স্কটল্যান্ডের আকাশজুড়ে ছিল রোদের ঝিলিক। আর সেই রোদের আলোয় ঝলমল করছিল এডিনবার্গের মাঠ। প্রবাসের মাটিতে বাংলাদেশি কমিউনিটির হৃদয়ের স্পন্দন, প্রাণের খেলা ক্রিকেট ঘিরে জমে উঠেছিল এক দারুণ উৎসব। ৮ জুলাই এই দিনটা শুধু খেলার দিন ছিল না — ছিল প্রবাসী বাংলাদেশিদের হাসি, বন্ধুত্ব আর দেশের টান অনুভবের দিন। আর সেই স্মৃতি এখনো প্রবাসীদের মুখে মুখে।
স্কটল্যান্ডের চার শহর—এডিনবার্গ, গ্লাসগো, ডান্ডি এবং আবারডিন। দূরদেশে নিজেদের ব্যস্ত জীবনের মাঝে একটুখানি সময় বের করে চারদিক থেকে ছুটে এসেছিলেন ক্রিকেটপ্রেমী বাঙালিরা। ভোর থেকেই এডিনবার্গের মাঠে শুরু হয় মানুষের আনাগোনা। লাল-সবুজের পতাকা, রঙিন জামা আর মুখভরা হাসি নিয়ে মাঠটা একেবারে যেন হয়ে উঠেছিল ঢাকার মিরপুরের স্টেডিয়ামের মতো।
খেলার মাঠে ছিল উত্তেজনা। এডিনবার্গ, গ্লাসগো, ডান্ডি আর আবারডিন — চার দলই এসেছিল জয়ের লক্ষ্যে। প্রতিটি ম্যাচেই দর্শকদের মাঝে ছিল করতালি আর স্লোগান। ‘সাবাস বাংলাদেশ’, ‘জিতবোই’ — এই ধ্বনি প্রবাসের মাঠটাকেও কাঁপিয়ে তুলেছিল। ক্রিকেটের সঙ্গে ছিল আরও কত আয়োজন! ছোট্ট শিশুদের দৌড়ঝাঁপ, পরিবারের সদস্যদের আড্ডা, ঘুড়ি ও বল ফেলা খেলা, আর পাশে ছিল দেশি খাবারের স্টল। সিংগারা, চটপটি, বিরিয়ানি আর মিষ্টির গন্ধে পুরো মাঠটাই যেন হয়ে উঠেছিল ঢাকার বইমেলার মতো প্রাণবন্ত।
সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় ছিল স্থানীয় শিল্পীদের পরিবেশনা। বাংলাদেশের গান, কবিতা আর প্রবাসীদের গল্পে জমে উঠেছিল এক অনবদ্য মিলনমেলা। এক আয়োজক আবেগভরা গলায় বললেন, “দেশ থেকে হাজার মাইল দূরে থেকেও আমরা যেন এই মাঠে বাংলাদেশকে দেখতে পাই। এই মাঠ আমাদের হৃদয়ের বাংলাদেশ।”
আয়োজনে প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন নজিম আহমেদ, আলাউদ্দিন আলো এবং আতীক রহমান মোল্লাহ। পুরো কার্যক্রম ও লাইভ সম্প্রচারের দায়িত্ব সামলান জসিম উদ্দিন। সামাজিক মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচারের দায়িত্ব ছিল জসিম উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন টিমের হাতে। মাঠে এসে উপস্থিত থেকে খেলা উদ্বোধন করেন স্কটিশ পার্লামেন্টের সম্মানিত সংসদ সদস্য ফয়সাল চৌধুরী। তিনিও বাংলাদেশের এই প্রাণের মিলনমেলায় অংশ নিয়ে আপ্লুত হন। তাঁর কথায়, “এমন আয়োজন শুধু প্রবাসে বাংলাদেশিদের সম্পর্ককে দৃঢ়ই করে না, বরং আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকেও বাংলাদেশের সাথে জড়িয়ে রাখে।”
আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই ক্রিকেট উৎসব শুধু খেলার জন্য নয়, বরং প্রবাসের মাঠে প্রাণের বাংলাদেশ তৈরি করার উৎসব। এই আয়োজন প্রতিবছরই হবে আরও বড় পরিসরে। যেন প্রবাসের বুকে এই প্রাণের উৎসব কখনো থেমে না যায়।
দিন শেষে টানটান উত্তেজনার ফাইনালে চ্যাম্পিয়ন হয় এডিনবার্গের গর্ব ‘এডিনবার্গ বেঙ্গল ওয়ারিওর্স’।
মাঠজুড়ে তখন শুধু একটাই স্লোগান — ‘সাবাস এডিনবার্গ, সাবাস বাংলাদেশ!’