চলতি বছরের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে আজ বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই)। ফলাফলে উঠে এসেছে পাসের হার ও জিপিএ-৫ পাওয়ার ক্ষেত্রে স্বস্তিদায়ক নয় এমন একটি পতন। এ বছর গড় পাসের হার মাত্র ৬৮.৪৫ শতাংশ, যা গত বছরের ৮৩.০৩ শতাংশের তুলনায় প্রায় ১৪.৫৮ শতাংশ কম। একই সঙ্গে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যাও কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে; এবার জিপিএ-৫ পেয়েছেন মাত্র ১ লাখ ৩৯ হাজার ৩২ জন, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ৪৩ হাজার কম।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সভাকক্ষে বাংলাদেশ আন্তঃশিক্ষা সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. খন্দোকার এহসানুল কবীর এই ফলাফল তুলে ধরেন। তিনি জানান, এবারে মোট ১৩ লাখ ৩ হাজার ৪২৬ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশের ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে মোট পরীক্ষার্থী ছিল ১৯ লাখ ২৮ হাজার ৯৭০ জন, যার মধ্যে ছাত্র ৯ লাখ ৬১ হাজার ২৩১ এবং ছাত্রী ৯ লাখ ৬৭ হাজার ৭৩৯ জন। সারা দেশে ৩ হাজার ৭১৫টি কেন্দ্রে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়, যা গত ১০ এপ্রিল শুরু হয়ে ১৩ মে শেষ হয়। মাত্র দুই মাসের মধ্যে ফলাফল প্রকাশ করায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি সন্তুষ্টি রয়েছে।
বিভিন্ন শিক্ষা বিশ্লেষক, শিক্ষক ও অভিভাবকরা ফলাফলের এই পতনকে করোনার পর শিক্ষাক্ষেত্রে ঘাটতি, দুর্বল প্রস্তুতি ও পাঠদান ব্যবস্থার ত্রুটির ফল হিসেবে দেখছেন। তারা বলছেন, জরুরি ভিত্তিতে কারিগরি বিশ্লেষণ ও নীতিগত হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরের পরীক্ষা শেষে দেশের ৯৮৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শতভাগ শিক্ষার্থী পাস করেছে। কিন্তু গত বছর এই সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৯৬৮টি। অর্থাৎ একবছরে শতভাগ পাশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১ হাজার ৯৮৪টি কমেছে। পাশাপাশি, কোনো শিক্ষার্থী পাস করেনি এমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫১ থেকে ১৩৪টিতে।
বিভিন্ন বোর্ডের পাসের হারও প্রকাশিত হয়েছে। সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে গড় পাসের হার ৬৮.০৪ শতাংশ, মাদরাসা বোর্ডে ৬৮.০৯ শতাংশ এবং কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে ৭৩.৬৩ শতাংশ। মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ১৯ লাখ ৪ হাজার ৮৬।
এই ফলাফলের আলোকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে শিক্ষা ব্যবস্থায় দ্রুত প্রয়োজনীয় সংস্কার ও নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে বলে বিশেষজ্ঞরা মতামত দিয়েছেন।
এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলের এই পরিবর্তন দেশের শিক্ষা ক্ষেত্রের ভবিষ্যৎ গঠন ও শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নে নতুন ভাবনা ও উদ্যোগের ডাক দিয়েছে।