলাই অনেকের কাছে অপরাধ। এই দাওয়াহ বন্ধ করা, ইসলামী রাজনৈতিক বয়ানকে অপরাধে পরিণত করা, এবং আমাকে রাষ্ট্রীয় টার্গেটে পরিণত করাই এই মিথ্যা মামলায় আমার নাম জড়ানোর মূল উদ্দেশ্য। এই মামলায় জাকারিয়া মাসুদ এবং মাওলানা রেজাউল করিম আবরারের নামও জড়ানো হয়েছে। তাঁরাও নির্দোষ এবং চক্রান্তের শিকার। আইরনিকভাবে এই খবরটা সামনে আসলো ১৫ জুলাই। গত বছর এই দিনে হাসিনা রিজিমের যুলুমের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থানের বাঁধ ভাঙ্গার শুরুটা হয়েছিল। এক বছর পর, ঠিক একই দিনে, আবার শুরু হলো সেই পুরনো খেল।”
মামলার অন্যতম আসামী জাকারিয়া মাসুদ তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, “হাসিনার আমলে আমরা এই ধরনের অনেক জঙ্গী নাটক দেখেছি। অনেক মায়ের বুক খালি হয়েছে এর কারণে। ইন্টেরিমের আমলে আবারও সেটার পুনরাবৃত্তি হতে যাচ্ছে। এটা খুবই দুঃখজনক। আমাদের রক্তের ওপরে যে সরকার এসেছে, তারা এখন আমাদের বুকেই ছুরি চালানোর চেষ্টা করছে। যেসব বিদেশ-ফেরত লোকদের সাথে জড়িয়ে আমার নাম উল্লেখ করা হয়েছে, আমি তাদের কাউকেই চিনি না। তাদের সাথে আমার কোনো ধরনের সম্পর্ক নেই। এই ধরনের কাল্পনিক মামলা আসলে বানোয়াট এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।”
এই ঘটনার সুলুক সন্ধান করতে গিয়ে বিশিষ্ট ইসলামপন্থী বুদ্ধিজীবী সওয়াবুল্লাহ তার ফেসবুক পেজ “Saowabullah’s Standpoint” এ লিখেছেন, “এটার ন্যারেশন শুরু হয় বিশিষ্ট নন প্রোফেশনাল স্বঘোষিত ইসলামোফোবিক সেক্যুলার ফ্যাক্টচেকার কদরুদ্দীন শিশিরের হাত ধরে। কদরুদ্দীন রিসেন্ট তার প্রতিষ্ঠান ডিসেন্টের মাধ্যমে একটি ইনভেস্টিগেশন পাবলিশ করে যেখানে সে দেখায় বাংলাদেশের একজন যুবক আহমেদ জোবায়ের টিটিপি-র পক্ষ হয়ে লড়াই করতে গিয়ে পাকিস্তান বাহিনীর সাথে যুদ্ধ করতে গিয়ে নিহত হন। ইনভেস্টিগেটর হিসেবে কদরুদ্দীন তার দায়িত্বটুকু সম্পন্ন করে কিন্ত এরপর বাকি দায়িত্বটুকু নিজেদের কাঁধে নিয়ে নেয় হাসিনার আমলের জঙ্গি নাটকের ভিলেনেরা। ATU সহ অন্যান্য আইন শৃঙ্খলাবাহিনী স্বাভাবিকভাবেই যেহেতু একজন যুবককে পাকিস্তানে যাওয়া বন্ধ করতে পারে নাই তাই তারা এটাকে কেন্দ্র করে জঙ্গি নাটক এবং মিথ্যে মামলার কারসাজি সাজাবে সেটা আগেই অনুমেয় ছিল। কিছুদিন আগে জুলকারনায়ের সায়ের এবং চ্যানেল আইয়ের জিল্লুর এ সংক্রান্ত একটি ষড়যন্ত্রমূলক ন্যারেটিভ পেশ করেছিল। অর্থাৎ জঙ্গি নাটক বানানোর জন্য তাদের কিছু একটা প্রয়োজন ছিল সেটাই কদরুদ্দীন শিশির তাদের হাতে উঠিয়ে দিয়েছে। এরকম ন্যারেটিভ হলি আর্টিজানের সময়তেও ঘটেছিল।”

শেয়ার করুন

Comments are closed.

এই ধরনের আরও নিউজ

© কপিরাইট ২০২৪-২০২৫ | সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: NagorikIT